আরিফ হোসেন, বরিশাল ব্যুরো
জুন ২৬, ২০২৫, ০৫:০৯ পিএম
মানসিক প্রতিবন্ধী মোস্তফা খান (৬০)। বয়স ও অসুস্থতার কারণে ভারী কোনো কাজ করতে পারেন না। প্রায় আড়াই যুগ ধরে বরিশাল নগরীর ফকিরবাড়ি রোডের পাশে কুড়িয়ে আনা শাক বিক্রি করে চলে তার চারজনের সংসার।
প্রতিদিন সকালে কিংবা বিকেলে ফকিরবাড়ি রোডের ত্রিমুখী মোড়ে রাস্তার পাশে শাক সাজিয়ে বসে থাকেন মোস্তফা। শাকগুলো আগেই কেটে-ধুয়ে প্রস্তুত করে আনেন, যেন শহরের ব্যস্ত মানুষ সহজে কিনে নিতে পারেন।
মোস্তফা জানান, এরশাদের আমল থেকেই সদর রোড ও ফকিরবাড়ি রোড এলাকায় শাক বিক্রি করছেন তিনি। গ্রামের বাড়ি বরিশাল সদর উপজেলার সায়েস্তাবাদ ইউনিয়নের চরআইচা গ্রাম থেকে শাক সংগ্রহ করে শহরে এনে বিক্রি করেন।
ফকিরবাড়ি রোডের বাসিন্দা শাখাওয়াত বলেন, “যুবক বয়স থেকেই মোস্তফাকে শাক বিক্রি করতে দেখি। তিনি মানসিক প্রতিবন্ধী হলেও শাক পরিষ্কার ও টাটকা রাখেন বলে লোকজন তার কাছ থেকেই কিনতে চায়।”
স্থানীয়রা জানান, মোস্তফা দীর্ঘদিন ধরে শাক বিক্রি করলেও কোনো সরকারি অনুদান বা সহায়তা পান না। বছরে একবার মেম্বারের কাছ থেকে ১০ কেজি চাল মেলে। কখনো কখনো ঈদে প্রতিবেশীরা কিছু সাহায্য করে। আয় হয় দিনে ২-৩ শ টাকা, তবে অনেক দিন আয়ও হয় না। এতেই চলে সংসার এবং ১০ম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ের লেখাপড়া।
মোস্তফা খান জানান, দেশ স্বাধীনের পর তার বাবা-মা মারা যান। আত্মীয়স্বজনের কাছেই বড় হলেও কেউ আজ পাশে নেই। সমাজ ও পরিবারেও তেমন গ্রহণযোগ্যতা পাননি। তিন ভাইবোনসহ আত্মীয়রা স্বচ্ছল হলেও তার খোঁজ রাখে না কেউ।
তিনি বলেন, “আল্লাহই আমাকে খাওয়ান। তবে এখন খুব কষ্টে চলি। মেয়ের লেখাপড়া, সংসার—সবই চালাতে হয় শাক বিক্রির আয় দিয়ে।”
মোস্তফা গণমাধ্যমের মাধ্যমে সমাজের দানশীল ও সুশীল মানুষদের প্রতি সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন।
ইএইচ