Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪,

ঈদে নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা

শঙ্কায় উত্তরবঙ্গের যাত্রীরা

মো. ইমরান খান

মো. ইমরান খান

এপ্রিল ৩, ২০২৪, ১২:৪৪ এএম


শঙ্কায় উত্তরবঙ্গের যাত্রীরা
  • সড়ক ও নৌপথে স্বস্তি রেলপথে চাপ ও সংকট  
  • এবার ঈদুল ফিতরে ঢাকা ছাড়ছে দেড় কোটি মানুষ
  • নৌপথে সাড়ে ২২ লাখ সড়কপথে প্রায় ৯০ লাখ রেলে যাবে প্রায় ১৮ লাখ

ঈদ এলেই নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা শুরু করে রাজধানীর কর্মব্যস্ত শ্রমজীবী মানুষরা। এটা চিরায়তই। প্রতিবছরই ঈদযাত্রায় পরিবহন সংকটসহ নানা ভোগান্তিতে পড়তে হয় ঘরমুখো মানুষদের। তবে এবার এই ভোগান্তি অন্যান্য দিকে কিছুটা কম হলেও উত্তরবঙ্গের যাত্রীরা রয়েছেন শঙ্কায়।

প্রতি ঈদুল ফিতরে প্রায় এক কোটি ৫০ লাখ মানুষ ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জসহ পার্শ্ববর্তী এলাকা ছেড়ে যায়। প্রতিবার ২০ রমজানের পর থেকে রাজধানীর বাস টার্মিনাল, রেলস্টেশন ও লঞ্চ টার্মিনালগুলোতে ঘরমুখো মানুষের চাপ দেখা গেলেও এবার তার সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র চোখে পড়ছে। রাজধানীর সদরঘাট ঘুরে দেখা যায়,  স্বাভাবিক সময়ের মতো সময় কাটাচ্ছেন লঞ্চের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা; নেই যাত্রীর চাপ। 
এ বিষয়ে জানতে চাইলে লঞ্চ কর্মচারীরা আমার সংবাদকে বলেন, এবার এখনো আমরা যাত্রীদের তেমন কোনো চাপ দেখতে পাচ্ছি না। আগের ঈদগুলোতে ১০-১২ দিন আগে থেকেই যাত্রীদের আলাদা একটা চাপ থাকত; এবার সেটা নেই। আশা করি ২৭ রমজানের পর থেকে চাপ বাড়বে। 

আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে এ বছরই রাজধানীর সবচেয়ে কমসংখ্যক মানুষ নৌপথে বাড়ি যাবে। এই সংখ্যা আনুমানিক ২২ লাখ ৫০ হাজার, যা ঢাকার মোট ঈদযাত্রীর ১৫ শতাংশ। পদ্মা সেতু চালুর আগে এই সংখ্যা ছিল আনুমানিক ৩৭ লাখ। শিপিং অ্যান্ড কমিউনিকেশন রিপোর্টার্স ফোরামের (এসসিআরএফ) ঈদ-পূর্ব খাতভিত্তিক পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

সার্বিক পরিস্থিতি জানতে চাওয়া হলে সদরঘাট নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির অফিসার ইনচার্জ আবুল কালাম আমার সংবাদকে জানান, পদ্মা সেতু হওয়ায় লঞ্চগুলোতে ভালো একটা প্রভাব পড়েছে, এ কারণে যাত্রীদের তেমন একটা চাপ নেই। সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি জানান, যাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সব প্রস্তুতি রয়েছে।

একই চিত্র দেখা যায় রাজধানীর বাস টার্মিনালগুলোতেও। ঘরমুখো যাত্রীদের তেমন কোনো চাপ নেই, স্বাভাবিক সময়ের মতোই চলছে বাস সার্ভিস। রাজধানীর সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের টিকিট কাউন্টারের কর্মচারী সোহাগ আমার সংবাদকে জানান, ঈদের আগে সাধারণ মানুষের যে একটা চাপ থাকে, এবার সেটি দেখছি না। তবে ৪ এপ্রিলের পর চাপ কিছুটা বাড়তে পারে।

এর মধ্যে পরিচিত বাসগুলোর অগ্রিম টিকিট বিক্রি প্রায়ই শেষ। বাসপ্রতি দু-একটি সিট বাকি আছে। তবে অজনপ্রিয় বাসগুলোর অনেক টিকিট এখনও অবিক্রীত রয়ে গেছে। এসব বাস ঈদের আগে ছুটি পাওয়া বিভিন্ন গার্মেন্ট শ্রমিক ও অন্যান্য স্বল্প আয়ের মানুষদের যাত্রা শুরুর অপেক্ষায় রয়েছে।
নাগরিক সংগঠন নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির ঈদপূর্ব পর্যবেক্ষণ তথ্যমতে, ঢাকা থেকে  ঈদযাত্রীর ৬০ শতাংশ যাবে সড়কপথে। এ হিসেবে সড়কপথের যাত্রীসংখ্যা প্রায় ৯০ লাখ। দুবছর আগে ঢাকার ঈদযাত্রীদের ২৫ শতাংশ (৩৭ লাখ ৫০ হাজার) নৌপথ ব্যবহার করতেন। সড়ক ও রেলপথে যাতায়াত করতেন যথাক্রমে ৫৫ ও ২০ শতাংশ মানুষ। 

এদিকে ঈদের এক সপ্তাহেরও বেশি বাকি থাকতেই ঢাকার কমলাপুর স্টেশনে ট্রেনযাত্রীদের ভিড় বেড়েছে। আজহার মাহমুদ ঢাকায় শিক্ষকতা করেন ঈদের ভিড় বাড়ার আগে পরিবার নিয়ে ফিরছেন বাড়িতে। তিনি আমার সংবাদকে জানান, ঈদের আগে মানুষের ভিড় থাকার কারণে পরিবার নিয়ে বাড়ি ফিরতে অনেক কষ্ট হয়, তাই আগেই চলে যাচ্ছি।

উত্তরবঙ্গের একাধিক যাত্রীর সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, পর্যাপ্ত ট্রেন সংকট থাকার কারণে প্রতিবারই ভোগান্তিতে পড়তে হয় তাদের। তাই এবার অনেকেই স্বস্তির জন্য আগেই ঢাকা ছাড়ছেন।

গত ২৪ মার্চ থেকে এবার ঈদযাত্রার টিকিট বিক্রি শুরু হয়। প্রথম দিন দেয়া হয় ৩ এপ্রিলের টিকিট। রোজার শুরু থেকে ট্রেনের টিকিট সহজলভ্য হলেও সেদিন থেকে ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়। এবার কোটা ছাড়া বাকি সব টিকিট অনলাইনে ছাড়া হয়। সকাল ৮টায় পশ্চিমাঞ্চলে এবং বেলা ২টায় পূর্বাঞ্চলের টিকিট বিক্রি শুরু হয়। প্রথম দিনে কিছু টিকিট কয়েক ঘণ্টা থাকলেও এরপর থেকে দুই মিনিটের মধ্যেই সব বিক্রি হয়ে যায়। এবার ঈদের আগে সারা দেশের বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী আন্তঃনগর ট্রেনের ৩৩ হাজার ৫০০টি টিকিট বিক্রির কথা জানানো হয়েছে। 

ঈদ উপলক্ষে সারা দেশের বিভিন্ন রুটে আটজোড়া বিশেষ ট্রেন চালানো হবে বলে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। এবারের ঈদে দেশের সব রেলপথে যাওয়া-আসা মিলিয়ে মোট ট্রেন চলবে ৬৭ জোড়া। আসন্ন ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের চলাচলের সুবিধার্থে কোনো ধরনের অনিয়ম, টিকিট কালোবাজারি, অতিরিক্ত যাত্রী বহন ও নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত আদায়সহ সার্বিক বিষয় তদারকির জন্য কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশন (বিআরটিসি)। 

বিআরটিসির চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে রাজধানীর মতিঝিলে অবস্থিত বিআরটিসির প্রধান কার্যালয়ের ‘ঈদ স্পেশাল সার্ভিস’ উপলক্ষে আয়োজিত এক সভা থেকে এই কমিটি গঠন করা হয়।  সভা থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, ঈদ উপলক্ষে স্পেশাল বাস সার্ভিস পরিচালনার  লক্ষ্যে কারিগরি টিম গঠন ও ডিউটি চার্ট প্রণয়ন, বাসের কারিগরি ফিটনেস নিশ্চিত করতে ডিপো ম্যানেজারদের নির্দেশনা প্রদান, ঈদ স্পেশাল সার্ভিসে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদানের জন্য সব বিভাগীয় পুলিশ কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে চিঠি দেয়া।
 

Link copied!