Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ০৬ মে, ২০২৪,

ফলন-দামে স্বস্তি, ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি বন্ধের দাবি

নজরুল ইসলাম মুকুল, কুষ্টিয়া

নজরুল ইসলাম মুকুল, কুষ্টিয়া

মার্চ ৩১, ২০২৪, ০৩:৩০ পিএম


ফলন-দামে স্বস্তি, ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি বন্ধের দাবি
ছবি: আমার সংবাদ

কুষ্টিয়ায় পেঁয়াজ চাষে বাম্পার ফলনের আশা করছে কৃষি বিভাগ। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চলতি অর্থ বছরে কৃষি বিভাগের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। চলতি মৌসুমে পেঁয়াজ রোপণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১২ হাজার ৫০০ হেক্টর জমি। সেখানে আবাদ হয়েছে ১৩ হাজার ২৪২ হেক্টর জমিতে। 

চরতি বছর পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় চাষিরা মনের আনন্দে মাঠ থেকে পেঁয়াজ তোলা এবং পেঁয়াজ পরিষ্কার করে ঘরে তোলার জন্য ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। কাকডাকা ভোর থেকে উঠে দিনব্যাপি পেঁয়াজ ক্ষেত থেকে  তোলা, বাড়িতে নিয়ে এসে পরিষ্কার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষক-কৃষাণিরা।

গত বছরের  চেয়ে কম দামে পেঁয়াজের বীজ ক্রয়, চারার মূল্য কম, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চাষিরা এবার ব্যাপকহারে পেঁয়াজ রোপণ করছে বলে কৃষকেরা জানান। তবে চলতি মৌসুমে শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি, তেলের মূল্য বেশি হওয়ায় সেচের মূল্য বৃদ্ধি এবং পেঁয়াজের মাটি প্রস্তুতে খরচ বেশি হওয়ায় চাষিরা কিছুটা হতাশার মধ্যে আছে।

পেঁয়াজ চাষিরা জানান, যে পরিমাণ খরচ হচ্ছে তাতে করে পেঁয়াজের মূল্য বাজারে একটু বেশি হাওয়ায় তারা লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছেন। তাই তাদের দাবি ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ করার। তা না হলে লোকসান গুনতে হবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুষ্টিয়া সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে কুষ্টিয়া জেলায় তাহেরপুরী, বারি পেঁয়াজ-১,  কিংসুপার ও মেটাল এই চার জাতের পেঁয়াজ কৃষকেরা রোপণ করছে। চলতি মৌসুমে পেঁয়াজ রোপণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১২ হাজার ৫০০ হেক্টর জমি, সেখানে অর্জিত হয়েছে ১৩ হাজার ২৪২ হেক্টর জমি। সম্ভাব্য উৎপাদন হয়েছে ২ লাখ ৫ হাজার ২৫১ মে. টন। গত গত বছরে আবাদ হয়েছিল ১২ হাজার ১৩১ হেক্টর জমি। উৎপাদন হয়েছিল ১ লাখ ৮৮ হাজার ৩১ মে. টন।

চলতি মৌসুমে  কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় ২ হাজার ২৪৫ হেক্টর, খোকসা উপজেলায় ২ হাজার ৭৬০ হেক্টর, কুমারখালী উপজেলায় ৪ হাজার ৮৯০ হেক্টর, মিরপুর উপজেলায় ৩৭৬ হেক্টর, ভেড়ামারা উপজেলায় ১৯৮ হেক্টর ও দৌলতপুর উপজেলায় ২ হাজার ৭৭৩ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করা হয়েছে। তবে কৃষকরা জানায় কৃষি অফিসের দেয়া তথ্যের চেয়ে মাঠ পয্যায় কৃষকের পেঁয়াজ আরো বেশী রোপণ হয়েছে। 

উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, চাষিরা দলবদ্ধভাবে শ্রমিক নিয়ে পেঁয়াজ তোলা কাজ করছেন। কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পেঁয়াজের বীজ গেল বছর খোলা ৬ থেকে ১০ হাজার টাকায় বিক্রি হলেও এ বছর তা কমে বিক্রি হয়েছে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকায়।

পেঁয়াজের চারা গত বছর ১৫০ থেকে ১৮০ টাকায় কেজি বিক্রি হলেও এবার বিক্রি হয়েছে ২০ থেকে ৩০ টাকা কেজি। বীজ, চারা, সার, পরিচর্যাসহ এবার বিঘাপ্রতি পেঁয়াজ উৎপাদনে চাষিদের খরচ হয়েছে ২৫ থেকে ২৮ হাজার টাকা। এ বছর বিদেশি কিংসুপার জাতীয় চারা রোপণ করা হয়েছে। এতে বিঘায় ৪৫ থেকে ৬০ মণ পেঁয়াজ উৎপন্ন হবে। যার বাজার মূল্য হবে ৪০ থেকে প্রায় ৮০ হাজার টাকা।

এ বিষয়ে কুষ্টিয়া শহরতলি বাড়াদী গ্রামের  চাষি নরেশর আলী বলেন, ৩ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ রোপণ করেছি। ফলনও ভালো হয়েছে। তবে খরচের চেয়ে পেঁয়াজ বিক্রি করে তেমন লাভ হচ্ছেনা।  

চাপড়া ইউনিয়নের চাষি মিজানুর বলেন, পেঁয়াজ চাষে খরচ কমেছে। এবার বিঘাপ্রতি খরচ হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। দেড় বিঘা জমিতে পেঁয়াজের চারা রোপণ করেছিলাম। নিয়মিত পরিচর্যা করেছি। আশা করছি ফলন ভালো হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুষ্টিয়া জানায়, পেঁয়াজ চাষিদের অর্থকরী ফসলের মধ্যে অন্যতম। এ অঞ্চলের মাটি পেঁয়াজ চাষে উপযোগী। উপজেলার কৃষি কর্মকর্তারা সব সময় কৃষকদের  পেঁয়াজ চাষে পরামর্শ দিয়ে আসছে। তবে এ বছর পেঁয়াজের যে দাম পেয়েছে চাষীরা আগামীতে আরো বেশী আবাদ করবে  কৃষকেরা।

এআরএস

Link copied!