ডেঙ্গুতে প্রতিদিন গড়ে ১০ মৃত্যু

সাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া প্রকাশিত: নভেম্বর ২০, ২০২৩, ০৩:৩০ পিএম
ডেঙ্গুতে প্রতিদিন গড়ে ১০ মৃত্যু
  • চলতি বছর আক্রান্ত তিনলাখ ছাড়াল
  • মৃদু শীতেও কমছে না  আক্রান্ত ও মৃত্যু

চলতি বছর দেশে ডেঙ্গুতে রেকর্ড সংখ্যক আক্রান্ত ও মৃত্যু হয়েছে। বিগত বছরগুলোতে মে থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ডেঙ্গুতে বেশি আক্রান্ত ও মৃত্যু হলেও নভেম্বর মাসে মৃদু শীত নামলে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যু কমে আসত। কিন্তু চলতি বছর মৃদু শীত নামলেও নভেম্বর মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যু বেড়েই চলছে। চলতি বছর নভেম্বর মাসের শুরু থেকে গতকাল পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ৩০ হাজার ৮০ জন ও মৃত্যু ২০১ জন। প্রতিদিন গড়ে মৃত্যু হচ্ছে ১০ জনের। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন অ্যান্ড কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো সর্বশেষ তথ্য বলছে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৫৬৬ জন আর মৃত্যু ছয়জন।

ফেব্রুয়ারি মাসে আক্রান্ত ১৬৬ জন মৃত্যু তিনজন। মার্চ মাসে আক্রান্ত ১১১ জন মৃত্যু শূন্য। এপ্রিল মাসে আক্রান্ত ১৪৩ জন মৃত্যু দুজন। মে মাসে আক্রান্ত এক হাজার ৩৬ জন, মৃত্যু দুজন। জুন মাসে আক্রান্ত পাঁচ হাজার ৯৫৬ জন, মৃত্যু ৩৪ জন। জুলাই মাসে আক্রান্ত ৪৩ হাজার ৮৫৪ জন, মৃত্যু ২০৪ জন। আগস্ট মাসে ৭১ হাজার ৯৭৬ জন, মৃত্যু ৩৪২ জন। সেপ্টেম্বর মাসে ৭৯ হাজার ৫৯৮ জন আক্রান্ত, মৃত্যু ৩৯৬ জন। অক্টোবর মাসে ৬৭ হাজার ৭৬৯ জন, মৃত্যু ৩৫৯ জন। এ তথ্য শুধুমাত্র ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেয়া রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা। আক্রান্ত হয়ে বাসায় চিকিৎসা নেয়া রোগী রয়ে যাচ্ছেন হিসাবের বাইরে।

ঢাকা বাইরে রোগী বাড়লেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। এতে রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় চলতি বছর আক্রান্ত রোগীর মধ্যে ঢাকায় আক্রান্ত হয়েছেন এক লাখ পাঁচ হাজার ৫৩৫ জন এবং ঢাকা বাইরে আক্রান্ত হয়েছেন এক লাখ ৯৫ হাজার ৭২০ জন। ঢাকায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৯০১ জন এবং ঢাকার বাইরে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়ে ৬৪৮ জনের। ডেঙ্গুতে মোট আক্রান্তের হার পুরুষ ৫৯ দশমিক ৯ শতাংশ আর নারী ৪০ দশমিক ১ শতাংশ। ডেঙ্গুতে পুরুষ বেশি আক্রান্ত হলেও মৃত্যু বেশি নারীর। মোট মৃত্যুর ৮৮৫ জন নারী এবং ৬৬৪ জন পুরুষ। 

কীটতত্ত্ব নিয়ে গবেষণা করছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার। তার সাথে কথা বলেন আমার সংবাদের এ প্রতিবেদক। তিনি বলেন, বিগত বছরগুলোতে শীতকালে সাধারণত ডেঙ্গুজ্বর হতো না, কিন্তু এডিস মশা তার ধরন পাল্টিয়েছে। তাই শীত, বর্ষা, গরম সব সময়ই এখন ডেঙ্গু হচ্ছে। বর্ষাকালে বেশি থাকবে শীতকালে কম থাকবে এমনই হবে। স্থানীয় পর্যায়ে ডেঙ্গু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।

ডেঙ্গুর বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আমার সংবাদের এ প্রতিবেদক কথা বলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদের সাথে। তিনি বলেন, ডেঙ্গু ভাইরাসের বাহক আছে বলেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত বাড়ছে। আমাদের ডেঙ্গু ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি খুব বেশি একটা কাজে আসছে না। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আমাদের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই। শীত শুরু হলেও যেহেতু ডেঙ্গু রয়েছে তাই সবার সচেতনতা বাড়াতে হবে।

আরএস