হামাসের হামলার সাইরেনে বাঙ্কারে ব্লিংকেন-নেতানিয়াহু

আন্তর্জাতিক ডেস্ক প্রকাশিত: অক্টোবর ১৭, ২০২৩, ০৯:২০ এএম
হামাসের হামলার সাইরেনে বাঙ্কারে ব্লিংকেন-নেতানিয়াহু

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের সংঘাত চলছে টানা এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে । সংঘাতের মধ্যে ইসরায়েল যেমন গাজায় নির্বিচারে হামলা চালিয়ে আসছে, তেমনই ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরেও রকেট হামলা চালাচ্ছে হামাস।

তেমনই এক হামলার ঘটনায় সোমবার (১৬ অক্টোবর) তেল আবিবে বেজে ওঠে সাইরেন। এসময় শহরটিতে বৈঠক করছিলেন সফররত মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন এবং ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। পরে তারা বাঙ্কারে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন। মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন এবং ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু তেল আবিবে বৈঠক করার সময় সেখানে রকেট হামলার সাইরেন বেজে ওঠে এবং এর জেরে তারা পাঁচ মিনিটের জন্য একটি বাঙ্কারে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিলেন।

মূলত অ্যান্টনি ব্লিংকেন এবং বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর মধ্যকার বৈঠকের মধ্যে কী হয়েছিল তা মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার প্রকাশ করেছেন। মিলার বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এবং যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার সদস্যদের সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকের সময় বিমান হামলার সাইরেন বেজে ওঠে এবং তারা পাঁচ মিনিটের জন্য বাঙ্কারে আশ্রয় নেন।’

যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ কূটনীতিক অ্যান্টনি ব্লিংকেন গত চার দিন ধরে মধ্যপ্রাচ্য চষে বেড়াচ্ছেন। গত ৭ অক্টোবর হামাসের সাথে ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরুর পর তিনি আরব বিশ্বের ছয় দেশ জর্ডান, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব এবং মিসর সফর করেছেন। এই সফর শেষে সোমবার ইসরায়েলে ফিরে প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সাথে বৈঠক করেন তিনি।

তার এই সফরের উদ্দেশ্য গাজার বেসামরিক নাগরিকদের কীভাবে সর্বোত্তম মানবিক সহায়তা এবং বিদেশি নাগরিকদের চলে যেতে দেওয়া যায় সেই বিষয়ে আরব বিশ্বের চিন্তা-ভাবনা শোনা, জানা এবং আলোচনা করা।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরটি এই অঞ্চলকে যুক্তরাষ্ট্রের একটি বার্তা জানিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে সাজানো হয়। সেই বার্তাটি হল, হামাসের প্রতি ইরানের সমর্থনে বাধা দিতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। গাজা উপত্যকার ক্ষমতাসীন এই গোষ্ঠীকে দীর্ঘদিন ধরে ইরান অর্থ এবং অস্ত্র সহায়তা দিয়ে আসছে। যুক্তরাষ্ট্র্র ইরানের এই সহায়তা ঠেকাতে চায়।

মূলত আরব বিশ্বের ছয় দেশ সফরের বিষয়ে জানাতে ইসরায়েলে সোমবার পুনরায় ফিরে আসেন অ্যান্টনি ব্লিংকেন। এর মাধ্যমে ইসরায়েল যেভাবে গাজায় হামাসকে ধ্বংস করতে চাইছে— বিশেষ করে বেসামরিকদের ওপর ইসরায়েলি আক্রমণে এই অঞ্চল কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবে সেই বিষয়ে নেতানিয়াহু প্রশাসনকে ধারণা দেবেন তিনি।

সফর শেষে সোমবার ইসরায়েলে ফিরে প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ও তার প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করেন ব্লিংকেন। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ইসরায়েলের প্রতিশ্রুতি, নিজেকে এবং তার জনগণকে রক্ষা করার বাধ্যবাধকতা বোঝে যুক্তরাষ্ট্র। ইসরায়েল এই কাজে সবসময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন পাবে।

হোয়াইট হাউসের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মধ্যপ্রাচ্য সফরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিংকেন হামাসের ‘সন্ত্রাসবাদ থেকে আত্মরক্ষা করার জন্য ইসরায়েলের অধিকারের’ প্রতি তার দৃঢ় সমর্থনের ওপর জোর দিয়েছেন। একই সঙ্গে নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য যে ধরনের সহায়তা প্রয়োজন ইসরায়েলি সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র তা দেবে বলে ওয়াশিংটনের অঙ্গীকারের পুনরাবৃত্তি করেছেন তিনি।

বিবিসি বলছে, গাজার কয়েক লাখ বেসামরিক লোকের সাহায্য পাওয়ার বিষয়ে অ্যান্টনি ব্লিংকেন ইসরায়েল এবং মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশে আলোচনা করছেন। গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালায় হামাস। হামলায় প্রায় ৩০০ সেনাসদস্যসহ ১৪০০ ইসরায়েলি নিহত হয়।

হামাসের ওই হামলার জেরে ইসরায়েল গাজায় অবিরাম বোমা হামলা করে চলেছে এবং স্থল অভিযান শুরুর লক্ষ্যে গাজা সীমান্তে ৩ লাখ সেনাসহ বহু ট্যাংক জড়ো করেছে।

এছাড়া হামাসের হামলার পর থেকেই গাজায় বিদ্যুৎ, জ্বালানি, খাদ্য, পানি ও পণ্য সরবরাহ বন্ধ করে দিয়ে ভূখণ্ডটি অবরুদ্ধ করে রেখেছে ইসরায়েল। বিবিসি বলছে, গাজার বেসামরিক জনগণের জন্য সেখানকার পরিস্থিতি খুবই খারাপ হয়ে গেছে। ভূখণ্ডটিতে পানি, খাদ্য, জ্বালানি এবং ওষুধের ঘাটতি রয়েছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।

এইচআর