সাতকানিয়া-লোহাগাড়া বিএনপির কোন্দলের অবসান

মোহাম্মদ বেলাল হোছাইন, চট্টগ্রাম দক্ষিণ প্রকাশিত: জুলাই ২৭, ২০২৫, ০৫:৩২ পিএম
সাতকানিয়া-লোহাগাড়া বিএনপির কোন্দলের অবসান

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির অন্তর্দ্বন্দ্বে জর্জরিত সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলায় অবশেষে দীর্ঘদিনের কোন্দলের অবসান ঘটেছে। 

লন্ডনে অবস্থানরত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সরাসরি নির্দেশে এবং বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, যুগ্ম সম্পাদক ভিপি হারুন ও ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, জেলা আহ্বায়ক আলহাজ ইদ্রিছ মিয়া ও সদস্য সচিব লায়ন মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিনের উদ্যোগে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলেন দুই উপজেলার ১০ শীর্ষ নেতা।

চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনে ধানের শীষ প্রতীকের বিজয়ের লক্ষ্যকে সামনে রেখে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার অঙ্গীকার করেছেন তারা। 

ঐক্যবদ্ধ নেতারা হলেন— জামাল হোসেন, মুজিবুর রহমান, শেখ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, হাজী রফিকুল আলম, শেফায়েত উল্লাহ চক্ষু (সাতকানিয়া), আসহাব উদ্দিন চৌধুরী, নাজমুল মোস্তফা আমিন, ছলিম উদ্দিন চৌধুরী, সালাহ উদ্দিন চৌধুরী সোহেল ও ফৌজুল কবির ফজু (লোহাগাড়া)।

উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম-১৫ আসনটি লোহাগাড়া উপজেলার সম্পূর্ণ অংশ এবং সাতকানিয়ার ১১টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। দীর্ঘদিন ধরে এ আসনে জামায়াত-শিবিরের শক্তিশালী অবস্থান এবং বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল দলের সাংগঠনিক দুর্বলতার অন্যতম কারণ ছিল।

গত ৬ মে ঘোষিত চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটিতে সাতকানিয়া ও লোহাগাড়ার নেতাদের বিভিন্ন পদে অন্তর্ভুক্ত করা হলেও, পদ নিয়ে অসন্তোষ এবং মনোনয়ন প্রত্যাশা কেন্দ্র করে কোন্দল অব্যাহত থাকে। এ অবস্থায় রক্তক্ষয়ী সংঘাতের আশঙ্কা সৃষ্টি হলে তারেক রহমান কড়া নির্দেশনা দিয়ে ঐক্য প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেন।

ঐক্য প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে গত ১৭ ও ১৯ জুলাই চট্টগ্রাম শহরের আগ্রাবাদে হোটেল সাং গ্রী লা-তে দুটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশগ্রহণকারী নেতারা পরবর্তী সময়ে স্থানীয় পর্যায়ে মিলনমেলা, মতবিনিময় সভা ও একত্রে মেজবান অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নেতাকর্মীদের মধ্যে ঐক্যের বার্তা পৌঁছে দেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, এ ঐক্যে সাধারণ নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে। দুই যুগ পর তারা আশাবাদী হয়েছেন দলকে সংগঠিত করে বিজয়ের পথে এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে।

বিভিন্ন নেতৃবৃন্দের বক্তব্যে উঠে এসেছে ঐক্য বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি। যুগ্ম আহ্বায়ক আসহাব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, “ভোটের আগে সবাইকে এক হতে হবে—আমি এক বছর আগেই তা বলেছিলাম। সময়মতো আমরা এক হয়েছি।”

জামাল হোসেন বলেন, “দলীয় স্বার্থে সব ভেদাভেদ ভুলে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছি।”

মুজিবুর রহমান চেয়ারম্যান বলেন, “সাতকানিয়ার মাটি বিএনপির ঘাঁটি, আমরা একসাথে কাজ করলে বিজয় আমাদের হবেই।”

অধ্যাপক শেখ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, “ঐক্যবদ্ধ বিএনপিকে সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় হারাতে পারে এমন কোনো শক্তি নেই।”

নাজমুল মোস্তফা আমিন বলেন, “আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করলে ধানের শীষের বিজয় সুনিশ্চিত।”

ছলিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, “সব ভেদাভেদ ভুলে আমরা এক হয়েছি—এই ঐক্য অটুট থাকবে।”

হাজী রফিকুল আলম বলেন, “শহীদ জিয়ার বিএনপি এ অঞ্চলে অত্যন্ত জনপ্রিয়। আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে কেউ আমাদের হারাতে পারবে না।”

শেফায়েত উল্লাহ চক্ষু বলেন, “তারেক রহমানের নির্দেশে, বিভাগীয় ও জেলা নেতৃত্বের সক্রিয় তদারকিতে এ ঐক্য হয়েছে। দল যাকে মনোনয়ন দেবে, আমরা সবাই তার পক্ষেই কাজ করব।”

নেতারা জানান, এ ঐক্য সাময়িক কোনো কৌশল নয়, বরং এটি একটি স্থায়ী রূপ লাভ করবে। তারা ভবিষ্যতে একত্রে দলের পুনর্গঠনে কাজ করে সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় বিএনপিকে পূর্বের অবস্থানে ফিরিয়ে আনতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।

ইএইচ