ক্রীড়া প্রতিবেদক
জুন ৪, ২০২৫, ০১:০০ এএম
ক্রীড়া প্রতিবেদক
জুন ৪, ২০২৫, ০১:০০ এএম
১৭ বছরের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান। অবশেষে বিরাট কোহলির নেতৃত্বে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর শোকেসে উঠল ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) সোনালী ট্রফি। দীর্ঘ অপেক্ষা, অসংখ্য আক্ষেপ আর ভাঙাগড়ার পর ১৮তম আসরে এসে প্রথমবারের মতো শিরোপার স্বাদ পেল বেঙ্গালুরু।
রোববার রাতে আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে ফাইনালে ৬ রানে প্রীতি জিনতার পাঞ্জাব কিংসকে হারিয়ে শিরোপা নিশ্চিত করে আরসিবি।
ম্যাচ শেষে উচ্ছ্বাসে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি দলের প্রাণভোমরা বিরাট কোহলি। একই আবেগে ভেসেছেন প্রাক্তন তারকা এবি ডি ভিলিয়ার্স ও গ্যালারিতে উপস্থিত ক্যারিবীয় কিংবদন্তি ক্রিস গেইলও।
শেষ ওভারে পাঞ্জাবের প্রয়োজন ছিল ২৯ রান। প্রথম দুই বল ডট হওয়ার পর ম্যাচ কার্যত বেঙ্গালুরুর দখলে চলে যায়। কিন্তু এরপর শশাঙ্ক সিংয়ের চার বলের ঝড়—তিন ছক্কা ও এক চারে যোগ হয় ২২ রান। তবু পারেননি দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছাতে। শেষ বলে ছক্কা মারলেও ব্যবধান কমে কেবল ৬ রানে। ম্যাচ শেষে হতাশায় কেঁদে ফেলেন তিনিও।
এর আগে প্রথম ইনিংসে ব্যাট করে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৯০ রান তোলে বেঙ্গালুরু। ইনিংসে কেউই ফিফটি করতে পারেননি, হয়নি কোনো বড় জুটি। তবে ধারাবাহিক ছোট ছোট ইনিংসেই দলীয় সংগ্রহ পৌঁছে যায় লড়াই করার মতো অবস্থানে। ওপেনার ফিল সল্ট করেন ১৬, মায়াঙ্ক আগারওয়াল ২৪ এবং বিরাট কোহলি সর্বোচ্চ ৪৩ রান করেন। রাজাত পাতিদার (২৬), লিয়াম লিভিংস্টোন (২৫), জিতেশ শর্মা (২৪) ও রোমারিও শেফার্ডের (১৭*) ছোট ছোট ঝলকই পার্থক্য গড়ে দেয় শেষ পর্যন্ত।
১৯১ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দুর্দান্ত সূচনা করে পাঞ্জাব। প্রথম ৮.৩ ওভারে ৭২ রান তোলে তারা, ততক্ষণে মাত্র ২ উইকেট হারিয়েছে। তবে মাঝের ওভারগুলোতে মাত্র ২৬ রানের ব্যবধানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপেই পড়ে দলটি। বিশেষ করে শ্রেয়াস আইয়ারের ১ রানে বিদায় দলের আত্মবিশ্বাসে বড় ধাক্কা দেয়। শশাঙ্ক সিং একাই লড়াই করে যান, ৩০ বলে ৩ চার ও ৬ ছক্কায় খেলেন দুর্দান্ত এক ইনিংস। কিন্তু শেষ হাসি হাসেননি তিনি।
বেঙ্গালুরুর হয়ে বল হাতে দারুণ ভূমিকা রাখেন ভুবনেশ্বর কুমার ও ক্রুনাল পাণ্ডিয়া, দুজনই নেন ২টি করে উইকেট। ক্রুনাল ছিলেন সবচেয়ে মিতব্যয়ী—৪ ওভারে মাত্র ১৭ রান খরচায় নেন ২ উইকেট। বাকিরাও ছোট ছোট অবদান রেখেছেন, যার সম্মিলিত ফলেই এসেছে কাঙ্ক্ষিত জয়।
২০০৮ সালে বেঙ্গালুরুর হয়েই আইপিএলে অভিষেক হয় বিরাট কোহলির। দীর্ঘ ১৭ বছরে অনেক উত্থান-পতনের সাক্ষী হয়েছেন তিনি, দল বদলাননি একদিনের জন্যও। তিনবার ফাইনাল খেলেও ট্রফি ছুঁতে পারেননি। এবার, ক্যারিয়ারের গোধূলিলগ্নে এসে সেই অপূর্ণতা ঘুচালেন এই মহাতারকা।
ম্যাচ শেষেই আবেগাপ্লুত হয়ে মাঠেই বসে পড়েন বিরাট। চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ে আনন্দাশ্রু। সতীর্থরা এসে জড়িয়ে ধরেন তাকে। পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে হাস্যোজ্জ্বল মুখে ট্রফি উঁচিয়ে ধরেন কোহলি, যেন বার্তা দেন—কষ্ট করলে সাফল্য একদিন আসেই।
এই জয় শুধু একটি ট্রফির নয়; এটি ছিল অপেক্ষার, অনুগত ভক্তদের, এবং একজন কিংবদন্তির ক্রিকেট জীবনের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত অধ্যায়ের পূর্ণতার। এক মাঠে দুই রকম অনুভূতি—বিরাটের আনন্দাশ্রু, শশাঙ্কের ব্যর্থতার হতাশা। এটাই ক্রিকেট, এভাবেই হাসায়, কাঁদায়—জীবনের মতো করেই।
বিরাটের চোখে জল, ভক্তদের হৃদয়ে উৎসব
জয়ের পর মাঠেই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন কোহলি। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে এই প্রথমবার তার দল আইপিএলের ট্রফি হাতে তুললো। ম্যাচশেষে তিনি বলেন, "এটা শুধু আমার নয়, লক্ষ লক্ষ আরসিবি সমর্থকদের স্বপ্নপূরণ।"
ম্যাচের ঝলক
ব্যাঙ্গালুরুর স্কোর: ১৯০/৯ (২০ ওভারে)
পাঞ্জাবের স্কোর: ১৮৪/৭ (২০ ওভারে)
ম্যাচসেরা: বিরাট কোহলি
ট্রফি ঘরে, ইতিহাস গড়লো আরসিবি
এই জয়ের মাধ্যমে অবশেষে আইপিএলের 'চিরচ্যাম্পিয়নহীন' ট্যাগ মুছে ফেললো ব্যাঙ্গালুরু। সমর্থকদের চোখে জল, আর বিরাট কোহলির মুখে প্রশান্তির হাসি—এ যেন ক্রিকেটের এক নিখাদ প্রেমের গল্প।
ইএইচ