Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

ধর্মপাশায় গৃহবধূ হত্যা মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার দাবি

ধর্মপাশা (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি

ধর্মপাশা (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি

নভেম্বর ২১, ২০২২, ০৬:১৮ পিএম


ধর্মপাশায় গৃহবধূ হত্যা মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার দাবি

সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলা পরিষদের সামনের সড়কে সোমবার (২১ নভেম্বর) সকাল ১১টার দিকে এক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এক গৃহবধূ (৩০) কে শারীরিকভাবে নির্যাতন ও জোরপূর্বক বিষ খাইয়ে হত্যা করার অভিযোগে হত্যা মামলায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবিতে ওই গৃহবধূর স্বজনেরা এই মানববন্ধনের আয়োজন করেন।

মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন নিহত গৃহবধূ হেনা আক্তারের আপন বড় ভাই অলি উল্লা, বড় বোন নূর জাহান বেগম, ভাগ্নে মুশফিকুর রহমান ওরফে সুমন প্রমুখ।

মানবন্ধনে বক্তরা অবিলম্বে এই হত্যা মামলার তিনজন এজাহার ভূক্ত আসামিকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও তাঁদের ফাঁসির দাবি জানান। গত ১৪ নভেম্বর এ ঘটনায় নিহত হেনা আক্তারের বড় ভাই অলি উল্লা (৪২) বাদী হয়ে গৃহবধূর স্বামী সোহেল আহমেদ (৩৮)সহ তিনজনকে আসামি  করে থানায় একটি হত্যা মামলা নথিভূক্ত করেছে।  

ধর্মপাশা থানা পুলিশ, এলাকাবাসী ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ২০২০সালের ২২ সেপ্টেম্বর উপজেলার সদর ইউনিয়নের বাহুটিয়া কান্দা গ্রামের  শাহেদ আলী তালুকদারের ছেলে সোহেল আহমেদের সঙ্গে একই উপজেলার সেলবরষ ইউনিয়নের সৈয়দপুর গ্রামের ছফি মিয়ার মেয়ে হেনা আক্তারের ইসলামী শরিয়া মোতাবেক চার লাখ টাকা কাবিন মূলে বিয়ে হয়। মাস তিনেক  যেতে না যেতেই গৃহবধূ হেনা আক্তারের ওপর শারিরীক নির্যাতন ও বাবার বাড়ি থেকে পাঁচ লাখ টাকা এনে দেওয়ার জন্য তার ওপর চাপ সৃষ্টি করের স্বামী সোহেল আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যরা।

ধর্মপাশা থানায় দায়ের করা মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, উপজেলার সদর ইউনিয়নের বাহুটিয়াকান্দা গ্রামের বাসিন্দা স্বামী সোহেল আহমেদ (৩৮), তার ছোট ভাই মো. কবির (৩২) ও তার মা আছিয়া আক্তার (৫০) গত ২০অক্টোবর রাত অনুমান সাড়ে ১১টার দিকে গৃহবধূ হেনা আক্তার (৩০) কে শারিরীকভাবে মারধর শুরু করেন এবং জোরপূর্বক ওই গৃহবধূর মূখে বিষ ঢেলে দিলে তিনি মৃত্যযন্ত্রণায় ছটফট করতে শুরু করেন। ওইদিন রাত সাড়ে তিনটার দিকে অচেতন অবস্থায় ওই গৃহবধূকে পাশের নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানকার ডাক্তারেরা ওই গৃহবধূকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। পরদিন ২১ অক্টোবর বেলা সোয়া দুইটার দিকে ওই গৃহবধূকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করা হয়। ওইদিন বিকেল সাড়ে চারটার দিকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

এ ঘটনায় ধর্মপাশা থানায় হত্যা মামলা না নেওয়ায় নিহতের বড় ভাই অলি উল্লা বাদী হয়ে তার ছোট বোনের স্বামী, দেবর ও শ্বাশুড়ীকে আসামি করে গত ৮ নভেম্বর সুনামগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল আদালতে মামলার অভিযোগ দায়ের করেন। যার নং ৫৫১/২০২২। আদালত থেকে এই অভিযোগটি মামলা হিসেবে থানায় নথিভূক্ত করার জন্য নির্দেশ দিলে গত ১৪নভেম্বর অভিযোগটি নথিভুক্ত করেন ধর্মপাশা থানা পুলিশ।

নিহত গৃহবধূর বড় বোন নূর জাহান বেগম বলেন, আমার ছোট বোন খুবই শান্ত প্রকৃতির ছিল। সবার সঙ্গে সে মিলে মিশে থাকতে পছন্দ করতো। কখনো উচ্চ বাচ্চ করতো না। শ্বশুর বাড়ির লোকজনদের শারীরিক নির্যাতনে সে নীরবে সহ্য করে আসছিল। তাকে ৫লাখ টাকা বাবার বাড়ি থেকে আনার জন্য চাপ সৃষ্টি করেন ও মারধর করেন স্বামী ও তার স্বজনেরা। এতে আমার ছোট বোন হেনা আক্তার অপারগতা প্রকাশ করায় যৌতুকের টাকা এনে না দেওয়ায় এবং সে সন্তানের মা হতে না পারায় তার স্বামী, দেবর ও শ্বাশুড়ী মিলে আমার বোনকে মারধর ও জোরপূর্বক বিষ খাইয়ে হত্যা করেছে। আদালতের নির্দেশে এ নিয়ে থানায় মামলাটি রেকর্ড হলেও আসামিদেরকে রহস্যজনক কারণে পুলিশ গ্রেপ্তার করছে না। তাঁরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এ ঘটনায় মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার ও ফাঁসির দাবিতে আমরা মানববন্ধন করেছি।

গৃহবধূর স্বামী সোহেল আহমেদ বলেন, আমার স্ত্রীকে নির্যাতন, জোরপূর্বক বিষ খাওয়ানো এবং  যৌতুকের টাকা চাওয়া অভিযোগটি মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। ভুল বুঝে আমার শ্বশুড়বাড়ির লোকজন আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ রটাচ্ছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন এলেই সবকিছু পরিস্কার হয়ে যাবে।

ধর্মপাশা থানা এসআই ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা  পাপন দে সাংবাদিকদের বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দম ট্রাইবুনাল আদালত সুনামগঞ্জের নির্দেশে এই মামলাটির নথিভূক্ত করা হয়েছে। মামলাটির তদন্ত কার্যক্রম চলছে। তদন্তের স্বার্থে এ ব্যাপারে কোনো বক্তব্য দিতে অপারগত প্রকাশ করেন।

কেএস 

Link copied!