Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

বাসে শৃঙ্খলা ফেরাবে কে

রায়হান উদ্দিন

রায়হান উদ্দিন

আগস্ট ১২, ২০২২, ০২:২৯ এএম


বাসে শৃঙ্খলা ফেরাবে কে

রেকর্ড মূল্যে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় বাসের নতুন ভাড়া নির্ধারণ করে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ-বিআরটিএ। রাজধানীর বাসগুলোতে টানানো হয়নি বাস ভাড়ার নতুন তালিকা।

আবার সমালোচনার মুখে ওয়েবিল ও চেকিং পদ্ধতি বাতিল করা হলেও এখনো পুরোপুরি তা কার্যকর হয়নি। ফলে নানান অজুহাতে ইচ্ছেমতো বাসভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ যাত্রীদের।

নগরে চলাচল করা যাত্রীরা জানান, রাজধানীর বাসগুলোর শৃঙ্খলা ফেরাবে কে? কিলোমিটার প্রতি দুই টাকা ৫০ পয়সা ভাড়া নেয়ার কথা থাকলেও নিচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া। ওয়েবিল ও চেকিংয়ের কথা বলেও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। পরিবহন শ্রমিকরা কোনো নির্দেশনাই মানছেন না। কিলোমিটার হিসেবে ভাড়া নেয়ার কথা বললে সৃষ্টি হয় বািবতণ্ডার।

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও শ্রমিক নেতারা বলছেন, সঠিক মনিটরিংয়ের অভাবে গণপরিবহনে নৈরাজ্য সৃষ্টি হচ্ছে। এ সমস্যা সমাধানে সঠিক ও কার্যকর তদারকি করতে হবে।

পাশাপাশি এক স্থান থেকে আরেক স্থান কত কিলোমিটার, সে অনুযায়ী মোট কিলোমিটার যোগ করে ভাড়া কত হয়, বিস্তারিত ডিজিটাল ব্যানারের মাধ্যমে উল্লেখ করে বাসের দরজায় লাগিয়ে রাখতে হবে। তাহলে যাত্রী হয়রানি বন্ধ হবে।

সরেজমিন দেখা যায়, বাসভাড়া বাড়ানোর পাঁচদিন পার হলেও রাজধানীর বাসগুলোতে এখনো নতুন ভাড়ার তালিকা টানানো হয়নি। ফলে যাত্রীদের কাছ থেকে নিজেদের মতো করে ভাড়া আদায় করছেন বাস শ্রমিকরা।

এ নিয়ে বাসে প্রতিনিয়ত যাত্রীদের সাথে শ্রমিকদের বািবতণ্ডা হচ্ছে। ভিক্টর বাসে নতুন বাজার থেকে পল্টন মোড় পর্যন্ত মোট ১৩ কিলোমিটার। কিলোমিটার হিসেবে ভাড়া হয় সাড়ে ৩২ টাকা, নেয়া হচ্ছে ৩৫-৪০ টাকা। আবার ধূপখোলা থেকে শাহবাগ পর্যন্ত ছয় কিলোমিটার।

সে হিসাবে ভাড়া আসে ১৫ টাকা অথচ ভাড়া নেয়া হচ্ছে ২৫ টাকা। অতিরিক্ত নেয়া হচ্ছে ১০ টাকা। একইভাবে অন্যান্য রুটেও আজমেরী, তানজীল ও সাভার পরিবহনসহ অধিকাংশ বাস কিলোমিটার হিসেবে ভাড়া নিতে আগ্রহী নয়। তাদের মতো করে ভাড়া নিচ্ছে।

এদিকে গত সোমবার ওয়েবিল ও চেকিং পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। গত বুধবার থেকে কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও  এখনো বাসে চেকিং পদ্ধতি চালু রয়েছে। মিরপুর-১ নম্বর রুটে চলাচল করা মোহনা, বসুমতি,  ইতিহাস, রাজধানী, অসিম, প্রজাপতিসহ আরও অনেক পরিবহনের বাস চলাচল করে। তার ভেতর ইতিহাস বাসে এখনো চেকিং পদ্ধতি চালু রেখেছে, তবে তাদের ওয়েবিল পদ্ধতি বাতিল করা হয়েছে। চিটাগাং রোড থেকে ছেড়ে আসে সময় পরিবহন, এখনো এ বাসে চেকিং পদ্ধতি চালু আছে।

এছাড়া মাতুয়াইল থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার। ভাড়া হয় সাড়ে ১২ টাকা, অথচ সময় বাসে নেয়া হচ্ছে ২৫ টাকা, অতিরিক্ত নেয়া হচ্ছে ১৩ টাকা। আর শ্রাবণ পরিবহন নিচ্ছে ২০ টাকা, অতিরিক্ত নিচ্ছে আট টাকা। এভাবে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ে ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ।

নগরবাসী জানান, বাসগুলোকে আসলে কে নিয়ন্ত্রণ করে সরকার নাকি বাসমালিক কর্তৃপক্ষ। যদি সরকার পরিচালনা করে তাহলে কেন বাসগুলো সরকারের নির্ধারণ করে দেয়া ভাড়া নিচ্ছে না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন সুপারভাইজার ও বাস কন্ট্রাক্টর বলেন, বাস কোম্পানি যেটা রাখতে বলে, সেটাই রাখতে হবে। দৈনিক চুক্তিতে মালিককে ভাড়া দিতে হয়। সরকার যে নিয়ম করে দিয়েছে সে অনুযায়ী ভাড়া নিলে আমাদের পোষাবে না। যাত্রীদের বুঝিয়ে ভাড়া নিচ্ছি। মাঝে মধ্যে তাদের সাথে আমাদের কথা কাটাকাটিও হয়ে থাকে। কি করবে বলেন? আমাদের তো খেয়ে পরে বাঁচতে হবে, আমরা তো শ্রমিক।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, মালঞ্চ বাস দিয়ে প্রতিদিন ধূপখোলা থেকে শাহবাগ আসি। কিলোমিটার হিসেবে ভাড়া আসে ১৫ টাকা, অথচ নেয়া হচ্ছে ২৫ টাকা। বাস শ্রমিকদের সাথে তো আর ঝগড়া করতে পারি না। আজমেরি পরিবহন দিয়ে মহাখালী যাতায়াত করেন তৌহিদুল ইসলাম।

তিনি বলেন, আমি প্রতিদিন যাতায়াত করি। বাসকর্মীদের সাথে ভাড়া নিয়ে প্রতিনিয়ত ঝগড়া বিবাদ হচ্ছে। তারা কিলোমিটার প্রতি যে ভাড়া নেয়ার কথা তা নিচ্ছে না। কয়দিন ঝগড়া করা যায় বলেন। তাদের নতুন ভাড়ার কথা বললে তারা বলে— বাস কি সরকার চালায়, আপনারা সরকারকে গিয়ে বলুন, এমন কথা বলে পরিবহন শ্রমিকরা। রাজধানীর বাসের শৃঙ্খলা ফেরানোর দায়িত্ব আসলে কার? বলে জানান এ যাত্রী।

বাংলাদেশ শ্রমিক পরিবহন শ্রমিক লীগের সভাপতি মোহাম্মদ হানিফ খোকন আমার সংবাদকে বলেন, ‘বাসমালিকরা যে ভাড়া নির্ধারণ করে দেন সে ভাড়ায় তো বাস শ্রমিকদের আদায় করতে হয়। বাস শ্রমিকরা তো হুকুমের গোলাম। তাদের তো করার কিছু নেই। মালিকের কথায় শ্রমিকদের চলতে হয়। আমি উত্তর বাড্ডা থেকে গোলাপশাহ মাজারে আসি, এখানে আট কিলোমিটার, ভাড়া আসে ২০ টাকা, নিচ্ছে ৩০ টাকা।

১১ শতাংশ আসন খালি রেখে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়। অথচ এ ভাড়া যাত্রীদের দিতে হচ্ছে। সঠিক মনিটরিংয়ের অভাবে গণপরিবহনে নৈরাজ্য সৃষ্টি হচ্ছে। মালিকদের যে অভিযান তা হচ্ছে একটা আইওয়াশ। ভাড়া নিয়ে যে সমস্যা হচ্ছে তার জন্য সঠিক ও কার্যকর তদারকি করতে হবে।

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, আমরা গত দুই দিনে ২৮টি রোড পর্যবেক্ষণ করলাম এবং দূরপাল্লাতেও পর্যবেক্ষণ করলাম। সরকার যে পদ্ধতিতে মনিটরিং করছে তা সনাতন পদ্ধতি। বিআরটিএর যে তালিকা রয়েছে তা হেলপাররা বুঝতে পারে না। জনগণ ও হেলপাররা যদি না বুঝতে পারে তাহলে কিভাবে হবে। এ তালিকা যাতে সবাই বুঝতে পারে সেভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে। ভাড়া নির্ধারণ, প্রণয়ন, আদায়ে ও প্রদর্শনে ত্রুটি রয়েছে।

রাজধানীর প্রায় ৯০ শতাংশ বাস বিশৃঙ্খলভাবে চলাচল করছে। ১০ শতাংশ বাস রুট পারমিট অনুযায়ী চলাচল করছে। বাস মনিটরিংয়ে যে টিম রয়েছে তা খুবই সামান্য। এক স্থান থেকে আরেক স্থান কত কিলোমিটার, সে অনুযায়ী মোট কিলোমিটার যোগ করে ভাড়া কত হয়, বিস্তারিত ডিজিটাল ব্যানারের মাধ্যমে উল্লেখ করে বাসের দরজায় লাগিয়ে রাখতে হবে। তাহলে যাত্রী হয়রানি বন্ধ হবে। এ বিষয়ে জানতে বিআরটিএর চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদারকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
 

Link copied!