ফেনী প্রতিনিধি
জুন ২৬, ২০২৫, ০৬:১৬ পিএম
ফেনীতে আন্তর্জাতিক সংহতি দিবস উপলক্ষে মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’ নির্যাতন বিরোধী মানববন্ধন ও মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।
বৃহস্পতিবার সকালে ফেনী প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত সভায় ছেলের গুমের শিকার এক মায়ের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠে পুরো পরিবেশ।
সভায় প্রবীণ সাংবাদিক একেএম আবদুর রহিম সভাপতিত্ব করেন এবং অধিকার ফেনীর ফোকাল পার্সন সাংবাদিক নাজমুল হক শামীম সঞ্চালনা করেন। মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন মানবাধিকার কর্মী শেখ আশিকুন্নবী সজিব।
প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন গুমের শিকার যুবদল নেতা মাহবুবুর রহমান রিপনের মা রৌশন আরা। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাপ্তাহিক আনন্দ তারকা পত্রিকার সম্পাদক এম মামুনুর রশিদ, বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় মহাসচিব মহিউদ্দিন খন্দকার, লায়ন্স ক্লাব অব ফেনীর নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট সাংবাদিক জাফর উল্লাহ। এছাড়াও ফেনী প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মুহাম্মদ আবু তাহের ভূঁইয়া, দৈনিক সুপ্রভাত ফেনীর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ফিরোজ আলম, সাপ্তাহিক হকার্স সম্পাদক তারিকুল ইসলাম মজুমদার, গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী নসু, শিক্ষক এম ডি মোশারফ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক মুহাইমিন তাজিম, গুলিবিদ্ধ আলিয়া মাদ্রাসা শিক্ষার্থী শাহীন এবং গুমের শিকার মাহবুবুর রহমান রিপনের বড় ভাই শিপু বক্তব্য রাখেন।
রৌশন আরা বলেন, “১১ বছর আগে ২০১৪ সালে আমার ছেলে যুবদল নেতা মাহবুবুর রহমান রিপনকে র্যাবের পরিচয়ে তুলে নেওয়া হয়। মামলা নেওয়া হয়নি থানা পুলিশ কর্তৃক, আজও বিচার হয়নি। আমি এতদিন বিচার চাইতে ঘুরেছি, কিন্তু কোনও ফল পাইনি। আমি আশা করি, বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার আমার ছেলের গুমের বিচারের ব্যবস্থা করবে।”
অধিকার সংগঠনের তথ্যে বলা হয়, বাংলাদেশে স্বাধীনতার পর থেকে প্রতিটি সরকারের আমলে নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। বিশেষ করে শেখ হাসিনার সরকারের আমলে নির্যাতন, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত ১৮২ জন ব্যক্তি নির্যাতনে নিহত হয়েছেন। এছাড়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে ২০২৪ সালের ৯ আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের ২০ জুন পর্যন্ত ১০ জন নির্যাতনে মারা গেছেন।
সংগঠনটি জানায়, বাংলাদেশ জাতিসংঘ প্রণীত নির্যাতন বিরোধী কনভেনশনের ১৪(১) অনুচ্ছেদ নিয়ে আপত্তি জানিয়েও সনদ গ্রহণ করেছে। তবে কনভেনশনের ২২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের জন্য আবেদন গ্রহণ এবং নিষ্পত্তি করার ক্ষমতা এখনও গ্রহণ করেনি। দেশের নির্যাতন বিরোধী আইন থাকলেও তা বাস্তবায়নে বড় বাধা রয়েছে।
এতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার দুর্বলতাও দায়ী। অধিকার সংগঠন নির্যাতন বন্ধে ছয়টি সুপারিশ পেশ করেছে।
মানববন্ধন ও মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন মানবাধিকার কর্মী জাফর আহমেদ ভূঁইয়া, আমিনুল ইসলাম শাহীন, গুমের শিকার রিপনের চাচা ওহিদুর রহমান, ব্যবসায়ী কামরুজ্জামান মজুমদার, হোমিও চিকিৎসক আতিক উল্লাহ, বাংলাদেশ ফটোজার্নালিস্ট এসোসিয়েশন ফেনী শাখার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মোস্তফা কামাল বুলবুলসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম কর্মী, শিক্ষক ও মানবাধিকারকর্মীরা।
ইএইচ