Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ০৬ মে, ২০২৪,

চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে নজর কাড়ছে ইলা মিত্র সংগ্রহশালা

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি

ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৪, ০৫:৩৬ পিএম


চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে নজর কাড়ছে ইলা মিত্র সংগ্রহশালা

বরেন্দ্রভূমির ঐতিহাসিক জনপদ এবং বিপ্লবী ইলা মিত্রের নেতৃত্বে সংঘটিত তেভাগা আন্দোলনের পুণ্যভূমি চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলা। উপজেলার নেজামপুর ইউনিয়নের বেশিরভাগ অংশ তেভাগা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত। এখানেই ১৯৪৪-৫০ সালের মধ্যে সংঘটিত হয়েছিল নাচোলের তেভাগা আন্দোলন। 

তেভাগা আন্দোলন তথা এর বিপ্লবী নেতা ইলা মিত্রকে স্মরণীয় করে রাখতে বিশেষ উদ্যোগ নেয় চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসক এ কে এম গালিভ খাঁন। তেভাগা আন্দোলনের ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে নাচোল উপজেলার রাওতাড়া গ্রামে ইলা মিত্র মঠের পাশেই নির্মাণ করা হয়েছে ‘ইলা মিত্র সংগ্রহশালা’। 

শূন্য দশমিক ২৬ একর জমির ওপর দ্বিতল মাটির ভবনে গড়ে সংগ্রহশালাটি এরই মধ্যে অনেকের নজর কেড়েছে। প্রায় প্রতিদিনই সেখানে সব বয়সের দর্শনার্থী ভিড় করছেন একনজর দেখার জন্য। অনেকেই বলছেন, এটি একটি অনন্য উদ্যোগ এবং নাচোলের তেভাগা আন্দোলন ও এর কিংবদন্তি নেতা ইলা মিত্রকে এর মধ্য দিয়ে যুগ যুগ ধরে প্রজন্মের পর প্রজন্ম জানার সুযোগ পাবে। 

জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় সংগ্রহশালাটি নির্মাণ করেছে নাচোল উপজেলা প্রশাসন। নির্মাণে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে স্থানীয় ঐতিহ্যকে। মাটি দিয়েই তৈরি করা হয়েছে শিল্পমণ্ডিত দৃষ্টিনন্দন দ্বিতল ভবনটি। ৮০০ বর্গফুট আয়তনের ভবনটির দোতলায় ওঠার জন্য সামনের বেলকনিতে কাঠের সিঁড়ি ব্যবহার করা হয়েছে, যা দৃষ্টিনন্দনও বটে। স্থানটিকে আরো মনোমুগ্ধকর করে তুলতে নেয়া হয়েছে বনায়ন প্রকল্প। ভবনটির কিছু দূরে আরেকটি মাটির ঘর নির্মাণ করা হয়েছে পর্যটকদের বিশ্রামের জন্য। 

সংগ্রহশালায় তেভাগা আন্দোলন ও ইলা মিত্র সম্পর্কিত বই, পত্র-পত্রিকা, দুর্লভ স্থিরচিত্র ছাড়াও জেলার ঐতিহ্যবাহী উপাদান স্থান পেয়েছে। উদ্বোধনের আগেই সংগ্রহশালাটি দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে ভিড় জমাচ্ছেন দর্শনার্থীরা।

এ বিষয়ে নাচোল উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সবুজ হাসান বলেন, বিপ্লবী নেত্রী ইলা মিত্রের স্মৃতি সংরক্ষণে ইলা মিত্র স্মৃতি সংগ্রহশালাটি নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সংগ্রহশালাটি দেখতে এরই মধ্যে দূরদূরান্ত থেকে ভিড় জমাচ্ছেন দর্শনার্থীরা। নির্মাণাধীন এ সংগ্রহশালা ইলা মিত্রের স্মৃতি সংরক্ষণে অনন্য ভূমিকা রাখবে বলেও মনে করেন তিনি।

নাচোল উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিলুফা সরকার বলেন, জেলা প্রশাসক এ কে এম গালিভ খাঁন স্যারের নির্দেশনা ও তদারকিতে আমরা এ সংগ্রহশালার কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। অনেক কাজ সম্পন্ন হয়েছে। খুব শিগগিরই কাজ শেষে উদ্বোধন করা হবে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসক এ কে এম গালিভ খাঁন জানান, ২০২৩ সালে অনুষ্ঠিত জেলা প্রশাসক সম্মেলনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ২৫ দফা নির্দেশনার ২২ ও ২৩ দফায় পর্যটন শিল্পের বিকাশ, রক্ষণাবেক্ষণ ও জেলার নিজস্ব ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য  জেলা প্রশাসকগণকে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা প্রদান করেন। 

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা এবং এই অ লবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির  প্রেক্ষিতে নাচোল উপজেলায় সংঘটিত তেভাগা আন্দোলন এবং এর নেত্রী ইলা মিত্রের স্মৃতিবিজড়িত স্থান রক্ষা ও স্মৃতিচিহ্নগুলো সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ইলা মিত্র ও তার স্বামী রমেন মিত্রের ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। স্বাধীনতাযুদ্ধ চলাকালে তাঁরা মহান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গড়ে তুলতে প্রচারণা চালিয়েছিলেন, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও শরণার্থীদের মানবিক সহায়তা প্রদান করেছেন। 

যার স্বীকৃতি হিসেবে ইলা মিত্র ও তার স্বামী রমেন মিত্র মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য মরণোত্তর মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে ইলা মিত্রের ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল এবং তিনি তাঁর জীবদ্দশায় তাঁদের সাথে বিভিন্ন সময় সাক্ষাৎও করেছেন। 

জেলা প্রশাসক বলেন, মহীয়সী এই নারীর স্মরণে এবং নাচোলের তেভাগা আন্দোলনের ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে রাওতাড়ায় গড়ে তোলা হয়েছে ০.২৬ একর জমির ওপর নির্মাণ করা হয়েছে ইলা মিত্র সংগ্রহশালা। পর্যায়ক্রমে সংগ্রহশালার আয়তন বৃদ্ধি করে জ্ঞানচর্চার উপকরণসহ আগত দর্শনার্থীদের জন্য অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা সম্প্রসারণ করা হবে। 

এইচআর

Link copied!