Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ০৭ জুন, ২০২৫,

আসিফ নজরুল

বিদায় হজের ভাষণ শুধু ধর্মীয় নয়, মানবসভ্যতার শ্রেষ্ঠ দলিল

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

জুন ৬, ২০২৫, ১১:৩৫ এএম


বিদায় হজের ভাষণ শুধু ধর্মীয় নয়, মানবসভ্যতার শ্রেষ্ঠ দলিল

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বিদায় হজের ভাষণকে মানবসভ্যতার ইতিহাসে অন্যতম শ্রেষ্ঠ ও বহুমাত্রিক তাৎপর্যময় দলিল হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এটি কেবল ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেই নয়, মানবাধিকার, সাম্য, সামাজিক ন্যায়বিচার ও সভ্যতার মৌলিক কাঠামোর দিক থেকেও অতুলনীয়।

শুক্রবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, “বিদায় হজের ভাষণ আমাদের পাঠ্যপুস্তকে বা দৈনন্দিন ধর্মীয় চর্চায় খুব বেশি গুরুত্ব পায় না। অথচ এটি মানবসভ্যতার ইতিহাসে কালজয়ী বক্তৃতাগুলোর মধ্যে অন্যতম।”

তিনি বলেন, “অনেক তথাকথিত ধার্মিক মানুষও এর প্রকৃত শিক্ষা ধারণ করে না। অনেকেই এই ভাষণের নাম পর্যন্ত জানেন না, কনটেন্ট তো দূরের কথা।”
রাসুল (সা.)-এর সর্বশেষ আনুষ্ঠানিক ভাষণ

ড. আসিফ নজরুল বলেন, দশম হিজরি সনে (৬৩২ খ্রিস্টাব্দ) রাসুলুল্লাহ (সা.) জীবনের প্রথম ও শেষ হজ পালন করেন। সেখানে আরাফার ময়দানে প্রায় সোয়া লাখ সাহাবির সামনে তিনি এই ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেন। তিনি ভাষণ শুরু করেন এভাবে: “হে জনতা, আমার কথাগুলো গভীর মনোযোগ দিয়ে শোনো, আমি জানি না, এবারের পর তোমাদের সঙ্গে এই জায়গায় আর একত্র হতে পারব কিনা।”

তিনি মন্তব্য করেন, “এই বাক্য থেকেই স্পষ্ট, নবীজি (সা.) ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, হয়তো তিনি আর বেশি দিন পৃথিবীতে থাকবেন না।”

বিদায় হজের ভাষণের ১০টি মূল শিক্ষা

ড. আসিফ নজরুল তার পোস্টে বিদায় হজের ভাষণের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ১০টি দিক তুলে ধরেন সংক্ষেপে

১. আল্লাহর একত্ব: আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়, সবার একদিন তাঁর কাছে জবাবদিহি করতে হবে।

২. সাম্যবাদের ঘোষণা: আরব-অনারব, শ্বেতাঙ্গ-কৃষ্ণাঙ্গ কারোর ওপর কারোর শ্রেষ্ঠত্ব নেই।

৩. সুদ নিষিদ্ধ ঘোষণা: জাহেলি যুগের সব সুদ নিষিদ্ধ করা হলো।

৪. রক্তের দাবি রহিত: অতীতের সব প্রতিশোধ ও রক্তের দাবি রহিত করা হয়।

৫. আমানত রক্ষা ও ঋণ পরিশোধ: প্রত্যেককে প্রাপকের কাছে তার আমানত ও ঋণ ফেরত দিতে হবে।

৬. নারীর অধিকার: স্ত্রীদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার, অধিকার রক্ষা এবং পারস্পরিক দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা।

৭. উত্তরাধিকার নির্ধারণ: আল্লাহর নির্ধারিত অংশ অনুযায়ী সম্পত্তি বণ্টনের নির্দেশ।

৮. কর্মচারী অধিকার: অধীনস্থদের প্রতি সদ্ব্যবহার ও সমান সুযোগ নিশ্চিত করা।

৯. কুরআন ও সুন্নাহর অনুসরণ: পথভ্রষ্টতা রোধে কুরআন ও সুন্নাহ আঁকড়ে ধরার পরামর্শ।

১০. ধর্মে বাড়াবাড়ি না করা: ধর্মের নামে জবরদস্তি বা বাড়াবাড়ির ফলে অতীত জাতিগুলো ধ্বংস হয়েছে—এ বিষয়ে হুঁশিয়ারি।

বিদায় হজের ভাষণের প্রাসঙ্গিকতা

আসিফ নজরুল লেখেন, “শুধু ধর্মীয় নয়, বিদায় হজের ভাষণ আজকের মানবাধিকার, সামাজিক সাম্য, অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার এমনকি রাষ্ট্রচালনার মৌলিক রূপরেখাও তুলে ধরে।” তিনি বলেন, “এই ভাষণের মাল্টিডিসিপ্লিনারি (বহু-বিষয়ভিত্তিক) তাৎপর্য আমাদের সমাজে খুব কম চর্চিত হয়, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।”

তিনি আরও বলেন, “আমার মতে, এই ভাষণের প্রিন্টেড কপি দেশের প্রতিটি মসজিদে টাঙিয়ে দেওয়া উচিত ছিল। যেখানে দুর্নীতি, অন্যায়, বিদ্বেষ, ধর্মব্যবসা ও অন্যের হক মেরে খাওয়ার সংস্কৃতি ছড়িয়ে আছে, সেখানে এ ভাষণ হতে পারে এক আলোকবর্তিকা।”

ইএইচ

Link copied!