আমার সংবাদ ডেস্ক
জুলাই ৩১, ২০২৫, ০৩:৪০ পিএম
নারীর শরীরের গন্ধ পুরুষের আচরণে প্রভাব ফেলতে পারে, এমনকি তা তাদের মানসিক চাপও কমাতে পারে—জানা গেছে জাপানে সম্পন্ন হওয়া এক চমকপ্রদ গবেষণায়।
তবে এই প্রভাব সব সময় নয়, বরং নারীর মাসিক চক্রের নির্দিষ্ট সময়ে বেশি লক্ষ করা যায়, যখন গন্ধটি পুরুষের কাছে বিশেষভাবে আকর্ষণীয় মনে হয়। গবেষণায় অংশ নেওয়া পুরুষরা তখন নারীর মুখও তুলনামূলকভাবে বেশি আকর্ষণীয় ও নারীত্বপূর্ণ মনে করেছেন।
ডিম্বাণু নির্গমনের সময় গন্ধে আকর্ষণ বাড়ে
জীববিজ্ঞানবিষয়ক জার্নাল Cell-এ প্রকাশিত এই গবেষণায় বলা হয়েছে, নারীর শরীরের গন্ধ মাসিক চক্র অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়। ডিম্বাণু নির্গমনের সময়, অর্থাৎ গর্ভধারণের সম্ভাবনা যখন সর্বোচ্চ, তখন নারীর বগলের গন্ধ পুরুষের কাছে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয় মনে হয়।
টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে নারীর ঘামে উপস্থিত তিনটি রাসায়নিক যৌগ শনাক্ত করেছেন, যেগুলোর মাত্রা মাসিক চক্রের সঙ্গে ওঠানামা করে এবং ডিম্বাণু নির্গমনের সময়ে বেড়ে যায়। এই যৌগগুলো বগলের ঘামে মিশলে পুরুষরা গন্ধটিকে বেশি পছন্দ করেন। সেই সঙ্গে তাঁরা একই নারীর চেহারাকেও বেশি আকর্ষণীয় ও নারীত্বপূর্ণ মনে করেন।
চাপ কমায় ‘ভালোবাসার গন্ধ’?
গবেষণায় দেখা গেছে, নারীর এই গন্ধ পুরুষদের মানসিক চাপ হ্রাসেও ভূমিকা রাখে। যেসব পুরুষ এই গন্ধ পেয়েছেন, তাঁদের লালায় মানসিক চাপের একটি রাসায়নিক চিহ্ন (কর্টিসল) তুলনামূলকভাবে কম পাওয়া গেছে।
গবেষণার অন্যতম প্রধান বিজ্ঞানী, টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাপ্লায়েড বায়োলজিকাল কেমিস্ট্রির অধ্যাপক কাজুশিগে তোহারা বলেন, “এই ফলাফল ইঙ্গিত দেয়, নারীর শরীরের গন্ধ পুরুষ-নারীর পারস্পরিক যোগাযোগে একটি ভূমিকা রাখে।”
ফেরোমোন, না ফেরোমোন-সদৃশ?
প্রাণিজগতে গন্ধভিত্তিক জৈব বার্তা হিসেবে ‘ফেরোমোন’-এর ব্যবহার খুব সাধারণ বিষয়। পোকামাকড় থেকে শুরু করে স্তন্যপায়ী প্রাণীও প্রজনন, এলাকা চিহ্নিতকরণ বা সামাজিক বন্ধনের জন্য এগুলো ব্যবহার করে। কিন্তু মানুষের ক্ষেত্রে ফেরোমোন আদৌ কাজ করে কি না—তা নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে এখনো মতভেদ আছে।
পুরোনো গবেষণায় পুরুষের ঘামে ‘অ্যান্ড্রোস্টাডিয়েনোন’ এবং নারীদের প্রস্রাবে থাকা ‘এসট্রাটেট্রায়েনল’ যৌগের প্রভাব নিয়ে আলোচনা থাকলেও এসব গবেষণা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছিল গন্ধ শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া ও অংশগ্রহণকারীদের পরিচ্ছন্নতা নিয়ে।
জাপানের এই গবেষণায় সুনির্দিষ্ট রাসায়নিক মিশ্রণ নির্ধারণ করাই ছিল সবচেয়ে কঠিন কাজ। গবেষণার প্রধান লেখক নোজোমি ওহগি জানান, “২০ জনের বেশি নারীর মাসিক চক্রের নির্দিষ্ট সময়ে বগলের ঘামের নমুনা সংগ্রহ করতে গিয়ে আমাদের কঠিন পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “প্রত্যেক অংশগ্রহণকারীর শরীরের তাপমাত্রা ও অন্যান্য শারীরবৃত্তীয় উপাদান নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করে পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে একেকজনের ক্ষেত্রে প্রায় এক মাস সময় লেগেছে।”
নিশ্চিত সিদ্ধান্ত নয়
তবে অধ্যাপক তোহারা এখনই এই তিনটি যৌগকে ‘মানব-ফেরোমোন’ বলে নিশ্চিত করতে রাজি নন। তাঁর মতে, “আমরা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি না, এগুলো আসলেই মানব-ফেরোমোন কি না। তবে এগুলো ফেরোমোন-সদৃশ বৈশিষ্ট্য রাখে।”
আরও বৈচিত্র্যপূর্ণ অংশগ্রহণকারীদের নিয়ে গবেষণা এবং এই যৌগগুলো মানুষের মস্তিষ্কের আবেগ-অনুভূতিসংক্রান্ত অঞ্চলে কীভাবে প্রভাব ফেলে, তা জানতেই এখন গবেষকেরা পরবর্তী ধাপে এগোতে চান।
ইএইচ