Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪,

চ্যালেঞ্জিং মুহূর্তে জনসাধারণের ভরসাস্থল র‌্যাব

আভিযানিক সাফল্যে বাড়ছে জনপ্রত্যাশা

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

মে ২১, ২০২৪, ১২:৪৫ এএম


আভিযানিক সাফল্যে বাড়ছে জনপ্রত্যাশা

অপরাধ দমন ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। শুধু অপরাধ দমন আর আসামি গ্রেপ্তারই নয়, উদ্ভাবনী ও সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অপরাধকে সমূলে উৎপাটন আর অপরাধীর মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তনের মাধ্যমে সমাজের মূলধারায় ফিরিয়ে আনতেও প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বহুমুখী কর্মপন্থা নিয়ে কাজ করে আসছে র‌্যাব ফোর্সেস। অপরাধকে সমূলে উৎপাটনে র্যাবের বহুমুখী উদ্যোগ ইতোমধ্যে দেশে-বিদেশে ব্যাপক প্রশংসাও কুড়িয়েছে। মানবিকতা দিয়ে র্যাবের অপরাধ দমনের সাফল্যও বিশ্বের বুকে নজিরবিহীন। অপহরণকৃত ভিকটিমদের উদ্ধারেও র‌্যাবই মানুষের শেষ ভরসাস্থল। শুধু তা-ই নয়, চ্যালেঞ্জিং মুহূর্তের আভিযানিক সাফল্যে দিনে দিনে র্যাবের প্রতি বেড়েই চলেছে জনসাধারণের প্রত্যাশা। 

সেই প্রত্যাশা পূরণে ১৫টি ব্যাটালিয়ন সারা দেশেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণসহ সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সব ধরনের সন্ত্রাস মোকাবিলায় সমন্বিত কার্যক্রমের মাধ্যমে সফল অভিযান পরিচালনা করে র‌্যাব আজ নিঃসন্দেহে সুসংগঠিত ও গতিশীল বাহিনী হিসেবে সর্বজনস্বীকৃত। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই র‌্যাবে কর্মরত সব সদস্যের আন্তরিক নিষ্ঠা, মেধা ও পরিশ্রমের ফলে অতি অল্প সময়ের মধ্যেই সাফল্যের শিখরে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে র্যাব ফোর্সেস। সামনের দিনগুলোয় আরও বেশি সফলতা, এলিট ফোর্স হিসেবে অর্জিত স্বকীয়তা ধরে রাখা এবং সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা ও আস্থার প্রতিদান দেয়ার অঙ্গীকারও ব্যক্ত করছেন র্যাব কর্মকর্তারা। 

সফল দায়িত্ব পালনের ধারাবাহিকতায় র‌্যাব ফোর্সেস বিগত তিন বছরে বিভিন্ন অভিযানে দুই হাজার ৮৬৫টি আগ্নেয়াস্ত্র, ১৫ হাজার ৪৬৪ রাউন্ড গোলাবারুদ, ৩৭৯টি ম্যাগাজিন, বিভিন্ন ধরনের ৬৩৯টি বোমা ও গ্রেনেড, ৩২ হাজার ৪২৩টি অন্যান্য বিস্ফোরক দ্রব্য এবং বিভিন্ন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্রের যন্ত্রাংশ জব্দ করেছে। একই সময়ে দেশব্যাপী মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে এ পর্যন্ত ২৯ কেজি হেরোইন, ৯২ হাজার ৯১১ কেজি গাঁজা, ১৫ হাজার ৫৫০টি গাঁজা গাছ, চার লাখ ৬৫ হাজার ৯৩৭ বোতল ফেনিসিডিল, চার লাখ ১০ হাজার ১৩০ লিটার দেশি মদ, ৪৬ হাজার ৬৮১ বোতল ও ৫৯ হাজার ৫৩৯ লিটার বিদেশি মদ, এক লাখ ১৫ হাজার ১৬৮টি বিয়ার ক্যান, দুই কোটি এক লাখ ১০ হাজার ১০৪ পিস ইয়াবা, ১৭৫ কেজি কোকেন, ৮৬ কেজি আফিম, ৭০২ কেজি আইস (মেথ), মরফিন ইনজেকশন ৪৪ হাজার ২৯১ পিস, ৯৬ হাজার ৮৪৭ পিস ট্যাপেনটাডল ট্যাবলেট এবং বিভিন্ন ধরনে এক লাখ ১৪ হাজার ৯৮০ পিস অন্যান্য নেশাজাতীয় দ্রব্যও জব্দ করে র্যাব। 
জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িক উগ্রপন্থা ও সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রত্যক্ষ প্রমাণসাপেক্ষে র্যাব ফোর্সেস বিগত তিন বছরে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের ৭০৩ জঙ্গি সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। জালটাকা, জাল ভিসা ও পাসপোর্ট প্রস্তুতকারী প্রতারক চক্রের হোতা এবং তাদের সহযোগী সদস্যদের মধ্যে এ পর্যন্ত ৫১ হাজার ৮৭১ অপরাধীকেও গ্রেপ্তার করে র্যাব। শুধু তা-ই নয়, ভেজালবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবেও র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত একই সময়ে চার হাজার ৫৫৪টি অভিযান পরিচালনা করে ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ খাদ্যদ্রব্য, নিম্নমানের ওষুধ, নকল প্রসাধনীসহ বিভিন্ন মানহীন দ্রব্যাদি প্রস্তুত ও বিপণনের অপরাধে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ৮৫ কোটি ১৩ লাখ ২৪ হাজার ৪২৭ টাকা জরিমানা করে সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধিতেও ভূমিকা রাখে। (তথ্যসূত্র : এপিএ প্রতিবেদন, ১ জুলাই-০১ জুন ২০২৪)

পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই এলিট ফোর্স র‌্যাব দেশের অভ্যন্তরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে আসছে। এর মধ্যে জঙ্গি, চরমপন্থি, সন্ত্রাস দমন, অগ্নিসন্ত্রাস প্রতিরোধ, জলদস্যু, বনদস্যু ও পেশাদার অপরাধীকে গ্রেপ্তার, অবৈধ অস্ত্র, গোলাবারুদ জব্দ, মাদকদ্রব্য জব্দ ও মানবপাচার রোধ অন্যতম। সম্প্রতি করোনা মহামারির সময়েও সম্মুখ যোদ্ধা হিসেবে দায়িত্ব পালন এবং বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কাজে অংশগ্রহণের মাধ্যমে র‌্যাব সর্বমহলে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় এবং সংবিধান অক্ষুণ্ন রাখতে র্যাবের ভূমিকা প্রশংসার দাবিদার। তিনি বলেন, বর্তমান বিশ্বের ক্রান্তিলগ্নে দেশের অভ্যন্তরীণ নানা চ্যালেঞ্জের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে জনসাধারণের চাহিদা ও আকাঙ্ক্ষা প্রতিনিয়তই বেড়ে চলেছে। বিদ্যমান সমাজব্যবস্থায় অপরাধের ধরন ও কৌশল প্রতিনিয়তই বদলে যাচ্ছে। প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্বায়নের এ যুগে শান্তিপূর্ণ, জনবান্ধব ও নিরাপদ সমাজ বিনির্মাণে র‌্যাবও আধুনিক এবং যুগোপযোগী হচ্ছে। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রত্যয়ে অপরাধ দমন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও দেশসেবায় র্যাব অতীতের ন্যায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেও আশা করছেন তিনি। (তথ্যসূত্র : র‌্যাবের ২০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর বাণী)  

র‌্যাবের এপিএ চুক্তির তথ্যে জানা যায়, সাতটি সুনির্দিষ্ট চ্যালেঞ্জের বিপরীতে কাজ করে ভবিষ্যতে পাঁচটি গোল অর্জনের টার্গেটেই এগিয়ে যাচ্ছে র‌্যাব। দেশব্যাপী বিস্তৃত ১৫টি ব্যাটালিয়নে দক্ষ জনবল ও ভৌত সম্পদের অপ্রতুলতা সবকটি চ্যালেঞ্জের মধ্যে অন্যতম। এরপরই রয়েছে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে টহল ও সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনায় উন্নত যানবাহন ও পরিবহন সংকট, অপরাধ নিয়ন্ত্রণের প্রেক্ষাপটে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর সরঞ্জামের অপ্রতুলতা ও ব্যবহার, জ্ঞানসমৃদ্ধ লোকবলের অভাব, ব্যাটালিয়নসমূহের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য প্রয়োজনীয় আবাসন সুবিধা সংকট, ক্রাইম প্রিভেনশন কোম্পানিগুলোর জন্য নিজস্ব অফিস ভবনের সংকট, সাইবার অপরাধ দমনে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত অবকাঠামোর অপ্রতুলতা ও ফরেনসিক ল্যাবরেটরির মানোন্নয়ন এবং ব্যবস্থাপনা-সংক্রান্ত বাজেটের সংকট। এতসব সংকটের মধ্য দিয়েও র্যাব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত রূপকল্প-২০২১, স্মার্ট বাংলাদেশ-২০৪১সহ সরকারের টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি-২০৩০), বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০, সপ্তম ও অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহায়ক হিসেবে একটি স্থিতিস্থাপক ও কার্যকর জননিরাপত্তা এবং জনশৃঙ্খলার প্রেক্ষাপট তৈরিতে বিভিন্ন অপরাধের বিরুদ্ধে সরকার ঘোষিত জিরো টলারেন্স নীতির বাস্তবায়নে প্রত্যক্ষভাবে কাজ করে যাচ্ছে। 

মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রম বেগবান করা, বেআইনি কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত অপরাধীদের গ্রেপ্তারে জনগণের আস্থা ও আত্মবিশ্বাস অর্জন, মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা কার্যকর, র‌্যাব ফোর্সেসকে আরও শক্তিশালী, আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর, জনবান্ধব সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অত্যাধুনিক নিউক্লিয়ার, বায়োলজিক্যাল ও কেমিক্যাল প্রোটেকশন ইকুইপমেন্ট, ল’ অ্যানফোর্সমেন্ট স্ট্যান্ডার্ড ডিভাইস এবং টেকটিক্যাল সার্ভিলেন্স সিস্টেম সংযোজন, র‌্যাব ফোর্সেসের সাফল্য ও অর্জনগুলোকে জনগণের কাছে সঠিকভাবে উপস্থাপন করে জনমনে আস্থা সৃষ্টি, বুদ্ধিবৃত্তিক ও প্রযুক্তিনির্ভর শক্তিশালী গোয়েন্দা নিরীক্ষণ কর্মপন্থার মাধ্যমে সুপরিকল্পিত অপারেশন কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে ন্যাশনাল ডাটাবেজের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন, সাইবার সিকিউরিটি সেলের সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন, অ্যানক্রিপটেড কমিউনিকেশন সিস্টেম ও নেটওয়ার্ক সেন্ট্রিক কমান্ড কন্ট্রোল সিস্টেম নেটওয়ার্ক সংযোজন এবং ক্রমাগত উন্নয়নের পরিকল্পনা নিয়েই আগাচ্ছে বর্তমান র্যাব ফোর্সেস। 

র‌্যাব মহাপরিচালক এম খুরশীদ আলম বলেছেন, জঙ্গিবাদ, ধর্মীয় চরমপন্থা, সন্ত্রাসবাদের মুলোৎপাটন, চিহ্নিত ভয়ঙ্কর অপরাধী ও সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারপূর্বক আইনের আওতায় আনা; মাদক, আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্যাদি জব্দসহ মানবপাচার রোধ, নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা নিরসন, মানহীন ও ভেজাল ভোগ্যপণ্যের উৎপাদন, বাজারতকরণ এবং বিপণনের মতো সমসাময়িক বিভিন্ন ঘৃণ্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অবসান নিশ্চিতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে র্যাব। বিশেষ করে বাংলাদেশের বিস্তৃত সীমান্তপথ দিয়ে আসা মরণ নেশা ইয়াবা, হেরোইন, ফেনসিডিল, আইস ও গাঁজাসহ মাদকদ্রব্য এবং অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণে র্যাব অনন্য ভূমিকা পালন করে আসছে। 

এছাড়াও অস্ত্রধারী সর্বহারাদের আত্মসমর্পণ ও জীববৈচিত্র্য এবং প্রাণপ্রাচুর্যে সমৃদ্ধ সুন্দরবন এলাকার দীর্ঘদিনের অচলায়তন জলদস্যুতা অবসানের পাশাপাশি আত্মসমর্পণকারী সর্বহারা ও দস্যুবাহিনীর সদস্যদের স্বাভাবিক জীবনধারায় প্রত্যাবর্তনের ক্ষেত্র তৈরির গুরুদায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেছে র‌্যাব ফোর্সেস। তিনি আরও বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্নদ্রষ্টা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বদান্যতায় জল, স্থল ও আকাশে অভিযান পরিচালনায় সক্ষম বর্তমান র্যাব ফোর্সেস একটি ত্রিমাত্রিক ও স্মার্ট বাহিনী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। (তথ্যসূত্র : র‌্যাবের ২০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর বাণী)
 

Link copied!