Amar Sangbad
ঢাকা রবিবার, ০৫ মে, ২০২৪,

নির্দেশ অমান্য করে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে ছাদ ঢালাই

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি

নভেম্বর ৯, ২০২২, ০৬:১৭ পিএম


নির্দেশ অমান্য করে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে ছাদ ঢালাই

মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার ডাকরখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে ভবন নির্মাণের অভিযোগে উঠলে মানিকগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি-শিক্ষা ও আইসিটি) শুক্লা সরকার ওই ভবনের ছাদ ঢালাইয়ের কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। কিন্তু সেই নির্দেশনা অমান্য করে সোমবার (৭ নভেম্বর) উপজেলা প্রকৌশল অফিসের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মাসুদুর রহমানের উপস্থিতিতে ওই ভবনের ছাদ ঢালাইয়ের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এ ঘটনায় ওই স্কুলের শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এর আগে নির্মাণ কাজ ধীরগতিতে হওয়ায় ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা প্রকৌশলী ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন।

জানা যায়, ডাকরখালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়। কিন্তু সেই ভবন নির্মাণে ঢালাইয়ের কাজে ব্যবহার করা হয়েছে ময়লাসহ নিম্নমানের বালু ও ইটের খোয়া। আর এই ইটের খোয়া, বালু ও সিমেন্ট মেশিন দ্বারা মেশানোর কথা থাকলেও তা না করে ঠিকাদার শিশু শ্রমিক দিয়ে হাতে মিশিয়ে পিলারে ঢালাইয়ের কাজ করেছে। অনিয়মতান্ত্রিকভাবে নিম্নমানের এসব সামগ্রী দিয়ে পিলার নির্মাণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী ফয়জুল হক ওই উপজেলা প্রকৌশল অফিসের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মাসুদুর রহমানকে পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব দেন। তার পর্যবেক্ষণ শেষে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে ভবনের পিলার নির্মাণের সত্যতা পান। পরে উপজেলা প্রকৌশলী নির্মিত পিলারের লোকদেখানো মাত্র ২টি পিলার ভেঙ্গে বাকি পিলারগুলো অক্ষত রাখেন। গত ৭ নভেম্বর ওই পিলারের ওপরেই ছাদ ঢালাইয়ের কাজ শুরু করেন। এতে স্কুলের অভিভাবকসহ স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

এ বিষয়ে ঠিকাদারের প্রতিনিধি বায়েজিদ বলেন, এখন রড সিমেন্ট ও ইটসহ সব কিছুর দাম বাড়ার কারণে কাজের মান একটু এদিক সেদিক হতে পারে। তবে এই কাজটি অমরেশ নামে এক ঠিকাদার আমাদের কাছ থেকে সাব কন্ট্রাক নিয়ে কাজ শুরু করে। কিছুদিন যাবার পর তারা আর কোন কাজ না করে আমাদেরকে ২০ লক্ষ টাকার কাজ হয়েছে বলে একটি ভাউচার ও মাল সামগ্রী ধরিয়ে দিয়ে এখান থেকে চলে যায়। এজন্য কাজটি শেষ হতে সময় লাগছে। তারা যেসব মাল সামগ্রী রেখে গেছে সেগুলো মানের দিক থেকে কেমন তা আমি বলবো না।

এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সাইদ হোসেন বলেন, তিন বছর হলো বিদ্যালয়ে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে কিন্তু কাজ ঢিলেঢালাভাবা চলছে। কাজের গুনগতমান জানার জন্য ইস্টিমেট চাইলে উপজেলা প্রকৌশলী ও ঠিকাদার আমার কথায় কোন পাত্তা দেয়না। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা প্রকৌশলী ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু তাতেও কোন কাজ হয়নি।

এ বিষয়ে হরিরামপুর উপজেলা প্রকৌশলী মুহাম্মদ ইরাজ উদ্দিন দেওয়ানের মোবাইল ফোনে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

তবে মানিকগঞ্জ এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফয়জুল হক বলেন, আমি একটি ট্রেনিংয়ে ঢাকায় রয়েছি। ওই স্কুলের ভবনের পিলার নিম্নসামগ্রী দিয়ে তৈরি করার অভিযোগ উঠায় দুটি পিলার ভেঙ্গে নতুন করে তৈরি করা হয়েছে। আর ছাদ ঢালাইয়ের কাজ বন্ধ রাখার আমার অফিসে কোন লিখিত নির্দেশনা পায়নি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা যদি আমার উপজেলা প্রকৌশলীকে টেলিফোনে ঢালাইয়ের বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন তবে ঢালাইয়ের কাজ তো বন্ধ রাখার কথা।

এ ব্যাপারে হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম জানান, স্কুলের ওই ভবন নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে তৈরি করার অভিযোগ আছে বলে এডিসি স্যার আমাকে টেলিফোন করে ছাদ ঢালাইয়ের কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। তবে আমার অসুস্থ বাচ্চা নিয়ে আমি অফিসের বাইরে থাকায় ওই স্কুলে সরেজমিন পরিদর্শনে যেতে পারি নাই। তবে টেলিফোন করে আমি উপজেলা প্রকৌশলীকে ছাদ ঢালাইয়ের কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছি।

এ বিষয়ে ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বলেন, আমাকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওই স্কুলে ছাদ ঢালাইয়ের কাজ পরিদর্শন করতে বলেন। ওই স্কুলে দিয়ে দেখলাম যে খোয়া দিয়ে ঢালাই চলছে তার মধ্যে অনেক খোয়ার ফাঁকি রয়েছে। আর খোয়ার মান খুব একটা ভালো না আবার একেবারে নিম্নমানেরও না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি-শিক্ষা ও আইসিটি) শুক্লা সরকার বলেন, ওই স্কুলে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে ভবনের পিলার নির্মাণ করা হয়েছে এবং সেই পিলারের ওপর ছাদ ঢালাইয়ের কাজ চলছে বলে জানার পর আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে কথা বলি। ঢাকার ঊর্ধ্বতন প্রকৌশলী টিম পরিদর্শন ব্যতীত ওই স্কুলের ছাদ ঢালাইয়ের কাজ বন্ধ রাখার জন্য আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেই। তারপরও যদি ছাদ ঢালাইয়ের কাজ সম্পন্ন হয়ে থাকে তবে বিষয়টি উপজেলা প্রকৌশলী দেখার কথা।

এসএম

Link copied!