Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ০৪ মে, ২০২৪,

ভোটের মাঠ ছাড়েননি মন্ত্রী-এমপির স্বজনরা

দলীয় সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন

সৈয়দ সাইফুল ইসলাম

এপ্রিল ২৩, ২০২৪, ১২:৩৯ এএম


দলীয় সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন
  • প্রথম ধাপের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে এক প্রতিমন্ত্রীর শ্যালক প্রার্থিতা থেকে সরে দাঁড়ান
  • অন্য মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনরা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়, দল কী ব্যবস্থা নেয় অপেক্ষায় তৃণমূল আওয়ামী লীগ

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপের বৈধ প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন ছিল গতকাল সোমবার। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশে তার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলটির সাধারণ ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়— মন্ত্রী-এমপিদের পরিবারের সদস্য ও নিকটাত্মীয়রা উপজেলা নির্বাচন করতে পারবেন না। যারা ইতোমধ্যে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তাদেরকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে হবে। দলের এমন সিদ্ধান্ত বৈঠকের পরপরই সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও এমপিদের (যাদের স্বজনরা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন) জানিয়ে দেয়া হয়। 

দলীয় সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়ার পর নিয়মিত সংবাদ সম্মেলন করে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ানোর তাগিদ দেন। সিদ্ধান্ত না মানলে পরিণতি কী হতে পারে সে সম্পর্কেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয় দলের পক্ষ থেকে। কিন্তু এতে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের এ সিদ্ধান্ত পাত্তাই দেয়নি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী-এমপি ও তাদের স্বজনরা; বরং কেউ কেউ কেন প্রার্থী থাকতে হবে, কেন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে তার সপক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপের তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় পার হওয়ার পর গতকাল সন্ধ্যায় এক প্রতিমন্ত্রীর শ্যালক ছাড়া অন্য মন্ত্রী-এমপিদের স্বজন ও পরিবারের সদস্যের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের খবর পাওয়া যায়নি। 

আমার সংবাদের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে বেশ কয়েকটি উপজেলায় খবর নেয়া হয়েছে গতকাল। খোঁজ নেয়া ওইসব উপজেলার প্রার্থীরা প্রার্থিতা থেকে সরে দাঁড়াননি। খবর নিয়ে জানা গেছে, ইতোমধ্যে মন্ত্রী-এমপিদের প্রায় অর্ধশত স্বজন নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। প্রথম ধাপে অন্তত ১৫ জন স্বজন প্রার্থী হয়েছেন। এদের মধ্যে মাত্র একজন প্রতিমন্ত্রীর স্বজন প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। দলীয় নির্দশনার পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে অপহরণের প্রাথমিক প্রমাণ পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। নির্বাচন কমিশনও এমন প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়ার পর তাকে তলব করে। ফলে তিনি নানা দিক বিবেচনা করে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন। এ ছাড়া এমপি শাহাজান খানের ছেলে, এমপি আলী আজগর টগরের আপন ভাই, এমপি একরামুল করিম চৌধুরীর ছেলেসহ যারা প্রথম ধাপে প্রার্থী— তারা কেউ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্দেশনা আমলে নেননি। দলের সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশ অমান্য করে তারা ভোটের মাঠে রয়ে গেছেন। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অমান্যকারী এসব আওয়ামী লীগ এমপি ও মন্ত্রী আসলে কার নির্দেশে চলেন, এমন প্রশ্ন  তৃণমূলে। তৃণমূল নেতাকর্মীরা মনে করছেন, যারা মন্ত্রী-এমপি ও নেতা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশনা মানেন না, তাদের কাছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব নিরাপদ নয়, তৃণমূল এমন নেতৃত্বের বিষয়ে দলীয় কঠোর ব্যবস্থা চায়।  

গতকাল আমার সংবাদের কুষ্টিয়া প্রতিনিধি নজরুল ইসলাম মুকুল জানিয়েছেন, কুষ্টিয়া সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে তিনজন মনোনয়নপত্র জমা দেন। এরা হলেন— বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কুষ্টিয়া শহর শাখার সাধারণ সম্পাদক বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাতীয় সংসদ কুষ্টিয়া-৩ সদর আসনের সংসদ সদস্য কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফের চাচাতো ভাই আতাউর রহমান আতা, জামায়াতের কুষ্টিয়ার সাধারণ সম্পাদক সুজা উদ্দিন জোয়ার্দ্দার ও এবি পার্টির আহাদ আল মামুন। দলীয় নির্দেশনা থাকলেও আতাউর রহমান আতা তার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেননি। এদিকে, জামায়াতে প্রার্থী সুজা উদ্দিন জোয়ার্দ্দার তার দলের সিদ্ধান্তে আস্থা রেখে চেয়ারম্যান প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। কুষ্টিয়া সদরে এখন আতাউর রহমান আতা বনাম এবি পার্টির আহাদ আল মামুন— এই দুজনের মধ্যে লড়াই হবে।

চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলায় চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের এমপি আলী আজগার টগরের আপন ভাই মো. আলী মুনছুর বাবুও কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অমান্য করে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। পিরোজপুরের নাজিরপুরে উপজেলা পারিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন পিরোজপুর-১ আসনের এমপির ভাই এস এম নূরে আলম সিদ্দিকী। তিনিও প্রথাম ধাপের এই নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেননি। নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায় প্রার্থী হয়েছেন স্থানীয় এমপি একরামুল করিম চৌধুরীর ছেলে আতাহার ইশরাক সাবাব চৌধুরী। গতকাল তিনি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেননি। জানা গেছে, একরামুল হকের স্ত্রী কামরুন নাহার শিউলী কবিরহাট উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান। নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলায় প্রার্থী হয়েছেন স্থানীয় এমপি মোহাম্মদ আলীর স্ত্রী আয়েশা ফেরদাউস ও তাদের বড় ছেলে আশিক আলী। এ উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান মাহবুব মোর্শেদ লিটন। তিনি মোহাম্মদ আলীর ছোট ভাই। ভাতিজার সমর্থনে এবার লিটন মনোনয়নপত্র দাখিল করেননি। গতকাল শেষ দিনে এখন এমপির স্ত্রী ও ছেলে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেননি। 

মাদারীপুর সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন দাখিল করেছেন মাদারীপুর-২ আসনের এমপি শাজাহান খানের বড় ছেলে আসিবুর রহমান খান। এমপির চাচাতো ভাই সাবেক চেয়ারম্যান পাভেলুর রহমান শফিক খানও চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন। এই উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান এমপির আপন ছোট ভাই অ্যাডভোকেট ওবাইদুর রহমান খান। গতকাল শেষ দিনে এমপির ছেলে আসিবুর রহমান খান মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেননি। নড়াইলের কালিয়া উপজেলার বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সোহেলী পারভিন নিরী নড়াইল-১ আসনের এমপি কবিরুল হক মুক্তির ভাগ্নি। এবারও একই পদে নির্বাচন করছেন নিরী। গতকাল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে এমপির এই স্বজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেননি। তবে আইসিটি প্রতিমন্ত্রীর শ্যালক সংবাদ সম্মেলন করে ভোটে থাকবেন না বলে জানান। 

দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষো করে যারা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তাদের বিষয়ে দলীয় সিদ্ধান্ত কী হবে তা জানতে আমার সংবাদের পক্ষ থেকে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হয় আওয়ামী লীগর নীতিনির্ধারণী ফোরাম সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে তিনি এ বিষয়ে সাংগঠনিক সম্পাদকদের কাছে জানতে পরামর্শ দেন। আওয়ামী লীগের সাংঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেনের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হলে তিনি আমার সংবাদকে জানান, আমাদের কাছে এ সংক্রান্ত আপডেট রিপোর্ট আসেনি, এলে তখন মন্তব্য করব। একই প্রসঙ্গে দলটির অন্যতম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফের সঙ্গে কথা হলে তিনিও এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
 

Link copied!