Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

মাগুরা ক্রয়ক্ষমতার বাইরে দ্রব্যমূল্য

মাছ-মাংস কেনার আশা বাদ অধিকাংশ ক্রেতার

মিরাজ আহমেদ, মাগুরা:

মিরাজ আহমেদ, মাগুরা:

মার্চ ২৪, ২০২৩, ০৪:১৬ পিএম


মাছ-মাংস কেনার আশা বাদ অধিকাংশ ক্রেতার

মাগুরা পুরাতন বাজারে কেনাকাটা করতে এসেছিলেন শান্তিপাড়া এলাকার রেজাউল ইসলাম।ছোলা,চিনি,তেল,ডাল ও বেসন কিনলেও তা ছিল চাহিদার অর্ধেক। দুটি ব্যাগ আনলেও একটি ভরতেই টাকা শেষ।রেজাউলের ভাষ্য, আগে দাম কম থাকায় ইচ্ছামতো কিনতেন।

এখন বাজার অনিয়ন্ত্রিত,আয়ও বাড়ছে না। আগে রমজান মাসে কয়েক কেজি খেজুর কিনলেও এখন এক কেজিও কেনা যাচ্ছে না,দাম বেশি।

ইসলামবাগ-শান্তিবাগ এলাকার রিকশা চালক সোহাগ সরদার রোজা শুরুর আগে বৃহস্পতিবার কেনাকাটা করতে এসেছিলেন মাগুরা ঢাকারোড কাঁচা বাজার আড়ৎ এলাকায়,তবে জিনিসপত্রের দাম দেখে কণ্ঠে ঝরে পড়ল আক্ষেপের সুর। তিনি বলেন,‘যে দাম তাতে আর জীবন বাঁচে না। কী আর বলবো ভাই বলার ভাষা নেই। রমজানে প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনতে,রেজাউল ও সোহাগের মতো নিম্ন আয়ের মানুষ জমানো,বা অল্প আয়ের কিছু টাকা নিয়ে বাজারে এলেও খুশি মনে ফিরতে পারছেন না। বাড়তি দামের কারণে মাছ-মাংস কেনার আশা ছেড়েছেন আগেই। শাক-সবজি কিনতে গিয়েও ফেলতে হচ্ছে দীর্ঘশ্বাস। ঘুরতে হচ্ছে দোকান দোকান এ আশায় কোন দোকানে কম টাকায় পন্য সামগ্রিই ক্রয় করতে পারবেন। ছোট ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের অভিযোগ, বড় ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় ক্রেতাদের ওপর ধকল যাচ্ছে। যদিও বাজার তদারকি করছেন মাগুরা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। মূল্য তালিকা না রাখায় সতর্ক ও বেশি দামে পণ্য বিক্রি করায় জরিমানা করা হচ্ছে। তবে স্বস্তি ফিরছে না বাজারে।

মাগুরা ঢাকা রোডস্থ কাঁচা বাজার আড়ৎ,পুরাতন বাজার,নতুন বাজার,ভায়না কাঁচা বাজার,স্টেডিয়াম গেট,পুলিশ লাইন,ইটখোলা বাজার ঘুরে জানা গেছে,ক্রেতা সংকট,পন্যের দাম বেশি যাবতীয় নৃত্যপ্রয়োজিনও মালামাল সহ কাঁচা মাছ মাংসের। এবার ৫-৭ ধরনের খেজুরের চাহিদা বেশি। গত বছর প্রতি কেজি আজওয়া ৪০০ টাকায় বিক্রি হলেও এবার পাইকারি ৭০০ ও খুচরা ৭৫০ থেকে ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দাম ১১০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। ফল ব্যবসায়ী মনজুরুল ইসলাম বলেন,আগে আড়তদারকে ১ লাখ টাকা দিলে ৩-৪ লাখ টাকার পণ্য নেওয়া যেত। এখন যে পরিমাণ টাকা,তার সমান পণ্য দেয়। আমদানি কম,খরচ বেশি।এলসি জটিলতা ও আমদানি শুল্ক বেড়ে যাওয়ায় দাম ঊর্ধ্বমুখী।

৯০ টাকা কেজি ছোলা বিক্রি হলেও সরকার নির্ধারিত দামে মিলছে না চিনি। খোলা দেশি চিনি১২০-১৩০ টাকা কেজি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন,অতীতে রমজানের আগে বেচাকেনা বাড়লেও এবার ক্রেতার ভিড় কম,কিনছেনও কম।

এ দিকে মাগুরা পুরাতন গোস্ বাজার সমিতির সভাপতি রতন,শুক্রবার দুপুরে দৈনিক আমার সংবাদ এর সাক্ষাৎ কারে বলেন,গরুর মাংস ৭৫০ ও খাসির মাংস ৯০০-১০০০টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। ব্রয়লার মুরগি কিনতে হচ্ছে ২৫০-২৬০ টাকায়। গত সপ্তাহে গরু ৫৫০,খাসি ৭০০ ও ব্রয়লার মুরগি ২২০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। মাগুরা জেলার বাহিরে থেকে যদি অধিক হারে ব্যাপারি আসে তাহলে গোসের চাহিদা বাড়ঁতে পারে সে ক্ষেতে বিশ রমজানের শেষদিকে আরো দাম বৃদ্ধি হতে পরে বলে ধারনা করেছেন তিনি।

মাগুরা মুরগি গোস ব্যবসায়ীদের দাবি, মুরগির সরবরাহ রমজানে বাড়বে। তবে দাম কমার সুযোগ নেই। সোনালি ৩৫০-৩৬০ ও দেশি মুরগি ৫০০-৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাছের দামও ৫০থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

২৪শে মার্চ শুক্রবার সকাল (প্রথমরমজান)দৈনিক আমার সংবাদ এর সাক্ষাৎ কারে মাগুরা একতা কাঁচা বাজার সমিতির সভাপতি মোঃ হাসান আলী বিশ্বাস বলেন, কাঁচা মালের আমদানির উপর নির্ভর করে পন্যের দাম,আপাতত সব ঠিকঠাক রয়েছে মাগুরা ঢাকা রোডস্থ কাঁচা বাজার একতা আড়ৎ এলাকায়,বাকিটা বলা মুশকিল কাঁচা মালের আমদানি-রপ্তানির উপর নির্ভরশীল প্যনের দাম।

একাধিক বাজারে দেখা গেছে,ধনিয়া পাতা,ফুলকপি,মটরশুঁটিসহ সবজির দাম ঊর্ধ্বমুখী। কমেছে রসুন ও শজনে ডাঁটার দাম। চাল-ডাল-তেলের দামঅপরিবর্তিত। আগের সপ্তাহের ২৫ টাকার টমেটো এখন ৩০-২৫ টাকার গাজর ৩০; ২০ টাকার শসা ২৫-৩০; ২০ টাকা বেড়ে চিকন বেগুন ৪০; ৩০ টাকার বেগুন ৬০; ১৫ টাকার পেঁপে ২০; ২০ টাকার লেবু (হালি) ৩০; ৮০ টাকার কাঁচামরিচ ১০০; ৪০০ টাকার শুকনো মরিচ ৪৫০-৫০০ টাকা হয়েছে। ২৫ টাকার লাউ ৩০-৪০ টাকা- ৫০ টাকা কেজি ধনিয়া পাতা ৭০-৮০; ২৫ টাকা হালি কলা ৩০; ২০ টাকার মিষ্টিকুমড়া ৩০-৩৫; ২০ টাকার শিম ২৫-৩০ ও ২৫ টাকার ফুলকপি ৩০-৪০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। শাকের আঁটি ১৫-২০ টাকা। পটোল,ঢেঁড়স ও মটরশুঁটির দাম বেড়েছে ১০থেকে ৩০ টাকা।আখের গুর ১২০-১৪০টাকা কেজি,দুধ প্রতি লিটার ৮০টাকা,এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন ১৮৭ টাকা,দুই লিটার ৩৭৪ ও খোলা ১৬০-১৯০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। প্যাকেট আটা ৬৫-৬৮ ও খোলা আটা ৫৮ থেকে ৬০ টাকা; ছোলা ৯০-১০০ ও প্যাকেট ময়দা ৭৮-৮০ টাকা কেজি। এ ছাড়া লবণ ৪০, মোটা মসুর ডাল ১০০, চিকন মসুর ১৩০,বুট ১০০, খেসারি ৮৫ ও মুগ ডাল ১৪০ টাকা কেজি পাওয়া যাচ্ছে।

হোটেল-রেস্তোঁরাসমূহে স্বাস্থ্যকর পরিবেশে ও পরিচ্ছন্নভাবে নিরাপদ মানসম্মত খাদ্যসামগ্রী তৈরি ও বিক্রয় নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সচেতনতামূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে । সৈয়দ আতর আলী গণগ্রন্থাগারে অনুষ্ঠিত এ সচেতনামূলক সভায় উপস্থিত ছিলেন জনাব মোহাম্মদ মামুনুল হাসান, সহকারী পরিচালক, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, মাগুরা; জনাব মো: রিয়াজ মাহমুদ, নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা,বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, মাগুরা; জনাব দিলীপ কুমার প্রামাণিক,জেলা স্যানেটারি ইন্সপেক্টর ও নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক,  মাগুরা ও  জনাব কামরুজ্জামান, স্যানেটারি ইন্সপেক্টর, মাগুরা পৌরসভা, মাগুরা এবং বাংলাদেশ হোটেল মালিক সমিতির মাগুরা জেলার সদস্যবৃন্দ।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর

মাগুরা জেলার অধীনে অনুষ্ঠিত হয়েছে, মাগুরায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন,২০০৯ নিয়ে সচেতনতামূলক সভা বিনোদপুর বসন্ত কুমার মাধ্যমিক বিদ্যালয় মহম্মদপুরে। মাহে রমজান উপলক্ষে তদারকিমূলক অভিযান,হয়েছে আলুকদিয়া বাজারে এ ছাড়া ও তদারকিমূলক অভিযান ২১-০৩-২০২৩ নতুন বাজার, মাগুরা। নকল প্যারাসুট তেল ও মেয়াদ উত্তীর্ণ কসমেটিকস বিক্রয়ের জন্য লোকনাথ কসমেটিকসকে ৩৫,০০০/- জরিমানা এবং বিক্রয় কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ।

 

এ তদারকি কার্যের সময় উপস্থিত ছিলেন জনাব দিলীপ কুমার প্রামাণিক,জেলা স্যানিটারি ইন্সেপক্টর, মাগুরা। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন মাগুরা জেলা পুলিশের একটি টিম। জনস্বার্থে এ সকল অভিযান চলমান থাকবে বলে জানিয়েছেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর মাগুরা। সবাই সমন্বিতভাবে কাজ করলে বাজারে সংকট হবে না। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক আছে। কারসাজি করে দাম বাড়ানোর চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সংকট এড়াতে ভোক্তাদের একসঙ্গে এক সপ্তাহের বেশি বাজার না করার অনুরোধ জানান।

এদিকে ১ম রমজান উপলক্ষে মাগুরা জেলা কেন্দ্রীয় জামেমসজিদে দুপুর ১.৩০ মিনিটে জুম্মার নামাজ শেষে নামাজের মুসুল্লি ও মাগুরা জেলার বিশিষ্ট ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে মাগুরা জেলা প্রশাসক,মোহাম্মদ আবু নাসের বেগ বলেন,পবিত্র রমজান উপলক্ষে অসৎপথ অবলম্বন করে কোন প্রকার নৃত্য প্রয়োজনীয় মালামালের মৃল্য বৃদ্ধি না করার আহবান জানান সবার প্রতি।  

সেই সাথে তিনি আরো বলেন,কোনো ভাবে অধিক হারে পন্য সামগ্রিই মজুদ রাখতে নিষেধ ও করেন। তিনি বলেন,পন্য সামগ্রিই মজুদ করে,বাজারে পন্যের চাহিদা দেখিয়ে মূল্য বৃদ্ধি করা যাবে না। এবং সেই সাথে রমজানের পবিএতা বজায় রেখে চলতে সবার প্রতি আহবান জানান তিনি।


আরএস

Link copied!