Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৯ মে, ২০২৪,

চৌগাছায় আমনে বিঘায় ক্ষতি ৫ হাজার

এম. এ. মান্নান, চৌগাছা (যশোর)

এম. এ. মান্নান, চৌগাছা (যশোর)

নভেম্বর ৪, ২০২৩, ০৯:৪৭ পিএম


চৌগাছায় আমনে বিঘায় ক্ষতি ৫ হাজার

যশোরের চৌগাছায় আমন-ধান কাটা শুরু হয়েছে। বিঘাপ্রতি ৫ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। উঠছেনা উৎপাদন খরচ, ফলে বর্গাচাষীদের মাথায় হাত। কার্তিক মাসে ধান তোলার ধুম পড়েছে কৃষকের ঘরে ঘরে। অনেকটা ক্ষতি পুষিয়ে ওঠার স্বপ্ন বুনছেন কৃষকরা। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে যখন নিন্ম-আয়ের মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে ঠিক তখনই আগাম ধান কৃষকের মুখে হাঁসি ফুটিয়েছে। কিন্তু সেই খুশি ম্লান করে দিচ্ছে লোকসানে। ধান ঘরে তুললেও দাম কম তাই চাষিরা খুশি হতে পারছেন না।

শনিবার (৪ নভেম্বর) উপজেলার বিভিন্ন মাঠে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাঠে মাঠে আগাম ধান কাটা শুরু হয়েছে। কেউ ধান কাটছেন আবার কেউ ধান বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন। কেউবা জমিতে ও বাড়ির উঠোনে ধান মাড়াই কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। চলতি মাসেই চৌগাছা উপজেলায় আগাম জাতের আমন ধান কাটা ও মাড়াই শুরু হয়েছে। এক সপ্তাহ পরে শুরু হবে ধান কাটার মহোৎসব। ব্যস্ততম সময় কাটাবে কৃষক-কৃষানীদের। খুব সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলবে সোনালী স্বপ্ন ঘরে তোলার কাজ। ধানের দাম ভালো না থাকায় চাষিদের মন বেজার। 
অপরদিকে মজুরি বেশি ও শ্রমিক সংকট থাকায় অনেকে পড়েছেন বেকায়দায়। কোন কোন এলাকায় ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজে কৃষি শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। এদিকে বাজার ঘুরে জানা গেছে প্রতি মণ ধান বিক্রি হচ্ছে ১১০০ থেকে ১২০০ টাকায়। ধানের দাম ভালো না হওয়ায় কৃষকের মাথায় হাত।

উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলাম জানান, চলতি আমন মৌসুমে এ উপজেলায় আগাম জাতসহ ব্রি-৫১, বি-৪৯, ব্রি-৭৫, ব্রি-৮৭, রডমিনিকেট, বিনা -১৭, স্বর্না ও প্রতীক জাতের ধানের আবাদ করা হয়েছে ১৮ হাজার ২৪০ হেক্টর জমিতে। যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭৯ হাজার ৮৫০ মেট্রিক টন।

উপজেলার বাঘারদাড়ি গ্রামের কৃষক নুরুনব্বী বলেন, সার-কিটনাশকের মূল্য বৃদ্ধি হওয়ায় আর্থিক সংকটের মধ্যেও ধান চাষ করেছি। গত বছর এক বিঘা জমির ধান কাটা ও মাড়াই করতে দুই থেকে তিন হাজার টাকা লেগেছে। পোকার আক্রমণ আর নানা রোগবালাইয়ের পরও এবারও আমন ধানের বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষকরা। এবার প্রায় দুই গুণ বেশি মজুরি দিতে হচ্ছে তবুও শ্রমিক সংকট। কার্তিক মাসে আগাম ধান পেয়ে কৃষকরাও খুশি। তবে বর্তমানে ধানের দাম তুলনামূলক অনেক কম।

সিংহঝুলী গ্রামের কৃষক রবিউল ইসলাম বলেন, দুই বিঘা জমির ধান কাটা-মাড়াই শেষ করেছি। আগাম ধান ঘরে উঠাতে পেরে খুশি। এবার অনেক ধার দেনা করে আমন ধান করেছিলাম। ধানের দাম ভালো না পাওয়ায় দেনা শোধ করতে পারছিনা।

তিনি বলেন, এ বিঘা আমন ধানে জমি লীজ, বীজতলা তৈরী, জমি তৈরী, রোপন, সার, ঔষুধ, নিড়ানী, সেচ, কাটা, মাড়াই ও বহন বাবদ খরচ হয় প্রায় ২৪ হাজার টাকা। এক বিঘায় ধানের ফলন হয়েছে গড়ে ১৫/১৬ মন। বর্তমান বাজারে প্রতিমন ধান বিক্রি হচ্ছে ১১০০/১২০০ টাকা। নিজের হাড়ভঙ্গা পরিশ্রম বাদ দিলেও প্রতি বিঘায় প্রায় ৫ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। ফলে বর্গাচাষীদের মাথায় হাত পড়েছে। ধান চাষে যে খরচ হয়েছে তাতে কম পক্ষে ১৫’শ টাক মন দরে ধান বিক্রি করতে পারলে ভাল হবে।

পাশাপোল গ্রামের মমিনুর রহমান, কয়ারপাড়া গ্রামের ইউনুচ অলী, মাসুদুর রহমান, আবুকালাম, রামকৃষ্ণপুর গ্রামের নুরুজ্জামান বলেন, এক বিঘা জমির ধান জমি প্রস্তুত থেকে ধান ঘরে তোলা পর্যন্ত প্রায় ২৪ হাজার টাকা খরচ। তবে যারা বিদ্যুৎচালিত সেচপাম্পের পানি এবং নিজেরাই পরিচর্চা করেছেন তাদের জন্য খরচ একটু কমবে। সেক্ষেত্রে প্রতি মন ধান ১৫’শ টকার উপরে বিক্রি করতে পারলে তাদের আসল ঘরে আসবে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুসাব্বির হুসাইন বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর বেশি জমিতে ধান চাষা হয়েছে। ধানের আশানুরূপ ফলন হয়েছে। এবছরে আবহাওয়া ভালো তাই ধানের ফরন ভালো হবে। ইতোমধ্যে কৃষকরা ধান কাটতে শুরু করেছেন। উপজেলা কৃষি অধিদফতরের পক্ষ থেকে কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন দিয়েধান কাটা হবে। এতে শ্রমিক সঙ্কট অনেকটা কমে আসবে।

আরএস

 

 

Link copied!