ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা শনিবার, ০২ আগস্ট, ২০২৫
Amar Sangbad

মির্জাপুরে পাহাড়-কৃষিজমি-নদীর তীর কাটার মহোৎসব

মো. সানোয়ার হোসেন, মির্জাপুর (টাঙ্গাইল)

মো. সানোয়ার হোসেন, মির্জাপুর (টাঙ্গাইল)

জানুয়ারি ২৬, ২০২৪, ০২:১৫ পিএম

মির্জাপুরে পাহাড়-কৃষিজমি-নদীর তীর কাটার মহোৎসব
ছবি: আমার সংবাদ

টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে পাহাড়ি লাল মাটি, কৃষিজমি ও নদীর তীর কাটার মহোৎসব চলছে। ফলে কৃষি জমির মাটি কাটায় কমে যাচ্ছে চাষাবাদযোগ্য জমির পরিমাণ। পাহাড়ি অঞ্চলের প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে, নদীর গতিপথ অস্বাভাবিকভাবে পরিবর্তন হয়ে অসংখ্য ঘরবাড়ি-রাস্তাঘাট হাট-বাজার, গুরুত্বপূর্ণ সেতু ও বিভিন্ন স্থাপনা হুমকিতে পড়েছে।

সরজমিনে, গোড়াই ইউনিয়নের পাথালিয়া পাড়াতে তিনটি স্পটে দেওহাটা এলাকার ফরিদ খান, ইলিয়াস মল্লিক, সরোয়ার মল্লিক দিনে-রাতে নির্বিচারে মাটি উত্তোলন করছেন।

ফরিদ খান বলেন, আমরা জমির মালিকের কাছ থেকে মাটি কিনে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করি। নেতাদের টাকা দিয়ে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই চালাই।

মীর দেওহাটা গ্রামের ফজল মিয়ার ছেলে আকবর লৌহজং নদীর মীর দেওহাটা-বুধিরপাড়া অংশে নদীতে বাঁধ দিয়ে মাটি কেটে নিজেদের ইটভাটায় নিচ্ছে এমন তথ্য জানিয়েছেন এক জনপ্রতিনিধি।

চান্দুলিয়া গ্রামের সাদেক আলী অভিযোগ করে বলেন, চান্দুলিয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের পাশেই আমার সরিষা ক্ষেত নষ্ট করে রাস্তা বানিয়ে রাতের আঁধারে মাটি কেটে নিয়ে গেছেন বহুরিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের আহবায়ক রুমান খানসহ দেওহাটা এলাকার বেশকয়েকজন প্রভাবশালী। চান্দুলিয়া নদীতে বাংলা ড্রেজার বসিয়ে যুবলীগ নেতা ছানোয়ার হোসেন বালু উঠিয়ে বাড়ি-পুকুর ভরাট করছে বলেও জানা গেছে।

পৌরসদরের বংশাই এলাকায় অবস্থিত বীর মুক্তিযোদ্ধা একাব্বর হোসেন সেতুর পশ্চিম পাশে নদী তীরের মাটি কাটছে গোড়াইল গ্রামের আলমগীর মৃধা, কাউসার মৃধা ও টিটু মিয়া।

আলমগীর মৃধা বলেন, রেকর্ডকৃত জমি ক্রয় করে মাটি কাটছি। প্রশাসনের অনুমতি নিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রশাসন তো অনুমতি দেয়না তবুও মাটি কাটি। কুমারজানি ও হাতেম টাউন এলাকাতে লাল মিয়া নামের ব্যক্তি নদী তীরের মাটি নিমিশেই কেটে নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

লতিফপুর-চাঁনপুর ব্রিজের পশ্চিম অংশে তালেব, কাজল, লিটন, দেওয়ান রাজীব, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা শাহিনুরসহ বেশকয়েকজন ৫ থেকে ৬টি ভেক্যুমেশিন দিয়ে রাতের আঁধারে নদী তীরের মাটি উত্তোলন করে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছে। এতে করে বর্তমানে হুমকিতে রয়েছে লতিফপুর-চাঁনপুর সেতুটি।

মাটি ব্যবসায়ী কাজল বলেন, আমরা প্রশাসনের অনুমতি নিয়েই ছয়-সাতজন মিলে ভেক্যুমেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করছি। ভূলুয়াতে বেলতৈল গ্রামের আলহাজ ও করিম মিয়া নদী তীরের মাটি উত্তোলন করছে সরজমিনে গিয়ে তার সত্যতা মিলেছে।

ফতেপুর ইউনিয়নের এক টাকার বাজার এলাকায় উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক শুভ আহমেদের নের্তৃত্বে পাকুল্যার একাধিক ব্যক্তি বেশকয়েকজন ধরে বালু উত্তোলন করছে। এসব বালু-মাটি বড় ড্রাম ট্রাক দিয়ে বিভিন্ন স্থানে ভারাট ও ইটভাটায় বিক্রি করছেন। তবে উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক শুভ আহমেদ দাবি করেন মাটি কাটার সাথে তিনি জড়িত নয়। মাটি উত্তোলন করছে পাকুল্যার পারভেজ বলেও জানান তিনি।

ফতেপুর ইউনিয়নের বৈলানপুর এলাকায় সোহেল মৃধা নদী তীরের মাটি উত্তোলন করছে। সোহেল মৃধা এই প্রতিবেদককে বলেন, আমরা জমি কিনে ২০-২৫জন মিলেমিশে ব্যবসা করছি। প্রশাসনের অনুমতির ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন ফোনে এসব কথা ঠিক হবে না।

আজগানা ইউনিয়নের কুড়িপাড়া মধুর টেকি স্থানে ওই এলাকার সুরুজ ও বাপ্পী, আজগানা পূর্বপাড়াতে আবুল মেম্বার ও শাজাহান ভেক্যুমেশিন দিয়ে মাটি উত্তোন করে অন্যত্র বিক্রি করছেন। তেলিনাতে আশরাফ মেম্বার, কুড়িপাড়াতে মজিবর মেম্বার লাল মাটি উত্তোলন করে বিভিন্ন ভাটায় দিচ্ছেন। মাটি ব্যবসায়ী আজগানা ইউপির সাবেক মেম্বার আশরাফ বলেন, এক সপ্তাহে ধরে লাল মাটি কাটতেছি। এক যুবলীগ নেতাকে টাকা দিয়ে সবাইকে ম্যানেজ করে চালাচ্ছি।

তরফপুর ইউনিয়নের ছিটমামুদপুর গ্রামের করিম সিকদারের পাহাড়ি টিলার লাল মাটি ক্রয় করেছেন ওই এলাকার রুবেল ও আক্তার, তারা লাল মাটি চড়া দামে বিভিন্ন ইটভাটায় বিক্রি করবে বলে জানিয়েছেন করিম সিকদারের পুত্রবধূ।

প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে পাহাড়পুর ব্রিজের উত্তর পাশে নদীর তীর ও বাড়ি ঘেষে মাটি কেটে নিচ্ছে ছানোয়ার হোসেন। ওই বাড়ির মালিক লাভলু মিয়া বলেন, বাইমহাটি এলাকার ছানোয়ার আমার বাড়ি সীমানা ঘেষে মাটি কাটতাছে। এইভাবে মাটি কাটলে আমার বাড়ি যেকোন সময় নদীতে বিলীন হয়ে যাবে। এরআগেও সে এখানে মাটি কেটেছে।

এছাড়াও বাঁশতৈল ইউনিয়নের বাঁশতৈল, নয়াপাড়া, গায়রাবেতিল, আজগানা ইউনিয়নের বেলতৈল, হাটুভাঙ্গা, মজিদপুর, লতিফপুর ইউনিয়নের যোগীরকোফা, তরফপুর ইউনিয়নে গাজেশ^রী, ধানচালা, নয়েজ মার্কেট, ফতেপুর ইউনিয়নের থলপাড়া, পারদিঘী, জামুর্কী ইউনিয়নের গুনটিয়া, মাঝালিয়া, বানাইলসহ উপজেলার অর্ধশতাধিক স্পটে প্রভাবশালীরা রাতের আঁধারে বালু ও মাটি উত্তোলন করে বিক্রি করছেন। তবে এসবের বিরুদ্ধে কথা বলতে অনিরাপদবোধ করেন অধিকাংশ ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসী।

পাথালিয়া পাড়ার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গৃহিনী বলেন, দিনরাত এখান দিয়া ট্রাক চলে। আগে আমরা প্রতিবাদ করছি। কিন্তু কোন কাজ হয়না, মাটি কাটা চলেই। পুলিশ আহে তাও কিচ্ছু হয় না। তাই এখন আর প্রতিবাদ করিনা।

সরজমিনে খোঁজ নিয়ে আরও দেখা গেছে, গ্রামীণ রাস্তায় বড় ড্রামট্রাক চলায় রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। এমনকি কোনো কোনো রাস্তা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে উঠেছে। পাহাড়ি এলাকার লাল মাটির টিলা কেটে নেওয়ায় সেখানকার জীব বৈচিত্র ধ্বংসের পাশাপাশি পরিবেশগত ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।

সরকারি নিয়ম অনুযায়ী বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যক্তি মালিকানাধীন কৃষি জমি থেকে বালু বা মাটি তোলা যাবে না। তবে ব্যক্তির নিজের প্রয়োজনে স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে সীমিত পরিসরে বালু বা মাটি তুলতে পারবেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ড. সঞ্জয় কুমার পাল জানান, এভাবে কৃষিজমি ধ্বংস হতে থাকলে এ এলাকায় কৃষি বিপর্যয় নেমে আসবে। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করবো।

এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাকিলা বিনতে মতিন বলেন, আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে মাটি ব্যবসায়ীদের জেল জরিমানা করছি এবং খোঁজ নিয়ে আরো কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। তবে এক্ষেত্রে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের পূর্ণ সহযোগিতা পেলে কাজটি সহজ হয়ে যায়।

এআরএস

Link copied!