রাজধানী ঢাকা থেকে মাত্র ৮০ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত দেশের অন্যতম উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (মাভাবিপ্রবি)।
তবে প্রতিষ্ঠার ২৬ বছর পরেও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ঢাকামুখী কোনো বাস সার্ভিস চালু হয়নি, যা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিত্যপ্রয়োজনীয় পাঠ্যসামগ্রী, গবেষণা উপকরণ, চাকরির প্রস্তুতি, বিভিন্ন কর্মশালা, সেমিনার ও শিল্প-প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগসহ নানা আনুষ্ঠানিকতায় ঢাকামুখী হতে বাধ্য হন। শিক্ষকদেরও ঢাকার বিভিন্ন কাজকর্মে নিয়মিত অংশ নিতে হয়। অথচ এই প্রয়োজনীয়তা সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব কোনো বাস চলাচল না করায় শিক্ষার্থীরা চরম দুর্ভোগে পড়ছেন।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস কুমিল্লা পর্যন্ত, গোপালগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস ঢাকায় চলাচল করলেও মাভাবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা ঢাকার এত কাছাকাছি থেকেও এই সেবা থেকে বঞ্চিত। এতে করে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা, দক্ষতা উন্নয়ন এবং পেশাগত সংযোগের ক্ষেত্রে বড় বাধা তৈরি হচ্ছে।
টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী মো. সাইফুল্লাহ রাজন বলেন, “আমাদের আইসিটি বিভাগের কিছু শিক্ষার্থী সম্প্রতি একটি রোবটিক্স প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। কিন্তু ঢাকার সাথে সরাসরি যাতায়াতের ব্যবস্থা না থাকায় আমরা অনেক প্রতিযোগিতা, সেমিনার, ওয়ার্কশপ কিংবা ইন্ডাস্ট্রির সংযোগের সুযোগ হারাচ্ছি। যদি এমন ব্যবস্থা থাকত, তাহলে আমাদের দক্ষতা আরও বিকশিত হতো।”
তিনি আরও বলেন, “ঢাকার এত কাছে থেকেও বাস না থাকাটা বৈষম্যের নামান্তর। টাঙ্গাইলে বইয়ের দাম বেশি, ঢাকায় গেলে মানসম্মত বই পাওয়া যায়। ঢাকায় নিয়মিত যাতায়াতের সুযোগ থাকলে শিক্ষাগত খরচও কমত।”
ইনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী রায়হান এস মাহমুদ বলেন, “ক্যাম্পাসে বইয়ের অভাব রয়েছে। নীলক্ষেত থেকে বই সংগ্রহ করা সম্ভব হলেও যাতায়াতে ভোগান্তি পোহাতে হয়। চাকরির প্রস্তুতির ক্ষেত্রেও ঢাকায় যাতায়াতের সুযোগ অপরিহার্য। যদি বাস চলাচল করে, সেটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যান্ডিংয়ের ক্ষেত্রেও বড় ভূমিকা রাখবে। ঢাকায় সংযোগ থাকলে চিন্তা ও চেতনার বিকাশ ঘটবে।”
তিনি আরও বলেন, “ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব বাস থাকলে যাতায়াত আরও নিরাপদ ও সুশৃঙ্খল হতো।”
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. মাহবুবুল বাশার বলেন, “গত অর্থবছরে জ্বালানির জন্য বাজেট থাকলেও অতিরিক্ত সময়ের ভাতা ও মেরামতের খাতে বাজেট ছিল না। এখনও পাঁচ মাসের ওভারটাইম ভাতা বকেয়া রয়েছে। নতুন কোনো বাস সার্ভিস চালু করা বাজেট ঘাটতির কারণে সম্ভব নয়।”
তিনি আরও বলেন, “বর্তমান উপাচার্য ইন্টারিম সময়েই নিয়োগ পেয়েছেন, ফলে নতুন বাজেট বরাদ্দ হয়নি। আগের বাজেট দিয়েই আমাদের পরিচালনা করতে হচ্ছে। বাজেট বাড়লে ভবিষ্যতে ঢাকামুখী বাস চালুর বিষয়টি অবশ্যই বিবেচনায় নেওয়া হবে।”
ঢাকামুখী বাস সার্ভিস চালুর দাবিতে শিক্ষার্থীরা একাধিকবার গণস্বাক্ষর, স্মারকলিপি প্রদানসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করলেও বাস্তবায়নের মুখ দেখেনি। প্রতিবছর ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, মুন্সিগঞ্জ ও মাওনা অঞ্চল থেকে বিপুল শিক্ষার্থী মাভাবিপ্রবিতে ভর্তি হন। শিক্ষার্থীদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগোসংবলিত একটি বাস যদি ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে নিয়মিত চলাচল করে, তবে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচিতি ও মর্যাদা বাড়াবে।
ইএইচ