Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৯ মে, ২০২৪,

চৌগাছা সীমান্তে ১১ মাসে ৪৭ কেজি সোনা উদ্ধার, আটক ৫

চৌগাছা (যশোর) প্রতিনিধি

চৌগাছা (যশোর) প্রতিনিধি

নভেম্বর ১৬, ২০২৩, ০৫:৫৮ পিএম


চৌগাছা সীমান্তে ১১ মাসে ৪৭ কেজি সোনা উদ্ধার, আটক ৫

যশোরের চৌগাছা উপজেলার সীমান্ত গুলো ভারতে সোনা পাচারের প্রধান রুট হিসেবে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘদিন যাবৎ এ সীমান্ত এলাকা ব্যবহার করছেন সোনা চোরাচালানিরা। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যরা চলতি বছরে বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে ২৯৭টি সোনার বারসহ পাঁচজন চোরাকারবারিকে আটক করেছেন।

আটক ও উদ্ধারকৃত সোনার ওজন প্রায় ৪৭ কেজি ও ভরি হিসেবে হয় ৩৭৬০ ভরি। যার বাজার মূল্য প্রায় ৩৮ কোটি টাকা।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০২৩ সালের ১১ মাসে উপজেলার কাবিলপুর, আন্দুলিয়া, মাসিলা, লক্ষিপুর, বল্লভপুর ও দৌলতপুর সীমান্ত থেকে বিজিবি ২৯৭টি সোনার বার আটক ও উদ্ধার করেছেন। যার ওজন প্রায় ৪৭ কেজি ও ভরি হিসেবে হয় ৩৭৬০। যার বাজার মূল্য প্রায় ৩৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা।

জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের একটি সূত্র বলছেন, এ সীমান্ত পথে বিজিবির কাছে যে পরিমাণ সোনা আটক হয়, এর চেয়ে অনেক গুণ বেশি পাচার হয়। চলতি বছরের ২৬ অক্টোবর দুপুর দেড়টার দিকে উপজেলার মাশিলা সীমান্তের লক্ষীপুর গ্রামে অভিযান চালিয়ে ভারতে পাচারের সময় ছয়টি স্বর্ণের বারসহ নাঈম হোসেন (১৮) নামে এক যুবককে আটক করেন বিজিবি সদস্যরা।

আটক নাঈম মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার উজ্জ্বল হোসেনের ছেলে। ২২ আগস্ট সন্ধ্যায় সীমান্তের বড় আন্দুলিয়া থেকে দুইজন পাচারকারীকে আটক করেন বিজিবি। এ সময় তাদের নিকট থেকে ১৩ কেজি ৪৬৪ গ্রাম ওজনের ৪৩টি সোনার বার উদ্ধার করেন। যার বর্তমান বাজার মূল্য আনুমানিক প্রায় ১৩ কোটি ৪৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা।

আটককৃতরা হলেন, যশোর সদর উপজেলার এনায়েতপুর গ্রামের মহিউদ্দিনের ছেলে শাওন হোসেন ও মাগুরার শালিকা উপজেলার ছয়ঘড়িয়া গ্রামের কুদ্দুস মোল্লার ছেলে রফিকুল ইসলাম।

৫ জুন সকাল ১০টার দিকে উপজেলার কাবিলপুর সীমান্তে অভিযান চালিয়ে ২৬টি স্বর্ণের বার উদ্ধার করেছে বিজিবি সদস্যরা। যার বাজার মূল্য প্রায় ৩ কোটি টাকা। তবে এ সময় কাউকে আটক করতে পারেনি বিজিবি।

১০ এপ্রিল কাবিলপুর শ্মশানঘাট এলাকায় অভিযান চালিয়ে  শাহ আলম (৩৫) নামে এক সোনা চোরাকারবারিকে আটক করেন বিজিবির সদস্যরা। এ সময় তার নিকট থেকে প্রায় সাড়ে ১৪ কেজি ওজনের ১২৪টি সোনার বার উদ্ধার করা হয়। আটক ব্যক্তি উপজেলার কাবিলপুর গ্রামের বাসিন্দা।

এদিকে অতিসম্প্রতি উপজেলার শাহজাদপুর সীমান্তের একটি মরিচ ক্ষেতের মাটির নিচ থেকে ৯ কেজি ২৮০ গ্রাম ওজনের ৮০টি স্বর্ণের বার উদ্ধার করেন বিজিবি। যার বাজার মূল্য আনুমানিক ৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। উপজেলার তিলকপুর সীমান্ত থেকে নাজমুল হোসেন (২২) নামে এক সোনা চোরাকারবারিকে আটক করেন বিজিবির সদস্যরা।

এ সময় তার নিকট থেকে দুই কেজি ওজনের ১৮টি স্বর্ণের বার উদ্ধার করা হয়। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ২ কোটি টাকা। আটক নাজমুল চৌগাছা উপজেলার ঝিনাইকুন্ডু গ্রামের শরিফুল আলম বাবুর ছেলে।

সংশ্লি¬ষ্ট সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বিভিন্ন সীমান্ত থেকে চলতি বছরে বিজিবিসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে ৪৭ কেজি সোনা উদ্ধার হয়েছে। তবে এসব সোনা উদ্ধারের সময় বহনকারী শ্রমিকরাই আটক হন। মূল হোতারা থেকে যান ধরাছোঁয়ার বাইরে।

আবার সোনা উদ্ধার ও বহনকারীরা গ্রেপ্তার হলেও পরবর্তী তদন্তে তারা মুখ না খোলায় মূল হোতাদের মুখোশ উন্মোচন হয় না। ফলে সোনা পাচার কমছে না। বিভিন্ন সময় গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের জানান, এসব সোনার মালিক তারা নন, তারা বাহকমাত্র। প্রতিটি বার ৪ থেকে ৫ হাজার টাকার বিনিময়ে বহন করেন তারা।

সীমান্তবর্তী বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ভারতে সোনার ওপর অতিরিক্ত শুল্কারোপ, যশোরের বেনাপোল আন্তর্জাতিক স্থলবন্দর ৮৫ কিলোমিটার দূরত্বে কলকাতার অবস্থান, যশোর থেকে চৌগাছা উপজেলার সীমান্তগুলোও কম দূরত্বের মধ্যে হওয়ায় এবং যাতায়াত ব্যবস্থা সুবিধাজনক বিধায় চোরাচালানিরা এসব পথ ব্যবহার করেন।

সর্বশেষ গত ২৬ অক্টোবর দুপুর দেড়টার দিকে উপজেলার মাশিলা সীমান্তের লক্ষীপুর গ্রামে অভিযান চালিয়ে ভারতে পাচারের সময় ছয়টি স্বর্ণের বারসহ নাঈম হোসেন (১৮) নামে এক যুবককে আটক করেন বিজিবি সদস্যরা। আটক নাঈম মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার উজ্জ্বল হোসেনের ছেলে। তিনি জিজ্ঞাসাবাদে বিজিবি ও পুলিশকে জানান, তারা সোনা ভারতে পাচার করতে যাচ্ছিলেন। সোনার বদলে ইউএস ডলার নেওয়ার উদ্দেশে চৌগাছায় এসেছিলেন। তবে চালানের মালিকদের নাম বলেননি তিনি।

এর আগে গত ২০ মে চৌগাছার বড় কাবিলপুর শ্মশানঘাট থেকে ওই গ্রামের শাহআলমে (৪৫) নামের এক ব্যক্তিকে ১৪ কেজি ৪৫০ গ্রাম ওজনের ১২৪টি সোনার বারসহ আটক করেন চৌগাছার শাহাজাদপুর বিজিবি সদস্যরা। সোনাসহ আটকের পর কোরআনের হাফেজ ও কাবিলপুর বাজারে হোমিও ডাক্তার হিসেবে পরিচিত শাহআলম স্বীকার করেন তিনি এর আগেও ৬ বার ওই এলাকা দিয়ে সোনা পাচার করেছেন।

সপ্তমবারে অতি আপনজনের দেওয়া তথ্যে তিনি ধরা পড়েন। তবে সোনার মালিক বা মূল পাচারকারীর নাম বলেননি তিনিও। ওই ঘটনায় চৌগাছা থানার মামলায় শাহআলমকে দুদিনের রিমান্ড দেন আদালত। তবে এসব সোনা পাচারে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা হলেও মূল হোতারা সবসময় থেকে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।

বাংলাদেশ জুয়েলারি ব্যবসায়ী সমিতি চৌগাছার সভাপতি দিদারুল ইসলাম বলেন, সোনা চোরাচালানে জড়িত মূল হোতারা আটক হয় না। বিজিবির কাছে যে পরিমাণ সোনা আটক হয়, এর চেয়ে অনেক বেশি পাচার হয়। এতে আমাদের বদনামও হয়, আমরা ক্ষতিগ্রস্তও হই।

এ বিষয়ে যশোর ব্যাটালিয়ন ৪৯ বিজিবি আন্দুলিয়া কোম্পানী কমান্ডার সুবেদা মজিবুর রহমান বলেন, সোনাসহ বিভিন্ন চোরাচালান রোধে বিজিবি সদস্যরা কাজ করে যাচ্ছেন। বিশেষ করে সোনা চোরাচালান সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে আমাদের গোয়েন্দা দল কাজ করছে। সোনা চোরাচালানে যারাই জড়িত থাকুক, তাদের ছাড় দেওয়া হবে না।

এইচআর

 

 

Link copied!