ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সরব হয়ে উঠেছে নীলফামারীর রাজনীতি। জেলার চারটি আসনেই এখন স্পষ্টভাবে বইছে নির্বাচনী হাওয়া।
হাট-বাজার, চায়ের দোকান, গ্রামের মোড় কিংবা সামাজিক অনুষ্ঠান—সব জায়গায়ই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ভোট ও প্রার্থীরা।
নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রার্থীরা নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন উঠান বৈঠক, পথসভা ও বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে। ভোটারদের কাছে তুলে ধরছেন নিজেদের অবস্থান, দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি।
পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও চলছে সরব প্রচারণা। পোস্টার, ব্যানার ও শুভেচ্ছাবার্তায় মুখর হয়ে উঠেছে নীলফামারী।
স্থানীয়দের মতে, দীর্ঘদিন পর এমন একটি নির্বাচন আসছে, যেখানে মানুষ কিছুটা স্বস্তিতে ভোট নিয়ে ভাবতে পারছে।
নীলফামারী জেলার চারটি আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের গতিবিধি এরই মধ্যে স্পষ্ট।
নীলফামারী-১ (ডোমার-ডিমলা)
এই আসনে বিএনপির পক্ষে প্রায় নিশ্চিত প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন প্রকৌশলী শাহরিন ইসলাম চৌধুরী তুহিন। জামায়াতে ইসলামীর একক প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন জেলা আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুস সাত্তার। এছাড়া ইসলামী আন্দোলন ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের প্রার্থীরাও রয়েছেন সক্রিয় প্রস্তুতিতে।
নীলফামারী-২ (সদর উপজেলা)
এখানে আওয়ামী লীগের প্রচারণা অপেক্ষাকৃত সীমিত থাকায় বিরোধী দলগুলো বেশ সক্রিয়। জামায়াতের অ্যাডভোকেট আলফারুক আব্দুল লতীফ, বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্যসচিব এ.এইচ.এম সাইফুল্লাহ রুবেল ও অ্যাডভোকেট কাজী আখতারুজ্জামান জুয়েল বর্তমানে মাঠে সক্রিয়। ইসলামী আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) প্রার্থীরাও প্রচারে রয়েছেন।
নীলফামারী-৩ (জলঢাকা)
জামায়াত অধ্যুষিত এই আসনে দলটির প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন অধ্যক্ষ ওবায়দুল্লাহ সালাফী। বিএনপির পক্ষে লড়ছেন সৈয়দ আলী ও ফাহমিদ ফয়সাল চৌধুরী (কমেট)। ইসলামী আন্দোলনের পক্ষ থেকে আছেন আমজাদ হাসান।
নীলফামারী-৪ (সৈয়দপুর-কিশোরগঞ্জ)
এখানে জামায়াতের একক প্রার্থী হাফেজ মাওলানা আব্দুল মুনতাকিম। বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন সাবেক এমপি বিলকিস ইসলাম, কণ্ঠশিল্পী বেবী নাজনিন, আব্দুল গফুর সরকার ও অ্যাডভোকেট ওবায়দুর রহমান। মাঠে রয়েছেন এনসিপির আবু সাঈদ লিয়ন ও ইসলামী আন্দোলনের শহিদুল ইসলাম।
নির্বাচনী আবহের মধ্যে জেলার এক হাটে কথা হয় কৃষক মতিয়ার রহমানের সঙ্গে।
তিনি বলেন, “ভোট দিতে পারবো কি না, এটা আগে চিন্তার বিষয় ছিল। এবার একটু আশাবাদী। ঠিকমতো ভোট দিতে পারলে ভালো প্রার্থীকেই ভোট দেব।”
তরুণ ভোটার তানিয়া আক্তার বলেন, “এটাই আমার প্রথম ভোট। আগে শুধু শুনতাম ভোট কারচুপি হয়, এবার নিজের ভোট নিজেই দিতে চাই।”
একই কথা বলেন শিক্ষক মতিউর রহমান। তার ভাষ্য, “মানুষ এখন দল নয়, ব্যক্তিকে দেখে। কে এলাকার জন্য কাজ করেছেন, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।”
এ বিষয়ে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভোটার তালিকা হালনাগাদ, কেন্দ্র চিহ্নিতকরণ ও মাঠ পর্যায়ে সমন্বয়ের কাজ চলছে পুরোদমে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, জেলায় আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক দুর্বলতা এবং ফ্যাসিবাদী রাজনৈতিক পরিবেশের কারণে এবার মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বিএনপি, জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনের মধ্যে। এতে করে চারটি আসনেই ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
ইএইচ