ছেলের শহীদের সনদ তো পাইলাম না: রায়হানের বাবা

শাহজাহান সেলিম বুলবুল, সিলেট ব্যুরো প্রকাশিত: জুলাই ১৯, ২০২৫, ০৩:৫৩ পিএম
ছেলের শহীদের সনদ তো পাইলাম না: রায়হানের বাবা

২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সিলেটে প্রাণ হারিয়েছেন ১৯ জন। নিখোঁজ আছেন একজন এবং আহত হয়েছেন সহস্রাধিক। 

নিহতদের মধ্যে সিলেটের বিয়ানীবাজারে ৫ জন, গোলাপগঞ্জে ৭ জন, গোয়াইনঘাটে ৩ জন, সিলেট সদরে ২ জন, দক্ষিণ সুরমায় ১ জন এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) ১ জন।

এই শহীদদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ১৫ জনকে সরকারিভাবে গেজেটভুক্ত করা হয়েছে। তবে রুদ্র সেন নামে এক শহীদ সিলেটে নিহত হলেও গেজেটভুক্ত হয়েছেন দিনাজপুরে। এখনো স্বীকৃতি মেলেনি ৪ শহীদের—তারা হলেন দক্ষিণ সুরমার পঙ্কজ, গোয়াইনঘাটের সুমন, নাহিদুল ও সিয়াম।

রায়হান উদ্দিনের গল্প

নিহতদের একজন রায়হান উদ্দিন (২১)। ২০২৪ সালে এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন তিনি। বাবার অসুস্থতায় সংসারের হাল ধরেছিলেন রায়হান। সিলেটের বিয়ানীবাজার পৌর এলাকায় একটি চায়ের দোকান চালিয়ে পরিবারের খরচ চালাতেন। তিনি চার ভাইয়ের মধ্যে দ্বিতীয় ছিলেন।

৫ আগস্ট আন্দোলনে অংশ নিতে যান রায়হান। ওইদিন বিকেল ৫টার দিকে বিয়ানীবাজার থানার সামনে পুলিশের গুলিতে নিহত হন তিনি।

“ছেলেকে আর ফিরে পাব না, অন্তত সনদটা চাই”

রায়হানের বাবা ফারুক আহমদ বলেন, “আমার গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার তেলিকান্দি গ্রামে। প্রায় ২০ বছর আগে সিলেটে এসেছি। শুরুতে ফেরি করে সংসার চালাতাম। বিয়ানীবাজারের নয়াগ্রামে ভাড়া বাসায় থাকি। কয়েক বছর আগে দুর্ঘটনায় মেরুদণ্ডে আঘাত পেয়ে এখন চলাফেরা করতে পারি না।"

তিনি বলেন, “গত বছরের ৫ আগস্ট সকালে রায়হান আমাকে দোকানে বসিয়ে ছাত্রদের সঙ্গে রওনা হয়। দীর্ঘ সময় না ফেরায় ছোট ছেলে সিয়ামকে খোঁজে পাঠাই। পরে দোকানের মালিক এসে বলেন, রায়হান গুলিবিদ্ধ হয়েছে! হাসপাতালে ছুটে গিয়ে দেখি অনেক গুলিবিদ্ধ লোক। আমাকে ছেলের মরদেহ তখন দেখানো হয়নি। পরে একটি গাড়িতে করে মরদেহ বাসায় পাঠানো হয়।”

ফারুক আহমদ বলেন, “আমার ছেলের রাজনীতির সঙ্গে কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। সে বিএনসিসির এক্স-ক্যাডেট ছিল, আনসারের ট্রেনিং নিয়েছিল, কম্পিউটার শিখেছিল। ভালো ছাত্র ছিল সে। এখনও মনে হয়, বুঝি রায়হান এসে বাবা বলে ডাকছে।”

সরকারি সহায়তার বিষয়ে তিনি বলেন, “জুলাই ফাউন্ডেশন থেকে ৫ লাখ টাকা, জেলা পরিষদ থেকে ২ লাখ টাকা এবং জামায়াত-বিএনপি থেকেও কিছু সহায়তা পেয়েছি। বর্তমান ইউনূস সরকার ভালো, তবে এখনো শহীদের সনদ পেলাম না। অন্তত ছেলের আত্মত্যাগের স্বীকৃতি চাই। আর যারা আমার সন্তানকে গুলি করে মেরে ফেলেছে, তাদের বিচার দেখে যেতে চাই।”

২০২৪ সালের ১৮ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সিলেটে প্রথম শহীদ হন শাবিপ্রবির শিক্ষার্থী রুদ্র সেন (২২)। ১৯ জুলাই পুলিশের গুলিতে নিহত হন সাংবাদিক আবু তাহের মো. তুরাব।

৫ আগস্ট গেজেটভুক্ত শহীদদের মধ্যে গোলাপগঞ্জের ৭ জন হলেন—কামরুল ইসলাম পাবেল (২০), নাজমুল ইসলাম (২২), জয় আহমদ (১৮), মিনহাজ আহমদ (২২), তাজ উদ্দিন (৩৫), গৌছ উদ্দিন (৩২) ও সানি (১৯)।

বিয়ানীবাজারে নিহতরা হলেন—রায়হান উদ্দিন (২১), ময়নুল ইসলাম (৩৫), তারেক আহমদ (২৩)।

২০ জুলাই শহীদ হন সোহেল, ১৯ জুলাই ঢাকায় নিহত হন ওয়াসিম এবং ২ আগস্ট হবিগঞ্জ সদরে মারা যান মোস্তাক আহমদ (২৩)। এদেরও গেজেটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

তবে এখনো গেজেটভুক্ত হননি গোয়াইনঘাটের সিয়াম (১৪), সুমন মিয়া (২৫), নাহিদুল ইসলাম (২২) এবং দক্ষিণ সুরমার পঙ্কজ কুমার কর (২২)।

ইএইচ