‘মাদক ছেড়ে সেই সাব্বির এখন কফি বিক্রেতা’

আরিফ হোসেন, বরিশাল ব্যুরো প্রকাশিত: জুলাই ১১, ২০২৫, ০৪:২৮ পিএম
‘মাদক ছেড়ে সেই সাব্বির এখন কফি বিক্রেতা’

“আমি মাদক ছাড়লেও, স্যার—মাদক যেন আমাকে ছাড়তে চায় না।” এই কথাগুলো বলেছিল বরিশালের উজিরপুর উপজেলার কিশোর সাব্বির, যিনি একসময় ছিলেন মাদকাসক্ত। পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন কেউই তাকে মাদক থেকে ফেরাতে পারেনি। এক পর্যায়ে নিজেই বিপর্যস্ত হয়ে আত্মসমর্পণ করে থানায় হাজির হয়েছিলেন।

দুই মাস আগে নিজের ইচ্ছাতেই পুলিশের সহযোগিতায় মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহায়তায় তাকে ভর্তি করা হয় বরিশালের ড্রীম লাইফ মাদক নিরাময় কেন্দ্রে। এই প্রক্রিয়ায় সক্রিয় ভূমিকা রাখেন বরিশাল জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক এ.কে.এম. আকতারুজ্জামান তালুকদার। নিরাময় কেন্দ্রে থাকা ও চিকিৎসার সব খরচ বহন করে সেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘রূপান্তর’ এবং জেলা প্রবেশন কার্যালয়।

সাব্বিরের জীবনের এই পরিবর্তন আমাদের ভাবতে বাধ্য করে—মাদক কেবল একটি সামাজিক সমস্যা নয়, এটি একটি চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় ‘ক্রনিক রিল্যাপসিং ব্রেইন ডিজিজ’ বা দীর্ঘমেয়াদি মানসিক রোগ। একসময় সিগারেট থেকে শুরু করে ধাপে ধাপে ইয়াবায় আসক্ত হয়ে পড়ে সাব্বির। মাদক গ্রহণে মস্তিষ্কের রিওয়ার্ড সার্কিট অভ্যস্ত হয়ে গেলে ধীরে ধীরে সহনশীলতা বাড়ে, আর তখন মাদক না পেলে দেখা দেয় উইথড্রয়াল সিনড্রোম।

তবে সেই ধ্বংসের পথ থেকে নিজেকে ফিরে আনতে পেরেছেন কিশোর সাব্বির। মাদকের করালগ্রাস থেকে মুক্ত হয়ে নতুন জীবন শুরু করতে চেয়েছেন আত্মবিশ্বাস নিয়ে। প্রায় দুই মাস পর্যবেক্ষণের পর সাব্বিরের স্বাভাবিক জীবনে ফেরার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়।

বরিশাল জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ পারভেজের উদ্যোগে এবং জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেনের সহায়তায় সাব্বিরের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়। ইভেন্ট-৮৪ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে তাকে দেওয়া হয় কফি তৈরির সরঞ্জাম।

যে হাত একসময় মাদক স্পর্শ করেছিল, আজ সেই হাতেই কফি বানিয়ে বিক্রি করছেন সাব্বির। রাস্তায় ঘুরে ঘুরে মানুষকে কফি খাওয়াচ্ছেন, অর্থ উপার্জন করছেন, স্বাবলম্বী হচ্ছেন। সাব্বির এখন শুধুই একজন মাদকমুক্ত কিশোর নয়—তিনি এখন একটি উদাহরণ, এক অনুপ্রেরণার নাম।

নতুন জীবনের পথে হাঁটতে থাকা এই সাব্বির কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন ও সমাজসেবার সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ পারভেজের প্রতি, যারা তার জীবন বদলে দেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন।

ইএইচ