Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪,

সিজিপিএ চারে চার প্রাপ্ত জাকিয়ার গল্প

ডিসেম্বর ৩, ২০২০, ১০:৩০ এএম


সিজিপিএ চারে চার প্রাপ্ত জাকিয়ার গল্প

কথায় আছে-‘মানুষ বড় হতে পারে তার স্বপ্নের সমান’। প্রয়োজন অধ্যবসায়, ধৈর্য আর আত্মবিশ্বাস। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি সেমিস্টারের ফলাফল হিসেব করা হয় জিপিএ'তে আর সর্বোচ্চ জিপিএ ৪.০০। 

কেউ যদি সবগুলো সেমিস্টারে জিপিএ ৪ পায় , তবেই সে সর্বোচ্চ সিজিপিএ (কিউমিউলেটিভ গ্রেড পয়েন্ট এভারেজ) ৪ নিয়ে বেরোতে পারে। একটু অবহেলাতেই ছিটকে পড়তে হয় এই সর্বোচ্চ অর্জন থেকে। সকল প্রতিকূলতাকে জয় করে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবার সিজিপিএ ৪.০০ পেয়ে রেকর্ড করেছেন জাকিয়া ইসলাম।

জাকিয়ার জন্ম গাইবান্ধার থানাপাড়ায়। তিন ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট জাকিয়া। বাবাকে হারিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষে অধ্যয়নরত সময়ে। ছোটবেলা থেকেই শিক্ষা জীবনে রেখেছেন মেধার স্বাক্ষর।

জাকিয়া বলেন, লেখাপড়ায় আমার অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে আমার মা। ৫ম ও ৮ম শ্রেণি দুটোতেই ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছি। গাইবান্ধা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে শুরু থেকেই ১ম স্থান ছিলাম। 

এসএসসি এবং এইচএসসিতে গোল্ডেন এ+ পেয়েছি।

ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিলো ডাক্তার হব। মেডিকেলে পরীক্ষা দিলাম, একটুর জন্য সুযোগ হলো না। সৃষ্টিকর্তা হয়ত আগে থেকে ভাগ্যে লিখে রেখেছিলেন আমি কৃষিবিদ হবো।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির শুরু থেকেই প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়েছে জাকিয়াকে। তার ভাষায়, ওরিয়েন্টেশনের পরই আমার জন্ডিস হয়। দেড় মাস পর ক্লাসে এসে দেখি অনেক ক্লাস, ল্যাব পরীক্ষা শেষ। ক্লাসে উপস্থিতির উপর ১০ নম্বর ছিলো।

কিন্তু জন্ডিসের কারণে আমার উপস্থিতি ৭০ শতাংশের কম ছিলো। আমি খুব পড়াশোনা শুরু করি। প্রথম সেমিস্টারে আমি অনেক বেশি পড়াশোনা করতাম। আমি বান্ধবীদের থেকে ক্লাসগুলো বুঝে নিতাম। রুমের বড় আপুরাও হেল্প করত। আপুদের থেকে শুনতাম, ১ম সেমিস্টারে খুব কম সিজিপিএ ৪.০০ পায়। 

যখন প্রথম সেমিস্টারের ফাইনাল দেই, বাবা তখন আইসিউতে ভর্তি। ২০১৫ সালের অক্টোবরে বাবাকে হারালাম। এক মাস পরেই ফলাফল প্রকাশিত হলো। আমি সিজিপিএ ৪ পেলাম। কিন্তু বাবা আমার ফলাফল দেখে যেতে পারলেন না।

এত প্রতিকূলতার মাঝে ভালো ফলাফল করে লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ আরো বেড়ে যায়। দ্বিতীয় সেমিস্টারে আমিই শুধু সিজিপিএ ৪.০০ পাই। আগ্রহ আরো বেড়ে যায়।

কিন্তু অসুস্থতা আমার পিছু ছাড়েনি। ২য় বর্ষের ১ম সেমিস্টারে ফাইনাল পরীক্ষায় টাইফয়েড হলো। মামার বাসা থেকে পরীক্ষা দিলাম। ফাইনাল ইয়ারের শেষ সেমিস্টারে ডেঙ্গু ধরা পড়ল। সবসময় বমি হতো। অনেক বাধার মধ্য দিয়ে পরীক্ষা দিতে হলো। মহান আল্লাহ এর রহমতে প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে সব সেমিস্টারে সিজিপিএ চার পেয়েছি।

[media type="image" fid="99821" layout="normal" caption="1" infograph="0" parallax="0" popup="1"][/media]

নিজের ভালো ফলাফলের উপায় সম্পর্কে জাকিয়া বলেন, শুরু থেকেই ক্লাসের প্রতি মনোযোগী ছিলাম। ক্লাস না করলে ভালো লাগত না। ক্লাসে প্রথম সারিতে বসতাম। ভালোভাবে ক্লাস লেকচার তুলতাম। 

পরীক্ষার আগে সব গুছিয়ে রাখতাম। কোন বিষয় না বুঝলে নেটে সার্চ করতাম। ইউটিউবে ওই বিষয়ে ভিডিও দেখতাম। না বুঝে কোন কিছু মুখস্ত করতাম না। পরীক্ষার আগে বন্ধুদের বুঝাতে গিয়ে নিজেরও ভালো শেখা হয়ে যেত।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রতিটি সেমিস্টারে সিজিপিএ ৪.০০ পাওয়া আমার জন্য সৌভাগ্যের। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবার সিজিপিএ ৪ পেয়ে আমি শিক্ষক, বন্ধু-বান্ধবসহ সকলের নিকট কৃতজ্ঞ। 

আমি এখন কৃষি রসায়ন বিভাগে মাস্টার্স করছি। ফসলে কীটনাশক ( পেস্টিসাইড)  নিয়ে কাজ করছি।  ফল-মূলে পেস্টিসাইড নিয়ে অনেকের ভুল ধারণা রয়েছে। ভবিষ্যতে কৃষির সাথে থাকতে চাই। কৃষির উন্নয়নে নিজেকে নিবেদিত করতে চাই।

আরো পড়ুন:-

বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতার চেক হস্তান্তর

ওয়াজ মাহফিলে লাউড স্পিকারে দুর্ভোগ হলে ব্যবস্থা

প্রেমিকের ৩ দিন পর প্রেমিকাও জীবন দিলো

শারীরিক সম্পর্কের কারণে ইনজুরিতে ওয়ার্নার, স্ত্রীর মন্তব্য

করোনার টিকায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার চায় সংসদীয় কমিটি

 মূর্তি বা ভাস্কর্য নির্মাণ হারাম: শীর্ষ ওলামা মাশায়েখদের ফতোয়া

পুলিশের ঘুষ নেওয়ার ভিডিও ভাইরাল

ভারত থেকে তেল আসবে বাংলাদেশে, পাইপলাইনের কাজ শুরু

আমারসংবাদ/এআই