দুদকের অনুসন্ধান

সাদাপাথর লুটে জড়িত ৫২ ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান

সিলেট প্রতিনিধি প্রকাশিত: আগস্ট ২১, ২০২৫, ১০:১৬ এএম
সাদাপাথর লুটে জড়িত ৫২ ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জের পর্যটন এলাকা সাদাপাথরে দৃষ্টান্তহীন লুটপাটের ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর তদন্তে ওঠে আসে ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, সংস্থাহ ৫২ টি নাম।

বুধবার রাতে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও দুদকের কর্মকর্তারা ফোন রিসিভ করেননি। যদিও দুদকের প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো তালিকাটি আমার সংবাদের হাতে রয়েছে।

এতে বিভিন্ন দলের ৪২ জন রাজনৈতিক ব্যবসায়ী রয়েছেন। দুর্নীতির সম্পৃক্ততা আনা হয়েছে কয়েকটি সরকারি দপ্তর, পর্যায়ক্রমে দায়িত্ব পালনকারী চারজন ইউএনও, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতার।

এই তালিকায় খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো, সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক কোম্পানীগঞ্জের বিদায়ী চার নির্বাহী কর্মকর্তা, সিলেটের পুলিশ সুপার, কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও বিজিব’র কর্তব্যে অবহেলার তথ্যও পেয়েছে দুদক। 

তবে, দুদক মহাপরিচালক ও মুখপাত্র মো. আক্তার হোসেন একটি গণমাধ্যমকে প্রতিবেদন দাখিলের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। প্রতিবেদনে পাথর চুরির সত্যতা পাওয়ায় অনুসন্ধানের সুপারিশ করা হয়েছে, যা কমিশনের সিদ্ধান্তের জন্য উপস্থাপন করা হয়েছে।

আমার সংবাদের কাছে সংরক্ষিত দুদকের ওই প্রতিবেদনে পাথরকাণ্ডে ৫০ জনের নাম ও পদবি পাওয়া গেছে। আছে দু'টি প্রতিষ্ঠানের নামও।

এ তালিকায় নাম রয়েছে বিএনপির ২০, আওয়ামী লীগের সাত এবং জামায়াতে ইসলামি ও এনসিপি দুজন করে নেতার।

পাথর চুরির ঘটনায় খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো, সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক কোম্পানীগঞ্জের বিদায়ী চার নির্বাহী কর্মকর্তা যথাক্রমে আজিজুন্নাহার, মোহাম্মদ আবুল হাসনাত, উর্মি রায় ও আবিদা সুলতানা, সিলেটের পুলিশ সুপার, কোম্পানীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ ও বিজিবি'র কর্তব্যে অবহেলার বিষয়টিও উঠে আসে দুদকের প্রতিবেদনে। কমিশনের এনফোর্সমেন্ট টিম অভিযান ও অনুসন্ধান চালিয়ে নেতাদের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে বলে দুদক জানিয়েছে। যদিও বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামি বিষয়টি অস্বীকার করে এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে।

দুদকের প্রতিবেদনে 'স্থানীয় প্রশাসনের সাথে অসাধু যোগসাজশে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর এলাকার পাথর উত্তোলনের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতিসাধনের' অভিযোগের আলোকে ১৩ আগস্ট সাদাপাথর এলাকায় দুদকের সিলেট অফিস একটি অভিযান পরিচালনা করে।

এ অভিযানের প্রেক্ষিতে ওইদিন রাতেই স্থানীয় প্রশাসন জরুরি সভা আয়োজন করে এবং যৌথবাহিনীর মাধ্যমে লুটকৃত পাথর উদ্ধার ও প্রতিস্থাপনের উদ্যোগ নেয়, যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়। উক্ত অভিযানকালে প্রাপ্ত তথ্যে কয়েকশ কোটি টাকার পাথর লুটপাট হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।

কয়েকশ কোটি টাকা মূল্যের পাথর আত্সাতের প্রক্রিয়ায় (তালিকায় যাদের নাম রয়েছে) প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ও সুবিধাভোগী সংস্থা ও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার ব্যক্তিবর্গ জড়িত উল্লেখ করা হয় দুদকের প্রতিবেদনে।

তালিকায় বিএনপির নাম:

সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরি, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাহাব উদ্দিন, সদস্য হাজী কামাল (পাথর ব্যবসায়ী), কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা শ্রমিকদলের সাবেক সভাপতি ও সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান লাল মিয়া (পাথর ব্যবসায়ী), কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন ওরফে দুদু (পাথর ব্যবসায়ী), সিলেট জেলা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক রুবেল আহমেদ বাহার (পাথর ব্যবসায়ী), সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মুসতাকিন আহমদ ফরহাদ (পাথর ব্যবসায়ী), কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক মো. দুলাল মিয়া ওরফে দুলা, যুগ্ম আহ্বায়ক রজন মিয়া, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা যুবদল নেতা জসিম উদ্দিন, সাজন মিয়া, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির কর্মী জাকির হোসেন, সদস্য মোজাফর আলী, মানিক মিয়া, সিলেট জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মকসুদ আহমদ, সিলেট জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম ওরফে শাহপরাণ, জেলা বিএনপির কোশাধ্যক্ষ (বহিষ্কৃত) শাহ আলম ওরফে স্বপন, সিলেট জেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কাশেম এবং গোয়াইনঘাট উপজেলার পূর্ব জাফলং ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আমজাদ বকস।

আওয়ামী লীগের সাতজন:
কার্যক্রম নিষিদ্ধ সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের কর্মী বিলাল মিয়া (পাথর ব্যবসায়ী), শাহাবুদ্দিন (পাথর ব্যবসায়ী), গিয়াস উদ্দিন (পাথর ব্যবসায়ী), কোম্পানীগঞ্জ আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবদুল ওদুদ আলফু, কর্মী মনির মিয়া, হাবিল মিয়া ও সাইদুর রহমান।

জামায়াত ও এনসিপির চার নেতা:
সিলেট মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমির মো. ফখরুল ইসলাম ও সিলেট জেলার সেক্রেটারি জয়নাল আবেদীন; সিলেট জেলা জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি প্রধান সমন্বয়কারী নাজিম উদ্দিন ও মহানগর প্রধান সমন্বয়কারী আবু সাদেক মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম চৌধুরি।

আরও ১১ জন:
অনুসন্ধানে সাদাপাথর চুরির সঙ্গে আরও যাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে তারা হলেন- কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জের মৃত ছোরাব আলির ছেলে আনর আলী, কলাবাড়ীর মৃত ছাদির খাঁর ছেলে উসমান খাঁ, একই এলাকার মৃত আলি হোসেন কমান্ডারের ছেলে ইকবাল হোসেন আরিফ ও দেলোয়ার হোসেন জীবন, ভোলাগঞ্জের মৃত ইসহাকের ছেলে আরজান মিয়া, একই এলাকার দুলা মেম্বারের ছেলে জাকির, বর্ণির নয়মুল্লার ছেলে আলী আকবর, গওখালের পাড়ের মো. আকবর আলির ছেলে আলী আব্বাস, বুড়ুদেও গ্রামের মৃত নূর মিয়ার ছেলে মো. জুয়েল, পূর্ব ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলমগির আলম এবং সিলেট নগরীর মিরবক্সটুলার জামেয়া ইসলামিয়া হোসাইনিয়া মাদরাসার শিক্ষক মুকাররিম আহমেদ।

অনুসন্ধানে সাদাপাথরকাণ্ডে কয়েকজন সাংবাদিক ও অন্যান্য পেশার ব্যক্তিবর্গের তালিকা পাওয়া গেছে। যা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে- উল্লেখ করা হয় দুদকের প্রতিবেদনে।

জেএইচআর