Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ০৬ মে, ২০২৪,

নবরূপে ২৫০ বছরের পুরোনো ঐতিহাসিক গোল মসজিদ

সঞ্জিত চন্দ্র শীল, হোসেনপুর (কিশোরগঞ্জ)

সঞ্জিত চন্দ্র শীল, হোসেনপুর (কিশোরগঞ্জ)

ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২৪, ০১:৪৪ পিএম


নবরূপে ২৫০ বছরের পুরোনো ঐতিহাসিক গোল মসজিদ
ছবি: সংগ্রহীত

কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ২৫০ বছরের পুরোনো দৃষ্টিনন্দন ঐতিহাসিক গোল মসজিদ। কয়েক দফা পুনঃসংস্কারের ফলে এটি উপজেলার ৫ নম্বর শাহেদল ইউনিয়নের বাগপাড়া গ্রামে নতুন রুপে মোঘল আমলের স্মৃতি বহন করে চলেছে।

অজপাড়াগাঁয়ে স্থাপিত ঐতিহাসিক ওই গোল মসজিদটি সে সময়ে হোসেনপুর উপজেলাসহ আশপাশের এলাকায় মুসলমানদের ধর্ম প্রচারের একমাত্র ধারক ও বাহক হিসেবে ব্যবহার হতো।

মসজিদ প্রাঙ্গণে স্থাপিত প্রাপ্ত শিলালিপি ও অন্যান্য সূত্রে জানা যায়, হোসেনপুরের ওই গোল মসজিদটি ঐতিহাসিক মোগল আমলের নজরকাড়া স্থাপত্য শিল্পে নির্মিত হয়েছিল। পরবর্তীতে হিজরি ১২১৯ সালের দিকে এটি পুননির্মাণ করা হয়।

স্থানীয় ইতিহাসবিদদের ভাষ্যমতে, সুদূর ইরাক থেকে ভারতবর্ষের পূর্বাঞ্চলে অর্থাৎ পূর্ব বাংলায় মুসলিম ধর্মযাজক শেখ মুহাম্মদ শামছুদ্দিন ধর্ম প্রচারের জন্য কিশোরগঞ্জের অন্তর্গত হোসেনশাহী পরগনার আওতাধীন হোসেনপুর উপজেলার শাহেদল বাগপাড়া গ্রামে বসতি স্থাপন শুরু করেন। এরই ধারাবাহিকতায় তৎপরবর্তীতে শেখ মুহাম্মদ শামছুদ্দিনের দুই পুত্র শেখ আদম ও শেখ আলম ওই বাগপাড়া এলাকায় ঐতিহাসিক গোল মসজিদটির নির্মাণ কাজ সুসম্পন্ন করেন। যা আজও কালের সাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়ে রয়েছে।

সরেজমিনে তথ্য সংগ্রহকালে মসজিদ প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা যায়, মসজিদটির দেয়াল তিন ফুট প্রস্থ। উপরের ছাদের অংশ সম্পূর্ণ গোলাকার আকৃতির। চুন, ইট ও আখের লালির সংমিশ্রণে দেয়ালের গাঁথুনি সম্পন্ন করা হয়েছে। ওই গোল মসজিদের আয়তন দৃশ্যত কম হলেও মসজিদটিতে ইমামসহ তিন কাতারে ১৮-২০ জন মুসল্লি একসাথে নামাজ আদায় করতে পারেন।

স্থানীয় প্রবীণ মুসল্লিরা জানান, ঐতিহাসিক এ গোল মসজিদের বয়স আনুমানিক ২৫০ বছরেরও বেশি হবে। এ সময় উপজেলার শাহেদল ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান মো. ফিরোজ উদ্দিন ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মো. আবুল হাসিম সবুজ জানান, বর্তমানে মসজিদটিতে স্থানীয় মুসল্লিদের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই এলাকাবাসীর উদ্যোগে গোল মসজিদটি কিছুটা সম্প্রসারণ করে এর ভেতরে টাইলস ও চারপাশে রঙ করে পূণরায় সংস্কার করা হয়েছে। ফলে নতুন রুপ লাভ করেছে ২৫০ বছর আগের ঐতিহাসিক ওই গোল মসজিদটি। যেটি এখনো কালের সাক্ষী হয়ে মোঘল আমলের স্মৃতি বহন করে চলছে।

স্থানীয় ইতিহাসবিদ হিসেবে সুপরিচিত ও উপজেলার ঐতিহ্যবাহী হোসেনপুর আদর্শ মহিলা ডিগ্রী কলেজের ইতিহাস বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক এম. এ হাকিম জানান, ছাত্রজীবনে তিনি তৎকালীন শিক্ষক ও সহপাঠীদের সঙ্গে ওই গোল মসজিদ পরিদর্শন করেছিলেন। পরে কর্মজীবনে প্রবেশ করে ওই গোল মসজিদের পরিচিতি শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছেন। তবে ঐতিহাসিক এ গোল মসজিদটি বর্তমান প্রজন্মের কাছে আরো ব্যাপকভাবে তুলে ধরতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা জরুরি বলে মনে করেন তিনি।

এ ব্যাপারে হোসেনপুর উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সোহেল ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ইন্জিনিয়ার মো. আশরাফ হোসেন কবির  জানান, সম্প্রতি নতুন করে সংস্কারের ফলে ঐতিহাসিক এ গোল মসজিদটি নতুনত্ব পেয়েছে। যা তরুণ প্রজন্মকে আকৃষ্টের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা কাজেও সহায়ক হবে। তাই দেশ-বিদেশে ব্যাপক পরিচিতির জন্যে এ গোল মসজিদটি সরাসরি দেশের প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগের নিয়ন্ত্রণে অন্তর্ভুক্ত করার তৎকালীন জোর দাবি জানান তিনি।

এআরএস

Link copied!