আমার সংবাদ ডেস্ক
জুন ২৪, ২০২৫, ০৬:২২ পিএম
যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রতিমন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে দুর্নীতির মামলা করা হয়েছে তুলে ধরে দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেছেন, সংস্থাটি ব্রিটেনের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করছে না।
চিঠি আদান প্রদান নয়, অন্য অভিযুক্তদের মতই আদালতে এসে টিউলিপকে মামলা মোকাবেলার কথাও স্মরণ করিয়ে দেন তিনি।
মঙ্গলবার দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন সংস্থার চেয়ারম্যান।
টিউলিপের আইনজীবী সম্প্রতি দুদকে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। সেখানে তিনি দাবি করেন, অন্তর্বর্তী সরকার ও দুদক ব্রিটেনের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের চেষ্টা করছে৷
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, “আমার সহজ একটা প্রশ্ন, টিউলিপ সিদ্দিকের মামলাটা কী এমন কোনো মামলা যেটা ব্রিটেনের ভঙ্গুর রাজনীতিকে আরও ভঙ্গুর করবে। এটা আমরা অন্যভাবে দেখতে পারি।”
চিঠিপত্রের মাধ্যমে টিউলিপ মামলা নিষ্পত্তি করতে চাইছেন মন্তব্য করে মোমেন বলেন, “অপরাধী যে দেশে অপরাধ করবে তাকে সেই দেশেই তা তা মোকাবিলা করতে হবে। এখন মনে হচ্ছে সম্ভবত চিঠিপত্রের মাধ্যমে মামলা মোকাদ্দেমা নিষ্পত্তি করতে চাইছেন। এটা তো হবার কথা নয়।
“কোর্টে মামলা হচ্ছে টিউলিপ সিদ্দিককে কোর্টে হাজির হয়ে মামলা মোকাবিলা করতে হবে।”
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, “টিউলিপ আমাদের কাছে বাংলাদেশের নাগরিক। তার জাতীয় পরিচয়পত্র আছে। তার টিআইএন আছে। তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে মামলা করেছি। আমার বিশ্বাস টিউলিপ বাংলাদেশের আইন মেনে মামলা মোকাবিলা করবেন।”
তিনি বলেন, “ব্রিটেনের রাজনীতি কী এতই ভঙ্গুর যে তার দেশের একজনের নামে মামলা হল; আর তাতেই ব্রিটেনের সরকার, রাজনীতি একেবারে ধসে পড়বে, এটা কী হতে পারে।”
টিউলিপের আইনজীবীকে শব্দ চয়নে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মোমেন বলেন, “তারা নিজেদের দেশকে ছোট করছেন। প্রমাণ করছেন ব্রিটেনের রাজনীতি ভঙ্গুর। আমাদের হস্তক্ষেপের কী আছে। দুদকের কার্যপরিধিতে রাজনীতিতে যাওয়ার সুযোগ নেই।”
তার মতে, টিউলিপ গোড়া থেকেই সব জানেন, এ জন্য মন্ত্রীর পদ থেকে তাকে সরে যেতে হয়েছে।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, টিউলিপের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা আছে। তার অনুপস্থিতে বিচার চলবে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে মোমেন বলেন, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ এর বির্তকিত সংসদ নির্বাচন নিয়ে দুদক কাজ করছে।
সোমাবার প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ও দুদক ব্রিটিশ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ তুলে পাঠানো এক উকিল নোটিসে টিউলিপ বলেছেন, তার সুনাম ক্ষুণ্ন করাই তাদের উদ্দেশ্য।
“সেই সঙ্গে যুক্তরাজ্যের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করা, বিশেষ করে তার নিজ নির্বাচনী এলাকা, তার রাজনৈতিক দল এবং দেশসেবার কাজে বিঘ্ন ঘটাতে তারা এসব অভিযোগ তুলেছেন, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।”
যুক্তরাজ্যভিত্তিক আইনি প্রতিষ্ঠান স্টেফেনসন হারউড এলএলপির মাধ্যমে এ নোটিস পাঠিয়েছেন টিউলিপ, যেখানে আগের কোনো চিঠির জবাব না পাওয়ায় অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনাও করা হয়েছে।
গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার পতনের পর শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা করে দুদক। কোনো কোনো মামলায় তার ভাগ্নি ব্রিটিশ এমপি টিউলিপের নামও রয়েছে।
এসব মামলার বিষয়ে দুদক ও টিউলিপের মধ্যে শুরু থেকেই ‘চিঠি চালাচালি’ চলছে। তবে টিউলিপের অভিযোগ, মুহাম্মদ ইউনূস বা দুদক এখন পর্যন্ত তার কোনো চিঠির জবাব দেয়নি।
সবশেষ উকিল নোটিসে টিউলিপ বলেন, গত ১৮ মার্চ ও ১৫ এপ্রিল দুদক চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের চিঠি পাঠানো হয়। এরপর ৪ জুন একটি চিঠি পাঠানো হয় প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসকে।
নোটিশে স্টেফেনসন হারউড বলছে, “এখনও আমরা কিংবা টিউলিপ সিদ্দিক কোনো চিঠির জবাব পাইনি।
“আমরা চিঠিতে স্পষ্ট বলেছি, টিউলিপ সিদ্দিক একটি পরিকল্পিত প্রচারণার শিকার, যার নেপথ্যে রয়েছে প্রধান উপদেষ্টা ও দুদক। আমাদের চিঠিপত্রে এটা দেখিয়েছি, কেন টিউলিপের বিরুদ্ধে ওঠা প্রতিটি অভিযোগ অসত্য।”
৯ জুন চার দিনের সফরে যুক্তরাজ্যে যান প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস। সেই সফরের আগে ইউনূসের সাক্ষাৎ চেয়ে একটি চিঠি পাঠানোর কথা জানান টিউলিপ।
চিঠিতে তিনি ইউনূসকে হাউস অব কমন্সে মধ্যাহ্নভোজ বা বিকালের চা পানের আমন্ত্রণ জানান। প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর সেই চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করলেও টিউলিপকে সাক্ষাৎ দেননি ইউনূস।
সোমবারের উকিল নোটিসে ইউনূসের সাক্ষাৎ না দেওয়ার সিদ্ধান্তের সমালোচনাও করা হয়।
“ইউনূসের লন্ডন সফরের কথা শুনে টিউলিপ তার সঙ্গে সাক্ষাতের উদ্যোগ নেন। তিনি দুদকের অভিযোগের বিষয়ে ইউনূসের সঙ্গে আলোচনা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টা দুঃখজনকভাবে টিউলিপের সেই প্রস্তাব গ্রহণে ব্যর্থ হন।”
বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে টিউলিপের সঙ্গে দেখা না করার যে কারণ ইউনূস তুলে ধরেছেন, তার সমালোচনাও করা হয়েছে নোটিশে।
বলা হয়, “বিবিসি রেডিওর সাক্ষাৎকারে ইউনূসের কাছে সুনির্দিষ্টভাবে দুটি বিষয় জানতে চাওয়া হয়। প্রথমত, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ না পেয়ে তিনি হতাশ কিনা। দ্বিতীয়ত, টিউলিপের সঙ্গে তিনি কেন সাক্ষাত করেননি।
“এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা অবাক করার মত অবস্থান নিয়েছিলেন। তিনি সেদিন বলেছিলেন যে এটি একটি আইনি প্রক্রিয়া এবং তিনি তাতে হস্তক্ষেপ করতে চান না।”
টিউলিপ মনে করেন, তার সঙ্গে বসার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার দুটি কারণ থাকতে পারে।
“প্রথমত, টিউলিপের বিরুদ্ধে প্রধান উপদেষ্টা যেসব অভিযোগ তুলেছেন, সেগুলো মিথ্যা।”
দ্বিতীয় কারণ তুলে ধরতে গিয়ে অধ্যাপক ইউনূসের একাধিক সাক্ষাৎকারকে উদ্ধৃত করা হয়েছে, যেগুলোতে তিনি টিউলিপের বিরুদ্ধে দুর্নীতির নানা অভিযোগ তুলেছিলেন।
নোটিসে বলা হয়, “আমাদের প্রত্যাশা ছিল, যুক্তরাজ্যের নির্বাচিত একজন জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলার আগে প্রধান উপদেষ্টা সঠিকভাবে তথ্য যাচাই করবেন। তার এটাও মাথায় নেওয়া উচিত ছিল, দুদকের পক্ষ থেকে যখন তদন্ত চলছে বলে দাবি করা হচ্ছে, তখন টিউলিপকে নিয়ে প্রকাশ্যে সমালোচনা করাটা সমীচীন নয়।”
টিউলিপ বলছেন, তার সঙ্গে বসে এসব মিথ্যা অভিযোগ নিয়ে খোলামেলা আলোচনার সুযোগ পেয়েছিলেন ইউনূস।
“কিন্তু তিনি সেই সুযোগ গ্রহণ না করে দুদকের আড়ালে থাকার সিদ্ধান্ত নিলেন, যা আমাদের কাছে টিউলিপের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের দ্বিতীয় কারণ বলে মনে হয়েছে।”
দুদক চেয়ারম্যান বরাবর পাঠানো এ নোটিসের একটি অনুলিপি প্রধান উপদেষ্টাকেও পাঠানোর কথা বলা হয়েছে।
নোটিসে টিউলিপ বলেন, “সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এখন প্রধান উপদেষ্টা ও দুদকের এসব মিথ্যা প্রচারণা থেকে সরে দাঁড়ানোর সময় এসেছে।
“দয়া করে এখন এটা নিশ্চিত করুন, যে দুদকের তদন্ত কার্যক্রম বন্ধ হয়েছে। আমরা স্পষ্ট করে বলছি, যদি এই চিঠি এবং আমাদের আগের চিঠিগুলোর যথাযথ জবাব ৩০ জুনের মধ্যে না দেন, তবে টিউলিপ সিদ্দিক যুক্তিসঙ্গতভাবেই বিষয়টির ইতি ঘটেছে বলে ধরে নেবেন।”
আরএস