ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা শুক্রবার, ০১ আগস্ট, ২০২৫
Amar Sangbad

সাতক্ষীরায় জীবন সংগ্রামে সফল পাঁচ নারী

দেবহাটা (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি:

দেবহাটা (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি:

এপ্রিল ১৭, ২০২৪, ১২:২৫ পিএম

সাতক্ষীরায় জীবন সংগ্রামে সফল পাঁচ নারী

জীবন সংগ্রামে সমাজ, পরিবারের নানা বাধা কাটিয়ে সফলতার মুখ দেখেছেন সাতক্ষীরার দেবহাটার ৫ নারী। তৃণমূল থেকে উঠে আসা এসব নারীদের ৫টি ক্যাটাগরিতে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়িত ‘জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ’ শীর্ষক কর্মসূচির আওতায় খুঁজে বের করা হয়েছে। 

এসব নারীদের জীবনে রয়েছে আলাদা আলাদা জীবন কাহিনি। তাদের সেই সংগ্রামের কাহিনি ধারাবাহিক ভাবে তুলে ধরা হলো।

 

নুর নাহার বেগম:

জীবন চলার পথ মসৃণ নয়, আসে নানান বাঁধা-বিপত্তি। সাহসী মানুষ এসব বাধা অতিক্রম করে আত্মপ্রত্যয়ের উপর ভর করে এগিয়ে যায়। সফলতা বয়ে আনে নিজের জীবনে। পাশাপাশি যুক্ত হয় সামাজিক কাজে। অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠে অন্যদের জন্য। এমনই একজন নারী নুর নাহার বেগম। তিনি বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যমে জীবন শুরু করেছেন। সে উপজেলার পূর্ব কুলিয়ার বাসিন্দা।

তিনি জানান, বিবাহের পর স্বামী আমার সাথে বেশ কিছুদিন ভালো ব্যবহার করে। তারপর থেকে স্বামীর নির্ধারিত উপার্জন না থাকায় আমার উপর যৌতুকের জন্য নির্যাতন শুরু করে। আমার দরিদ্র পিতা যৌতুক দিতে না পারায় আমার উপর নির্যাতনের মাত্রা বাড়তে থাকে। এরই মধ্যে আমাদের ঘরে একে একে তিন জন পুত্র সন্তানের জন্মগ্রহণ করে। তারপরও নির্যাতনের মাত্রা কমেনি। 

এক পর্যায়ে নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে পিতার বাড়িতে চলে আসি এবং নতুন করে জীবন শুরু করি। কঠোর পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে অর্থ উপার্জন করে নতুন উদ্যমে বাঁচার স্বপ্ন দেখি। শত কষ্টের মধ্যেও ছেলেদের লেখা-পড়া বন্ধ হতে দেইনি। তারা প্রত্যেকেই লেখাপড়া শিখে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছে। বর্তমানে তারা সকলেই প্রতিষ্ঠিত। 

বর্তমানে বড় ছেলে আজহার উদ্দীন এম.এ পাশ করে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে চাকরি করছে। মেজো ছেলে সালাউদ্দীন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.বি.এ পাশ করে লংকা বাংলা ফাইনান্স লিমিটেড এ কর্মরত আছে। আর ছোট ছেলে এ.কে.এম মহিউদ্দীন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এ পাশ করে বর্তমানে চাকুরি প্রার্থী। বর্তমানে আমি আমার সন্তানদের নিয়ে অনেক ভালো আছি।

 

রুবিনা আক্তার:

অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী হওয়া নারী রুবিনা আক্তার (২৬)। তিনি দেবহাটা উপজেলার, চন্ডীপুর গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারে সন্তান। মাত্র ১৪ বছর বয়সে ৯ম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় একই গ্রামের এক বেকার ছেলের সাথে সে বিবাহে আবদ্ধ হয়। পরিবার তাদের বিয়ে মেনে না নেওয়ায় বেকার স্বামীকে নিয়ে চিন্তায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে রুবিনার মাথায়। এক পর্যায়ে স্বামী দিনমজুরের কাজে যোগ দেন, আর তিনি বাড়িতে হাঁস-মুরগি পালন ও পড়ালেখা চালিয়ে যেতে থাকেন। 

এর মধ্যে তার ঘরে জন্ম নেয় এক ফুটফুটে কন্যা সন্তান। একদিকে নিজেদের সংসার চলে না, তার উপর নতুন সদস্যের আগমন। কঠিন সময়ের মধ্যে ২০১৫ সালের সার্স এনজিওতে স্বাস্থ্য পরিদর্শকের কাজ নেয় সে। ২০১৬ সালে জিপিএ ৪.৯৬ পেয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে। একদিকে চাকুরি, অন্যদিকে সংসার ও পড়ালেখা সব মিলে তিনি খরচে ঠিকমতো সামলে দিতে পারছিলেন না। আর তাই বাড়িতে বাড়তি আয়ের জন্য ছোট পরিসরে মুরগি পালন শুরু করেন। 

পরে সার্স এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে বড় আকারে খামার তৈরি করেন এবং স্বামীকে একটি মৎস্যঘের লিজ করে দেন। তা থেকে লাভবান হওয়ায় ঋণ পরিশোধের পাশাপাশি এখন নিজেই পুঁজি গঠন করে ফেলেছেন। বর্তমানে তার বাড়িতে সমৃদ্ধি খামার ও পুষ্টি বাগান থাকায় নিজের উৎপাদিত পণ্য পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে অর্থ আয়ের পথ সৃষ্টি হয়েছে। 

এখন, রুবিনা আক্তার একজন সফল উদ্যোক্তা। তিনি মনে করেন, নিজে একজন সফল নারী, আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে নিজেকে স্বাবলম্বী করে অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জন করেছেন।

 

মিতা রানী পাল:

সফল জননী নারী মিতা রানী পাল। তিনি উপজেলার কুলিয়া ইউনিয়নের গুরুগ্রামের অশোক পালের স্ত্রী। তার স্বামী একজন প্রান্তিক কৃষক। স্বামীর অভাবের সংসারে এক ছেলে ও ২ মেয়েকে নিয়ে জীবন সংগ্রাম শুরু হয় তার। সন্তানদের সুশিক্ষিত করতে দিন-রাত কঠোর পরিশ্রম করেন তারা।

মিতা রানী জানান, আমার স্বামী শিক্ষা সচেতন না হওয়ায় ছেলে মেয়েদের লেখা-পড়া ও খাওয়া-দাওয়াসহ সমস্ত দায় দায়িত্ব আমি নিজেই পালন করতাম। গৃহে হাঁস-মুরগি পালন করে স্বল্প আয়ের টাকা দিয়ে সন্তানদের খাতা কলম ও পড়ালেখার খরচ যোগাতাম। আমার ছেলে মেয়েরা সবাই ছিল মেধাবী ও পরিশ্রমী। তারা স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে সাফল্যের সাথে পড়াশুনা করেছে। 

বড়মেয়ে সুমা মনি পাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে এম.এস,এস পাশ করে বাংলাদেশ সরকারের কাস্টমস অফিসার পদে কর্মরত আছেন। ছেলে সঞ্জয় পাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিভাগে এম,এ পাশ করে ঝিনাইদহ জেলার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পদে কর্মরত আছেন। আর ছোট মেয়ে রমা রানী পাল সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজে এম.বি.বি.এস ৫ম সেমিস্টারে অধ্যায়নরত আছে।

 

সালমা সুলতানা:

শিক্ষা ও চাকুরির ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী সালমা সুলতানা। তিনি কামটা গ্রামের শওকাত মীর এর কন্যা। তিনি বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তি হওয়ার পরেও কোন কিছুতে তাকে থামিয়ে রাখতে পারেনি তাঁকে।

দিনমজুর পিতার সংসারে অতি কষ্টের মধ্যে ছোট বেলা থেকে বড় হয়েছেন। কিন্তু অনেক দরিদ্রতা ও শারীরিক অক্ষমতার মাঝেও সাহস না হারিয়ে তিনি লেখাপড়া চালিয়ে যান। অক্লান্ত পরিশ্রম ও মেধার বিকাশ ঘটিয়ে লেখাপড়া শিখে এইচ.এস.সি. পাশ করে সালমা। পরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে উত্তীর্ণ হন।

নিয়োগের মাধ্যমে কামটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন তিনি। বর্তমানে শিক্ষকতার পাশাপাশি উচ্চতর ডিগ্রির জন্য লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছেন এই নারী। এখন, তিনি সামাজিক মর্যাদা সম্পন্ন ও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী একজন নারী।

 

উত্তরা দাশ:

সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখা নারী উত্তরা দাশ। তিনি মাঝপারুলিয়া গ্রামের জগবন্ধু দাশের স্ত্রী। নিম্নবিত্ত পরিবারের গৃহবধূ হওয়া সত্ত্বেও সমাজসেবামূলক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন তিনি।

উত্তরা দাশ জানান, আমি নিজের উদ্যোগে আমার এলাকায় কয়েকটি বাল্যবিবাহ বন্ধ করেছি। শিশু শ্রম ও ইভটিজিং প্রতিরোধেও কাজ করছি। সমাজের পিছিয়ে পড়া শ্রেণি বিশেষ করে দলিত সম্প্রদায়ের মানুষের অধিকার আদায় ও তাদের সার্বিক কল্যাণের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। এছাড়া বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে দরিদ্র অসহায় মানুষদের ভাতাপ্রাপ্তিতে সহযোগিতা করে থাকি। অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর মানুষদের আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আয়বর্ধনমূলক প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরি করি।

শিশুদের স্কুলগামী করার লক্ষ্যে গ্রামে স্বল্প শিক্ষিত বা অশিক্ষিত পিতা মাতাকে উৎসাহিত করা, এলাকায় কিশোরীদের বয়ঃসন্ধিকালীন স্বাস্থ্যসেবা ও পরিচর্যার ক্ষেত্রে সেবিকার ভূমিকা পালন করছি। সেইসঙ্গে বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয়কালীন সময়ে করণীয়, মায়ের গর্ভকালীন পরিচর্যা, শিশুর পুষ্টি নিশ্চিতকরণ ও বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে নারীর অংশগ্রহণ ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে উঠান বৈঠকের মাধ্যমে জনসাধারণের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখছি।

বর্তমানে আমার এই কর্মকাণ্ড ইউনিয়নের গণ্ডি পেরিয়ে উপজেলাব্যাপী কাজ করে যাচ্ছি।

 

বিআরইউ

Link copied!