Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪,

নির্বাচনি মহাসংকটে বিএনপি

আবদুর রহিম

মার্চ ২৫, ২০২৩, ১১:২১ পিএম


নির্বাচনি মহাসংকটে বিএনপি
  • ভোটের আহ্বানের আড়ালে বিএনপিকে দূরে সরিয়ে রাখার ষড়যন্ত্র
  •  ভোটপূর্বে ৫৪ দলের জোট ও তৃণমূল ভাঙনের আশঙ্কা
  •  ইসির আমন্ত্রণকে ফাঁদ হিসেবে দেখছে বিএনপি
  •  বিএনপি অঙ্কে তৃণমূল বিএনপি জটিলতা
  •  বাস্তব চিন্তার অদূরদর্শিতা দেখালে বিএনপির সামনে আরেকটি ২০১৪

 দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মহাসংকটে বিএনপি। দলটির শীর্ষ নেতারা বলছেন, দলীয় সরকারের অধীনে তারা নির্বাচনে যাবে না। অন্যদিকে নির্বাচনে না গেলে জোট ও তৃণমূলে ভাঙন দেখছে বিএনপির বড় একটি অংশ। রাজনৈতিক-বাস্তবচিন্তার অদূরদর্শিতা দেখালে বিএনপির সামনে ২০১৪-এর মতো আরও একটি বোকামির ফলাফল অপেক্ষা করছে— এমন ভাষ্য দলটির জ্যেষ্ঠ নেতাদের। তারা বলছেন, সরকার উপরে উপরে বিএনপিকে নির্বাচনে যাওয়ার জন্য বললেও আসলে তারা বিএনপিকে নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে রাখার চূড়ান্ত পরিকল্পনা করেছে। বিএনপি যাতে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে সে পথ তৈরি করেছে। তাই বিএনপিকে ঘরে-বাইরে সংকট মোকাবিলা এবং একই সঙ্গে দলের ভাঙনও ঠেকাতে হবে। অন্যদিকে রাজনীতিতেও টিকে থাকতে হবে বলে মনে করছেন সিনিয়র নেতারা। এবার যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব আগের মতো নির্বাচন চায় না। 

সব দলের অংশগ্রহণ যাতে নিশ্চিত হয় এমন কথাই জানিয়েছেন তারা। বিএনপি নির্বাচনে না এলে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন থাকবে। প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে। তাই তৃণমূল বিএনপিতে ভাঙন ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গঠন হওয়া ৫৪ দলেও একটা ভাঙনের ইঙ্গিত দেখছে তারা। বিএনপি মনে করছে, সরকার তৃণমূল বিএনপির প্রভাবশালী কিছু নেতাকে আসন দিয়ে ভোটে নিয়ে যাবে। একই সাথে ৫৪ দলের শীর্ষ কিছু নেতাকে কয়েকটি আসন দিয়ে শেষ সময়ে নির্বাচন করাবে। এতে করে পশ্চিমা দেশগুলো যে অংশগ্রহণের কথা বলেছে, সেটি পূর্ণ হয়ে যাবে, ভোটে গ্রহণযোগ্যতা থাকবে। এমন পরিস্থিতিতে বিএনপিকে ভোটের প্রস্তুতি, জাতীয় সরকার গঠনের চেষ্টা এবং যেকোনো মূল্যে সরকারের অধীনে ভোট ঠেকিয়ে দলের অবস্থান মজবুত রাখতে নীতিনির্ধারণী ফোরামকে চতুরতা দেখাতে বলেছেন বিএনপির প্রবীণ নেতারা।

বিএনপির জ্যেষ্ঠ দুই নেতা আমার সংবাদকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হয়ে বলেন, বর্তমান শেখ হাসিনা সরকার বিএনপিকে মুখে মুখে ভোটে অংশগ্রহণের কথা বলছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারা চাচ্ছে বিএনপি যাতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে। এ জন্য তারা বিএনপির তৃণমূলে ভাঙনের চূড়ান্ত চেষ্টা করে যাচ্ছে। একই সঙ্গে নির্বাচনকে সামনে রেখে ৫৪ দলের কিছু নেতাকেও লোভনীয় প্রস্তাব দিয়ে ভোটে নিয়ে যেতে পারে। এ জন্য সমপ্রতি নাজমুল হুদার তৃণমূল বিএনপিকে নিবন্ধন দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে ইসি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছিলেন, রাজনৈতিক সমঝোতা কিংবা সংলাপের জন্য কোনো উদ্যোগও নেয়া হবে না। এমন ঘোষণার মধ্যে গত বৃহস্পতিবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম ও জোটের নেতাদের ইসিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়। এতে করে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বকে দেখাতে চায় যে, তারা বিএনপিকে গুরুত্ব দিয়েছে। কিন্তু বিএনপি নিয়ম বহির্ভূত আচরণ করেছে। সরকারের এমন আচরণগুলোতে স্পষ্ট যে বড় ষড়যন্ত্রের ফাঁদ পেতেছে বিএনপিকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে।

আগামী নির্বাচনে দলে ভাঙন বা কোনো ষড়যন্ত্র রয়েছে কি-না জানতে চাইলে স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান আমার সংবাদকে  বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে ভোট ছাড়া ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশকে ধ্বংস করার চক্রান্তে লিপ্ত সরকার।  তারা অনেক কূটচাল করে যাচ্ছে। এটি জনগণ হতে দেবে না, আগামী নির্বাচন হতে দেয়া হবে না, সবাইকে এক থাকতে হবে।’ বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক হুইপ জয়নুল আবেদীন ফারুক আমার সংবাদকে বলেন, ‘সরকার আমাদের দল ও জোট ভাঙার ষড়যন্ত্র করছে। তবে আমাদের নেতা তারেক রহমান যে পলিসিতে রয়েছেন, তাতে সরকারের পরিকল্পনা সফল হবে না। অবশ্যই তারেক রহমান রহমান সফল হবে। সরকারের ষড়যন্ত্র ভেসে যাবে। বিএনপি অবশ্যই জনগণের সমর্থনে আবারো নেতৃত্ব দেবে।’ 

ইসির আমন্ত্রণকে ফাঁদ হিসেবে দেখছে বিএনপি : গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে নির্বাচন কমিশন নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করেছিল। তখন ৩৯টি নিবন্ধিত দলের মধ্যে ২৭টি দল সংলাপে অংশ নিয়েছিল। বিএনপিসহ ১২ দল সেই সংলাপের আমন্ত্রণ নাকচ করেছিল। তখন থেকেই ইসির প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপনে কূটনৈতিক অঙ্গন থেকে চাপ আসে। ইসি কোনো এক অদৃশ্য ইশারায় জোর দিয়ে বলেছিল কাউকে ভোটে আনা ইসির দায়িত্ব নয়, রাজনৈতিক আর কোনো সংলাপও করবে না এমন দৃঢ়তার মধ্যেও নির্বাচন সামনে রেখে সংলাপের আমন্ত্রণ জানিয়ে বিএনপিকে গত বৃহস্পতিবার ফের চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন-ইসি। এ নিয়ে বিএনপি ও দলটির বুদ্ধিজীবী মহল মনে করছে, এ মুহূর্তে সরকার বিএনপিকে আলোচনায় ডাকলে সাড়া মিলবে না। সে জন্য নির্বাচন কমিশন আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে। বিএনপি আলোচনার মাধ্যমে সমাধান চায় না, এ বিষয় বিদেশি কূটনীতিকদের হয়তো দেখাতে চায় নির্বাচন কমিশন ও সরকার। 

বিএনপি মনে করছে, সরকারবিরোধী চলমান আন্দোলনে সাধারণ মানুষের সম্পৃক্ততা বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে সরকার বা নির্বাচন কমিশনের কোনো ফাঁদে পড়তে চান না তারা। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত বর্তমান নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কোনো আলোচনা নয়। এ নিয়ে  দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘সংলাপে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তার দল এ সংলাপে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে না। কারণ, বিএনপি নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করছে। এ বিষয়ে ইসির কিছু করার নেই। এটি সরকারের বিষয়। বিএনপি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করার সংলাপ ছাড়া অন্য কোনো আলোচনায় অংশ নেবে না। নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে রাজনৈতিক দলকে সংলাপের চিঠি দেয়া সরকারের নতুন কৌশল মাত্র।’

বিএনপি অঙ্কে তৃণমূল বিএনপি জটিলতা : বিএনপি শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাবে না। এতে নির্বাচনও গ্রহণযোগ্য হবে না। এমন অঙ্ক কষে বসে থাকলেও তৃণমূল বিএনপি নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি আদালতের নির্দেশে নাজমুল হুদার তৃণমূল বিএনপিকে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে ইসি। দলটির প্রতীক ‘সোনালি আঁশ’। নিবন্ধন পাওয়ার পর ২০ ফেব্রুয়ারি দলটির চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এরপর নাজমুল হুদার স্ত্রী সিগমা হুদা জানিয়েছেন, ‘বড় মেয়ে অন্তরা ইতোমধ্যে রাজনীতির ময়দানে আছে। প্রয়োজনে সে বাবার দলের দায়িত্ব নেবে। এত লড়াই-সংগ্রামের পর যখন তৃণমূল বিএনপি নিবন্ধন পেয়েছে, এই দল চলবে।’ এ নিয়ে বিএনপি মনে করছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে সরকারের ওপর দেশি-বিদেশি চাপ রয়েছে। 

তাদের  আশঙ্কা বিএনপি না গেলে তৃণমূল বিএনপিকে নির্বাচনে নিয়ে আসতে পারে সরকার। দলটির কিছু নেতাকে চাপ দিয়ে বা লোভ দেখিয়ে তারা নির্বাচনে নিতে পারে। প্রয়োজনে কিছু আসনও ছাড় দেবে। তবে সরকারের অপচেষ্টা রোধে বিএনপির নেতারা তীক্ষ নজর রাখছে ‘তৃণমূল বিএনপি নেতাদের ওপর।’ তবে এবার তৃণমূল থেকে দল ভাঙনের বড় আশঙ্কা রয়েছে বিএনপিতে। দলের অস্তিত্ব বাঁচাতে ভাঙন রোধে একাদশের মতো নির্বাচনে যেতে পারে বলেও ধারণা দলটির বড় একটি অংশের।

Link copied!