Amar Sangbad
ঢাকা রবিবার, ০৫ মে, ২০২৪,

খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির কার্ড জিম্মি করে অর্থ আদায়ের অভিযোগ

ফরহাদ ইসলাম, জলঢাকা (নীলফামারী)

ফরহাদ ইসলাম, জলঢাকা (নীলফামারী)

আগস্ট ২৫, ২০২২, ০৪:০০ পিএম


খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির কার্ড জিম্মি করে অর্থ আদায়ের অভিযোগ

নীলফামারীর জলঢাকায় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির তথ্য হালনাগাদ (ভেরিফাইড ডাটাবেজ প্রণয়ন কার্যক্রম) করার জন্য সুবিধাভোগীদের জিম্মি করে ৩০০ থেকে ৫০০টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। এতে করে তৃণমুল পর্যায়ে সরকারের এ প্রকল্প প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। সরকার হতদরিদ্র এই সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে কোন প্রকার টাকা না নেওয়ার জন্য ভেরিফাইড ডাটাবেজ প্রণয়নে ১৫ টাকা করে বরাদ্দ দিলেও উল্টো সুবিধাভোগীদের কাছ থেকেই টাকা আদায় করছেন সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানসহ সদস্যরা।

উপজেলা খাদ্য অফিস সূত্রে জানা যায়, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ ক্ষুধা হবে নিরুদ্দেশ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ২০১৫-১৬ অর্থ বছর থেকে জলঢাকা উপজেলায় ১১ টি ইউনিয়নে মোট  ২৫ হাজার ২০৩ জন অসহায় হতদরিদ্র মানুষকে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বছরে ৫ মাস ১০ টাকা কেজি দরে সুবিধাভোগীরা ৩০ কেজি করে চাল পায়। চলতি বছরের ১৩ জুন খাদ্য অধিদপ্তর থেকে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির সুবিধাভোগীদের ডাটাবেজ প্রণয়নের জন্য স্ব স্ব দপ্তরে প্রত্যেক সুবিধাভোগীদের অনলাইন বাবদ ১৫ টাকা করে ব্যয় ধরে চিঠি দেওয়া হয়। সে অনুয়ায়ী খাদ্য দপ্তর প্রতিটি ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের ইউডিসিদের প্রশিক্ষণ প্রদান করেন।

সরেজমিনে উপজেলার গোলমুন্ডা ইউনিয়নে দেখা যায়,৩০০ থেকে ৫০০ টাকা নিয়ে সুবিধাভোগিদের ভোটার আইডি কার্ডে সিল ও স্বাক্ষর করে সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্যরা পাঠাচ্ছেন ইউডিসিদের কাছে ।

ওই ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের রহিমা বেগম নামে এক সুবিধাভোগি জানান, সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য মাজেদুল ইসলাম তার কাছে ৫০০ টাকা নিয়ে ভোটার আইডি কার্ডে স্বাক্ষর করে দিয়েছেন। সেই স্বাক্ষর করা কাগজ নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে এসেছেন অনলাইন করতে। ভোটার আইডি কার্ডে সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্যের স্বাক্ষর না থাকলে সে কাগজ অনলাইন করছেন না ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে দায়িত্বরত ইউডিসিরা।

এ ছাড়াও ওই ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের সুবিধাভোগি রোকেয়া বেগম, ৮নং ওয়ার্ডের মহেসিন, আব্বাস, ৬নং ওয়ার্ডের মমিনা বেগমসহ অনেকে জানান, সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের মেম্বাররা ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা নিয়ে শুধু তাদের ভোটার আইডি কার্ডে সিল স্বাক্ষর দিয়েছে, এখন অনলাইন করার জন্য পরিষদে এসেছেন।

অপর দিকে প্রাধানমন্ত্রীর এ খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির তথ্য হালনাগাদকে পুঁজি করে ব্যতিক্রম অর্থ বানিজ্য করছে বালাগ্রাম, কৈমারী, শৌলমারী, খুটামারা, মীরগঞ্জ, গোলনাসহ উপজেলার সকল ইউনিয়ন পরিষদ। বালাগ্রাম ইউনিয়নে সুবিধাভোগিদের কাছ থেকে জনপ্রতি ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা নিয়ে শুধু মাত্র তাদের ভোটার আইডি কার্ডে সিল স্বাক্ষর দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্যরা। পরবর্তীতে আবার একই সুবিধাভোগিদের জিম্মি করে অতি দরিদ্র এসব পরিবারের কাছ থেকে বসত বাড়ির বাৎসরিক মূল্যের উপর কর বাবদ রশিদের মাধ্যমে নেওয়া হচ্ছে ২০০ টাকা। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির তথ্য হালনাগাদ করতে বালাগ্রাম ইউনিয়নে সুবিধাভোগিদের দুই ধাপে মোট খরচ ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা। 

ওই ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের সুবিধাভোগি সেরাজুল, ৬নং ওয়ার্ডের সুশিল চন্দ্র, ৯নং ওয়ার্ডের মনিরুজ্জামানসহ অনেকেই বলেন, সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের মেম্বাররা সিল স্বাক্ষর দিয়ে আগেই ৩০০ টাকা করে নিয়েছে, এখন পরিষদে অনলাইন করতে সচিব আবার ২০০ টাকা নিয়ে তারপর অনলাইন করছে।

রশিদের মাধ্যমে অর্থ নেওয়ার বিষয়ে বালাগ্রাম ইউপি সচিব তছলিম উদ্দিন বলেন, আমি চেয়ারম্যানের নির্দেশে ২০০ টাকা করে কর আদায় করছি। খাদ্যবান্ধব কার্ডকে জিম্মি করে কর আদায়ের বিষয়ে সরকারি কোনও নির্দেশনা আছে কি না তা জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।

সুবিধাভোগিদের কাছ থেকে অর্থ নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে গোলমুন্ডা ১নং ওয়ার্ডের ইউ’পি সদস্য মাজেদুল ইসলাম বলেন, আমরা সমন্বয় করে ৯০ ভাগ সুবিধাভোগিদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছি। শেখ হাসিনা কয় টাকা বেতন দেয়, জনগনের কাছে ছাড়া কার কাছে টাকা নিবো? ভোটের সময় খরচ হওয়া ১৫ লাখ টাকা কার কাছ থেকে তুলবো?

এ বিষয়ে গোলমুন্ডা ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, টাকা নেওয়ার বিষয়ে নিষেধ করেছি, তারপরেও কেউ নিয়ে থাকলে দায়দায়িত্ব তার।

বালাগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান আহম্মেদ হোসেন ভেন্ডার বলেন, আমরা পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ি কর আদায় করছি। এর বাইরে ইউ’পি সদস্যরা অতিরিক্ত টাকা নিয়ে থাকলে আমি তা জানি না।

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) তৌহিদুর রহমান বলেন, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডাটাবেজ প্রণয়নে কোন প্রকার অর্থ আদায়ের নির্দেশনা নেই, সুবিধাভোগিদের ডাটাবেজ তৈরিতে জনপ্রতি সরকারই ১৫ টাকা করে বরাদ্দ দিয়েছেন।

জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহবুব হাসান বলেন, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে কোন প্রকার অর্থ নেওয়ার নিয়ম নেই, কেউ নিয়ে থাকলে অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কেএস 

Link copied!