জাহাঙ্গীর আলম আনসারী
মে ২৪, ২০২৪, ১২:২৯ এএম
জাহাঙ্গীর আলম আনসারী
মে ২৪, ২০২৪, ১২:২৯ এএম
দীর্ঘদিন ধরে চলা টানা উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষ এখন সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছে। অপরদিকে প্রতি মাসে বাড়ছে শিক্ষাব্যয়ও। কিন্তু যে হারে প্রতিদিন মানুষের ব্যয় বাড়ছে, সে হারে বাড়ছে না আয়। তাই এসবের প্রভাব পড়েছে স্কুলশিক্ষার্থীদের ব্যাংক হিসাবেও। ৯ মাস ধরে কমছে স্কুলশিক্ষার্থীদের ব্যাংক হিসাবে জমানো টাকার পরিমাণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে স্কুলশিক্ষার্থীদের ব্যাংক আমানতের পরিমাণ ছিল দুই হাজার ১০৯ কোটি টাকা। আর পরের মাস মার্চে শিক্ষার্থীদের ব্যাংক হিসাবে আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৬৪ কোটি টাকা। সে হিসাবে এক মাসে আমানত কমেছে ৪৪ কোটি টাকা।
জানা গেছে, শিক্ষার্থীদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তির আওতায় আনা ও তাদের আর্থিক ব্যবস্থাপনার বিষয়ে শিক্ষিত করে তোলার উদ্যোগের অংশ হিসেবে ২০১০ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করে। এ কার্যক্রমের লক্ষ্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে টাকা জমানোর অভ্যাস তৈরি করা এবং আর্থিক ব্যবস্থাপনায় তাদের আরও উপযোগী করে তোলা। এ পর্যন্ত ৫৯টি ব্যাংক স্কুল এ কার্যক্রম চালু করেছে। ১১ থেকে ১৭ বছর বয়সি শিক্ষার্থীরা এ ধরনের অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে।
এই অ্যাকাউন্টগুলোর সঙ্গে বেশকিছু সুবিধা পাওয়া যায়। যেমন— সব ধরনের ফিসু ও চার্জের ক্ষেত্রে রেয়াত পাওয়া, বিনামূল্যে ইন্টারনেট ব্যাংকিং সুবিধা পাওয়া, ন্যূনতম স্থিতির বাধ্যবাধকতার ক্ষেত্রে ছাড় ও স্বল্প খরচে ডেবিট কার্ড পাওয়ার সুযোগ। মাত্র ১০০ টাকা আমানত রেখেই এ ধরনের অ্যাকাউন্ট খোলা যায়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, গত ফেব্রুয়ারিতে শহরের শিক্ষার্থীদের ব্যাংক আমানত ছিল এক হাজার ৫১৪ কোটি টাকা। আর পরের মাস মার্চে শহরের শিক্ষার্থীদের আমানত দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৪৯৮ কোটি টাকা। সে হিসাবে এক মাসে শহরের শিক্ষার্থীদের ব্যাংক আমানত কমেছে ১৬ কোটি টাকা।
এছাড়া গত ফেব্রুয়ারিতে গ্রামের শিক্ষার্থীদের ব্যাংক আমানত ছিল ৫৯৪ কোটি টাকা। আর পরের মাস মার্চে তা দাঁড়িয়েছে ৫৬৬ কোটি টাকায়। সে হিসাবে এক মাসে গ্রামের শিক্ষার্থীদের ব্যাংক আমানত কমেছে ২৭ কোটি টাকা।
আর স্কুলশিক্ষার্থীদের ব্যাংক আমানতের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২৩ সালের জুলাই থেকেই আমানত কমে আসছে। গত বছরের জুলাই মাসে শিক্ষার্থীদের ব্যাংক আমানতের পরিমাণ ছিল দুই হাজার ২৯৯ কোটি টাকা, যা আগস্টে এসে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ২৮৫ কোটি; সেপ্টেম্বরে দুই হাজার ২৩২ কোটি, অক্টোবরে দুই হাজার ২০২ কোটি, নভেম্বরে দুই হাজার ১৯৯ কোটি এবং ডিসেম্বরে দুই হাজার ১৭৯ কোটি টাকা। এরপর চলতি বছরের জানুয়ারিতে আমানতের পরিমাণ দাঁড়ায় দুই হাজার ১৩৬ কোটি, ফেব্রুয়ারিতে দুই হাজার ১০৯ কোটি এবং সর্বশেষ মার্চে এই পরিমাণ দাঁড়ায় দুই হাজার ৬৪ কোটি টাকায়।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, এর আগে ২০২৩ সালের মার্চ শেষে আমানতের পরিমাণ ছিল দুই হাজার ২৫০ কোটি টাকা। সে অনুযায়ী এক বছরে আমানত কমেছে ১৮৫ কোটি টাকা।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চ মাসে স্কুল ব্যাংকিংয়ের মোট হিসাবের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪১ লাখ ৭৪ হাজার ৭৮০টি। এর আগের মাসে হিসাবের পরিমাণ ছিল ৪১ লাখ ২৯ হাজার ৬৮৮টি। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে শিক্ষার্থীদের ব্যাংক হিসাব বেড়েছে ৪৫ হাজার ৯২টি।
এসব হিসাবের মধ্যে ১৮ লাখ ৮৮ হাজার ৪২১টি হিসাব শহরাঞ্চলে এবং ২২ লাখ ৮৬ হাজার ৩৫৯টি গ্রামাঞ্চলে খোলা হয়েছে। ওই মাসে ছেলেদের অ্যাকাউন্ট ছিল ২১ লাখ ৫৭ হাজার ৩২০টি। এর মধ্যে শহরে ১০ লাখ ৫৯ হাজার ৩৬৯ এবংু গ্রামে ১০ লাখ ৯৭ হাজার ৯৬১টি। আর মেয়েদের অ্যাকাউন্ট ছিল ২০ লাখ ১৭ হাজার ৪৬০টি। যার মধ্যে শহরে ৮ লাখ ২৯ হাজার ৬২ এবং গ্রামে ১১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৮টি। এছাড়া, গত মার্চে ছেলেদের অ্যাকাউন্ট ছিল ২১ লাখ ৫৭ হাজার ৩২০টি। এর মধ্যে শহরে ১০ লাখ ৫৯ হাজার ৩৬৯টি আর গ্রামে ১০ লাখ ৯৭ হাজার ৯৬১টি।