ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা শনিবার, ০২ আগস্ট, ২০২৫
Amar Sangbad

বেসামাল এবি ব্যাংক

রেদওয়ানুল হক

মার্চ ২৭, ২০২৩, ১১:৩৫ পিএম

বেসামাল এবি ব্যাংক
  • সীমার ১০ শতাংশ অতিরিক্ত ঋণ বিতরণ
  • প্রতি মাসেই বাড়ছে আমানত ও ঋণের ব্যবধান
  • পাঁচ হাজার কোটি টাকা ডেফারেল সুবিধা নিয়ে এড়িয়েছে মূলধন ঘাটতি
  • ফেসভ্যালুর নিচে নেমেছে শেয়ার মূল্য

 প্রয়োজনীয় আমানত সংগ্রহ ও এর বিপরীতে ঋণ বিতরণের সীমা মেনে চলার ক্ষেত্রে ভারসাম্য হারিয়েছে বেসরকারি খাতের আরব বাংলাদেশ-এবি ব্যাংক লিমিটেড। কয়েক মাস ধরে ব্যাংকটি সীমার চেয়ে বেশি পরিমাণে ঋণ বিতরণ করছে। ব্যাংকটির ইসলামী উউন্ডো এ ক্ষেত্রে বেশি আগ্রাসী। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নমনীয় নীতির কারণে ব্যাংকটি মাসের পর মাস সীমা লঙ্ঘন করে যাচ্ছে। একই সাথে প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণ না করে ডেফারেল নামক বিশেষ সুবিধা নিয়ে মূলধন ঘাটতি আড়াল করেছে এবি ব্যাংক। এতে লোকসানে থাকা সত্ত্বেও লাভ দেখাতে পারছে ব্যাংকটি। ২০২১ সালে বিনিয়োগকারীদের লভাংশও দিয়েছে। তবে সম্প্রতি ব্যাংকের তারল্য পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাওয়ায় পুঁজিবাজারে ব্যাংকটির শেয়ার মূল্য ফেসভ্যালুর নিচে নেমে গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একাধিক প্রতিবেদন ও সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্যে এমন চিত্র উঠে এসেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংকটি হয়তো ঋণ বিতরণে আগ্রাসী হয়ে উঠছে অথবা প্রয়োজনীয় আমানত সংগ্রহে ব্যর্থ হচ্ছে। এমন ঘটনা হঠাৎ ঘটলে উদ্বেগের কারণ থাকে না। কিন্তু ব্যাংকটি নিয়মিত সীমা অতিক্রম করে যাচ্ছে এবং তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে শিগগিরই জোরালো পদক্ষেপ না নিলে গ্রাহকের আমানত ঝুঁকিতে পড়বে এবং ব্যাংকটিতে তীব্র তারল্য সংকট তৈরি হবে বলে মত বিশ্লেষকদের। যা পুরো ব্যাংক খাতে প্রভাব তৈরি করতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, প্রচলিত ধারার ব্যাংক ১০০ টাকার মধ্যে ৮৭ এবং ইসলামী ধারার ব্যাংক ৯২ টাকা ঋণ দিতে পারে। এটিকে ব্যাংকিং পরিভাষায় অ্যাডভান্স ডিপোজিট রেশিও (এডিআর) বা ঋণ-আমানত অনুপাত সীমা বলা হয়। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, জানুয়ারিতে প্রচলিত ধারার এবি ব্যাংকের এডিআর দাঁড়িয়েছে ৯৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ। অর্থাৎ সীমার চেয়ে প্রায় ১০ শতাংশ বেশি ঋণ বিতরণ হয়েছে। ব্যাংকটির ইসলামী উইন্ডোতে এটি আরও বেশি; ১০৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ। আগের মাস ডিসেম্বরেও ব্যাংকটির এডিআর ছিল সীমার চেয়ে বেশি ছিল; ৯২ দশমিক ২৬ শতাংশ। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে সীমা লঙ্ঘনের হার চার শতাংশ বেড়েছে।

এ বিষয়ে জানতে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক আফজালকে ফোন করলে তিনি লিখিত প্রশ্ন পাঠাতে বলেন। পরে প্রশ্ন পাঠালে তিনি উত্তর দেননি। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক জানান, ‘দীর্ঘদিন কোনো ব্যাংক এডিআর সীমার বাইরে থাকলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংক খাতে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলোকে ঘুরে দাঁড়াতে কিছু সময় দেয়া হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ব্যাংকগুলোকে নির্ধারিত আইনে ঋণ বা বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে টানা পাঁচবার এডিআর সমন্বয়ের সময়সীমা বাড়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপরও অনেক ব্যাংক এটি সমন্বয় করতে পারেনি। এমন পরিস্থিতিতে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহে গতিশীলতা আনা, ব্যাংক খাতের সার্বিক তারল্য পরিস্থিতির উন্নয়নে এডিআর ২ শতাংশ বাড়িয়ে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। 

এরপরও কিছু ব্যাংক সীমা লঙ্ঘন করে আমানতকারীদের জন্য ঝুঁকি তৈরি করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০২২ সাল শেষে দেশের ১১টি ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে রয়েছে। এ ছাড়া কিছু ব্যাংক মুলধন ঘাটতি ঢাকতে ডেফারেল নামক বিশেষ সুবিধা নিয়েছে। সুযোগ নেয়া ব্যাংকগুলোর মধ্যে অন্যতম বেসরকারি খাতের এবি ব্যাংক লিমিটেড। ঋণের বিপরীতে প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণের বিধান কৌশলে এড়িয়ে গেছে ব্যাংকটি। ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটি মূলধন ঘাটতি তালিকায় ১৬১ কোটি টাকা উদ্বৃত্ত রয়েছে। কিন্তু প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে পাঁচ হাজার ১১৭ কোটি টাকা। যেটি রাখার জন্য ২০২৯ সাল পর্যন্ত সময় নিয়েছে ব্যাংকটি। অর্থাৎ কেন্দ্রীয় ব্যাংক এমন সুবিধা না দিলে বড় মূলধন ঘাটতিতে পড়ত এবি ব্যাংক। এতে কাগজে-কলমে মূলধন ঘাটতি থেকে সাময়িক মুক্তি পেলেও দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

ব্যাংকটির এমন কৌশলের বিষয়ে গত সেপ্টেম্বরে ‘লাভ দেখাচ্ছে লোকসানি ব্যাংক’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করে দৈনিক আমার সংবাদ। এতে সচেতন বিনিয়োগকারীরা ব্যাংকটির শেয়ার কিনতে অনাগ্রহ দেখায়। ফলে ব্যাংকটির শেয়ার মূল্য কমতে শুরু করে। বর্তমানে শেয়ারমূল্য ফেসভ্যালুর নিচে অবস্থান করছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ— ডিএসইর তথ্যমতে, গত ৫২ সপ্তাহে ব্যাংকটির শেয়ার দর ১২ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ৯ টাকা ৮০ পয়সা পর্যন্ত ওঠানামা করেছে। গত বৃহস্পতিবার দিন শেষে ব্যাংকটির শেয়ার মূল্য ছিল ৯ টাকা ৯০ পয়সা। যেখানে শেয়ারের ফেসভ্যালু ১০ টাকা। ২০২২ সালের প্রথম ৯ মাসে ব্যাংকটি শেয়ার প্রতি ৫৩ পয়সা মুনাফা দেখিয়েছে। ডেফারেল সুুবিধার অনুকূলে ঘাটতি সত্ত্বেও মুনাফা দেখাতে পেরেছে ব্যাংকটি। অর্থনীতিবিদ ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ আমার সংবাদকে বলেন, ‘বিনিয়োগকারীদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে বাংলাদেশ ব্যাংক এমন সুযোগ দিচ্ছে। 

কারণ কোনো ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে থাকলে বিনিয়োগকারীদের লভাংশ দিতে পারে না। তবে এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে ব্যাংকটি সমস্যায় পড়বে।’ নাম প্রকাশ না করে ব্যাংকের একজন বিনিয়োগকারী আমার সংবাদকে বলেন, ‘আইনের মারপ্যাঁচে ঘাততিতে থেকেও লভাংশ ঘোষণা করার বিষয়টি সময়ের ব্যবধানে বিনিয়োগকারীদের নজরে আসছে। আমানত ও বিনিয়োগের ব্যবধান বৃদ্ধির ফলে ব্যাংকটিতে ইতোমধ্যে তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে। এখন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা যদি শেয়ার বিক্রি শুরু করে তাহলে নতুন সংকট তৈরি হবে। এতে ব্যাংক ও আমানতকারী সবাই ক্ষতির মুখোমুখি হবে। তাই পরিস্থিতি উত্তরণে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে।’   

তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এবি ব্যাংকের মতো ধারাবাহিক সীমা অতিক্রম করে যাচ্ছে আরও কয়েকটি ব্যাংক। এর মধ্যে ন্যাশনাল ব্যাংকের এডিআর ৯৮ দশমিক ২৩ শতাংশ। যা আগের মাস ডিসেম্বরে ছিল ৯৫ দশমিক ৬৬। ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মেহমুদ হোসেন আমার সংবাদকে বলেন, ‘গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আমরা বেশ ভালো অবস্থানে ছিলাম। এরপর গুজব ও নেতিবাচক প্রচারণা শুরু হলে অন্যদের তুলনায় আমরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হই। বর্তমানে আমাদের ঋণ বিতরণ ঠিক আছে। কিন্তু আমানত পরিস্থিতি কিছুটা খারাপ অবস্থা বিরাজ করছে যা শিগগিরই ঠিক হয়ে যাবে বলে আশা করছি।’ 

রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকে ডিসেম্বর ৮৮ দশমিক ৫৮ থেকে বেড়ে জানুয়ারিতে হয়েছে ৯১ দশমিক ১৭। আইএফআইসি ব্যাংক ডিসেম্বরে কিছুটা বেশি থাকলেও জানুয়ারিতে তা কমাতে ব্যর্থ হয়েছে। ডিসেম্বরে ছিল ৮৭ দশমিক ৪৭; আর জানুয়ারিতে এটি ৮৭ দশমিক ৪৮ হয়েছে। এ ছাড়া কমার্স ব্যাংকের ইসলামী উইন্ডো বেশি আগ্রাসী হয়ে উঠেছে। ডিসেম্বরে ৯৩ দশমিক ৯৬ থেকে জানুয়ারিতে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩৩ দশমিক ২৬ শতাংশ। ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোতেও একই পরিস্থিতি চলছে। এক্সিম ব্যাংকে ডিসেম্বরে ছিল ৯৬ দশমিক ৫৩; জানুয়ারিতে ১০০ দশমিক  ২৮। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে ডিসেম্বরে ছিল ১০৩ দশমিক ৪৫; জানুয়ারিতে ১০৪ দশমিক ৫৪, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকে ৯৯ দশমিক ৯৭ থেকে বেড়ে ১০২ দশমিক ২৭, স্টান্ডার্ড ব্যাংকের ডিসেম্বরে ছিল ৯৩ দশমিক ৬৪; জানুয়ারিতে হয়েছে ৯৬ দশমিক ৮১, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকে ডিসেম্বরে ৯৩ দশমিক ৯৩ থেকে বেড়ে জানুয়ারিতে হয়েছে ৯৬ দশমিক ৮১, ইউনিয়ন ব্যাংকে জানুয়ারিতে এডিআর ১০০ দশমিক ৪১; যা ডিসেম্বরে ছিল ৯৯ দশমিক ৬৪।  

নাম প্রকাশ না করে একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমডি জানান, ঋণ দেয়ার যে সীমা বেঁধে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক, তা যথেষ্ট বৈশ্বিক মানের। সেই সীমা অতিক্রম করা ঠিক নয়। এতে ব্যাংক খাতে ঝুঁকি তৈরি করবে। বিশেষ করে আমানতকারীরা বেশি ঝুঁকিতে থাকবেন। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে কয়েকটি ব্যাংক ও নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে পারছে না। অর্থনীতিবিদ ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘আমানতের বিপরীতে সীমার বাইরে ঋণ দিলে ঋণশৃঙ্খলা বিঘ্নিত হয়। এমন চলতে থাকলে ব্যাংকের পাশাপাশি আমানতকারীদেরও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপ জরুরি।’

Link copied!