Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ০৮ মে, ২০২৪,

সমন্বয়হীন উন্নয়নে দুর্ভোগের নগরী সৈয়দপুর

নুর মোহাম্মদ ওয়ালীউর রহমান রতন, (সৈয়দপুর) নীলফামারী

নুর মোহাম্মদ ওয়ালীউর রহমান রতন, (সৈয়দপুর) নীলফামারী

আগস্ট ২৪, ২০২৩, ০৬:২৪ পিএম


সমন্বয়হীন উন্নয়নে দুর্ভোগের নগরী সৈয়দপুর

সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার অভাব ও নানামুখী সমস্যার আবর্তে নিজস্ব স্বকীয়তা হারাচ্ছে সৈয়দপুর শহর। সমন্বয়হীন নগরায়ণ ও নানামুখী সঙ্কটে এক সময়ের তিলোত্তমা নগরী পরিণত হয়েছে জনদুর্ভোগের নগরীতে।

সূত্র মতে, সৈয়দপুর শহরের উন্নয়ন ও সেবা-পরিষেবায় ওতপ্রোতভাবে জড়িত রেলওয়ে, পৌরসভা, বিভিন্ন এনজিওসহ সরকারি ও বেসরকারি প্রায় ১০টি সংস্থা। অথচ সংস্থা ও বিভাগগুলোর মধ্যে সমন্বয় না থাকায় পরিকল্পনাহীনভাবে চলছে শহরের উন্নয়ন ও পরিষেবা কার্যক্রম।

সংস্থাগুলো নিজেদের ইচ্ছামতো কার্যক্রম পরিচালনা করায় শহর বিস্তৃত হচ্ছে অগোছালোভাবে। ফলে শহরটি দিন দিন হয়ে পড়ছে বসবাস অযোগ্য। সৈয়দপুর শহরের সৌন্দর্য ও ভারসাম্য রক্ষায় অপরিহার্য অনুষঙ্গ হচ্ছে-পরিকল্পিত সড়ক ব্যবস্থা, মানসম্পন্ন মার্কেটিং প্লেস, জনসংখ্যা অনুপাতে উন্মুক্ত প্রাকৃতিক পরিবেশ, খেলার মাঠ এবং শিশু ও বয়স্কদের বিনোদন কেন্দ্র। যার সবই অনুপস্থিত এই শহরে।

এখানে নগর উন্নয়নের প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে শহর কেন্দ্রের জমির মালিকানা নিয়ে সৈয়দপুর পৌরসভা ও রেলওয়ের দ্ব›দ্ব। শহরের বাণিজ্যিক ২৫.৭৫ একর জমির মালিকানা নিয়ে রেলওয়ে ও পৌরসভার মধ্যে চলছে রশি টানাটানি। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে পরিকল্পিত উন্নয়ন। ভোগ-দখলকারীরা পৌরকর ও রেলওয়ে জমির বাণিজ্যিক খাজনা পরিশোধ সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিশেষ ব্যবস্থায় ম্যানেজ করে নির্মাণ করেছে বহু স্থায়ী অবকাঠামো।

বহুতল ভবন নির্মাণের নীতিমালা ও বিল্ডিং কোড মানেনি ভবন নির্মাণকারীরা। রাজনৈতিক কারণে কোনো বাধা দেয়নি স্থানীয় প্রসাশন বা রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। যেনতেনভাবে বহুতল ভবন নির্মাণ করায় বিক্ষিপ্ত ভবনের শহরে পরিণত হয়েছে সৈয়দপুর।

প্রায় ২০০ বছর আগে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানাকে ঘিরে গোড়াপত্তন হয় সৈয়দপুর শহরের। সে সময় গড়ে ওঠা ৮টি সড়কেই বিস্তৃত ছিল শহরটি। কিন্তু কাল পরিক্রমায় শহরের বিস্তৃতি ও জনসংখ্যা কয়েকগুণ বাড়লেও সে তুলনায় গড়ে ওঠেনি সড়ক যোগাযোগ। ফলে সড়কপথে চলাচলে দুর্ভোগ বাড়ছে নগরবাসীর।

এ ছাড়াও তদানীন্তন ব্রিটিশ-ভারতে তিলোত্তমা নগরী হিসেবে সৈয়দপুরের যে সুখ্যাতি ছিল অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও অধিক জনবসতির কারণে সে ঐতিহ্যও হারিয়ে ফেলেছে শহরটি। একসময় শহরের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার জন্য মজুদ পানির জলাধার বেদখল, ড্রেন ও নালার ওপর ঘরবাড়ি, অপরিকল্পিতভাবে মার্কেট, দোকানপাট নির্মাণ করায় শহরটি হারিয়েছে তার আগের স্বকীয়তা।

পাশাপাশি বিভিন্ন সড়কের দুই ধারের পুরনো গাছগুলো কেটে উজাড় করায় বিলুপ্ত হয়েছে সবুজ বনানীর মুগ্ধতাও। এতে ভারসাম্যহীন নগরীতে পরিণত হয়েছে সৈয়দপুর। ফলে প্রতিনিয়ত বাড়ছে জনদুর্ভোগ।

এ ব্যাপারে নীলফামারী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সহসভাপতি আফতাব আলম জুবায়ের বলেন, ‘৫০ বছর আগে এই শহরের বসতি ছিল ৩০ হাজার। জনসংখ্যা গাণিতিক হারে বেড়ে যাওয়ায় নতুন নতুন বসতি এবং নিত্যদিন বহিরাগতদের আগমনে ঘিঞ্জি এ শহরে এখন প্রায় পাঁচ লাখ মানুষের বসবাস। তবে শহরে সে অনুপাতে বাড়েনি নাগরিক সুবিধা। পুরো শহরটি গড়ে উঠছে অপরিকল্পিতভাবে।’

দেশের অষ্টম বাণিজ্যিক শহর হিসেবে পরিচিত সৈয়দপুর শহরে দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে মানুষ আসছে প্রতিনিয়ত। তবে আধুনিক নগরায়ণের পরিকল্পনা ও সমন্বয় না থাকায় কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রগুলো সীমিত হয়ে আসছে ক্রমাগত। আধুনিক নাগরিক জীবনের আবশ্যিক অনুষঙ্গ বিদ্যুৎ, পানি, সড়ক, বিনোদন কেন্দ্র, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, পানি ও পয়ঃবর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থা, কসাইখানার স্বল্পতায় প্রতিটি ক্ষেত্রে নাগরিক সুবিধা হচ্ছে সঙ্কুচিত।

এ বিষয়ে সৈয়দপুর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, এ শহরের উন্নয়নে মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের চেষ্টা চলছে। স¤প্রতি এ নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনিক কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতারা, জনপ্রতিনিধি, উন্নয়ন এবং সেবাদানকারী সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে একটি মতবিনিময় সভাও অনুষ্ঠিত হয়েছে। উদ্দেশ্য বিদ্যমান সঙ্কট নিরসন করে নাগরিক সেবা নিশ্চিত করা। তবে এ জন্য সময়ের প্রয়োজন।

সূত্র মতে, সৈয়দপুর শহরে পিকআপ, মাইক্রো, ট্রাক, ট্যাঙ্কলরি, ভটভটি ট্রাক্টর, অটোরিকশাসহ প্রায় ২০ হাজার যানবাহন প্রতিদিন চলাচল করে। এখানকার পাঁচমাথা মোড়, দিনাজপুর সড়কের মদিনা মোড়, পোস্ট অফিস মোড়, বাস টার্মিনাল মোড়সহ বিভিন্ন পয়েন্টে তীব্র যানজট এখন নিত্যনৈমিত্তিক বিষয়। শহরের যানজট নিয়ন্ত্রণে পুলিশের স্বতন্ত্র ট্রাফিক বিভাগ থাকলেও লোকবল সঙ্কটের কারণে তারাও রাখতে পারছে না কাক্সিক্ষত ভূমিকা। ফলে দিন দিন তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে শহরের যানজট।

এ ব্যাপারে সৈয়দপুর বণিক সমিতির সভাপতি ইদ্রিস আলী বলেন, ‘যানবাহনের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় শহরবাসীর দুর্ভোগ বেড়েছে। এই সঙ্কট নিরসনে মোটর মালিক, শ্রমিক, সৈয়দপুর পৌর কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাজে সমন্বয় প্রয়োজন।’

এইচআর

Link copied!