ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা শনিবার, ০২ আগস্ট, ২০২৫
Amar Sangbad

সালথায় মাতৃত্বকালীন ভাতার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতারক চক্র

সালথা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি

সালথা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি

জুন ২৯, ২০২৪, ০৩:০৮ পিএম

সালথায় মাতৃত্বকালীন ভাতার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতারক চক্র

গ্রামগঞ্জের সহজ-সরল হতদরিদ্র নারীরা কেউ পেটে কেউ বা কোলে করে শিশুসন্তান নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে ঘুরে ঘুরে মাতৃত্বকালীন ভাতার তালিকায় নাম উঠিয়েছেন। তাও আবার ভাতার তালিকায় নাম উঠাতে অনেককে দিতে হয়েছে ঘুষ। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, ভাতার কার্ড হওয়ার পর মাসের পর মাস ঘুরে পাচ্ছেন না টাকা। একটি প্রতারক চক্রের ফাঁদে পড়ে সরকারি ভাতার টাকা হারাচ্ছেন এমন শতশত দরিদ্র নারী। নানা কৌশলে তাদের টাকা হাতিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

এসব বিষয়ে গত এক বছরে ফরিদপুরের সালথা উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরে জমা পড়েছে অন্তত চার শতাধিক লিখিত অভিযোগ। তবে অভিযোগ দিয়েও ভাতাভোগীরা ফিরে পাননি তাদের ভাতার টাকা। কারা কীভাবে এসব ভাতার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন তার সঠিক উত্তরও দিতে পারছেন না কেউ।

তবে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট ইউপি সচিব, মেম্বার ও উদ্যোক্তারা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ভাতার আবেদনে সুবিধাভোগীদের দেওয়া বিকাশ, নগদ ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর কৌশলে পরিবর্তন করে নিজেদের পছন্দ মতো কারো অ্যাকাউন্ট নম্বর বসিয়ে দিচ্ছেন।

কোনো কোনো ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরাও এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত। যে কারণে ভাতাভোগীদের অ্যাকাউন্টে ঢুকছে না টাকা। টাকা চলে যাচ্ছে সিন্ডিকেটের দেওয়া অ্যাকাউন্টে। ফলে ভাতার টাকা থেকে বঞ্চিত নারীরা। যদিও চেয়ারম্যানদের দাবি, অ্যাকাউন্ট নম্বর ভুলের ঘটনাগুলো মন্ত্রণালয় থেকে ঘটে। এখানে তাদের কোনো হাত নেই।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ভাওয়াল ইউনিয়নের বারখাদিয়া গ্রামের জাকারিয়া মাতুব্বরের স্ত্রীর রত্না আক্তার ২০২৩ সালে মাতৃত্বকালীন ভাতার জন্য ইউনিয়ন পরিষদের সচিব ও উদ্যোক্তার মাধ্যমে আবেদন করেন। আবেদনে তিনি (ডাচ্-বাংলা ব্যাংক হিসাব-৭০১৭৩৩৭০৯১৮৯৮) অ্যাকাউন্ট নম্বরটি দেন। যাচাই-বাছাই শেষে রত্নার ভাতার কার্ডও হয়। গত বছরের ডিসেম্বর মাস থেকে ভাতার টাকা পাওয়া কথা থাকলেও মাসের পর মাস পেরিয়ে গেলেও তার অ্যাকাউন্টে কোনো টাকা ঢুকেনি।

পরে দেখা যায়, তার নামে টাকা ঢুকছে ঠিকই কিন্তু অন্য একটি (০১৮৬৭৯৩৩১৫৯২) রকেট নম্বরে।

রত্না আক্তার বলেন, ডিসেম্বর থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৮ হাজার টাকা ওই নম্বরে ঢুকেছে। বিষয়টি আমি ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে সচিব ও উদ্যোক্তাকে জানালে তারা জানান, ভুলে অ্যাকাউন্ট নম্বর পরিবর্তন হয়ে গেছে। পরে আমি মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়ে অ্যাকাউন্ট ঠিক করেছি। তবে আগের টাকা ফেরত পাইনি।

গট্টি ইউনিয়নের খর্দলক্ষনদিয়া গ্রামের রবিউল কাজীর স্ত্রী কারিমা আক্তার ভাতার আবেদনে (০১৭৫৯৩১৭৪৪২) বিকাশ নম্বরটি দেওয়া হয়। কিন্তু তার টাকা চলে যাচ্ছে (০১৭৬৬১১৫১২১) এই বিকাশ নম্বরে।

বল্লভদী ইউনিয়নের বাউষখালি গ্রামের এনামুল মোল্যার স্ত্রী তাহমিনা খানম ভাতার জন্য তার আবেদনে (০১৭৯৫৬১৫১৭০) বিকাশ নম্বরটি দেন। কিন্তু খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, গত ৯ মাস ধরে তার ভাতার টাকা (০১৮৪৫৬৭৮৭৯৬) এই বিকাশ নম্বরে। এতে ওই নম্বরে তাহমিনার ভাতার ১০ হাজার টাকা ঢুকেছে। শুধু রত্না, তাহমিনা ও কারিমা নয়, গত এক বছরে উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের অন্তত চার শতাধিক নারীর লাখ লাখ টাকা এভাবে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে।

এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক সুবিধাভোগী নারী জানান, কেউ পেটে কেউ কোলে করে শিশুসন্তান নিয়ে পরিষদের দ্বারে দ্বারে ভাতার কার্ড করিয়েছি। ভাতা পেতে অনেককে ১ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ইউপি সদস্য, সচিব ও উদ্যোক্তাকে দিতে হয়েছে। তারপরেও ভুল নম্বর দেখিয়ে আমাদের ভাতার টাকা কারা মেরে খাচ্ছে বুঝতে পারছি না। এসব বিষয় অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পাইনি।

বল্লভদী ইউনিয়নের উদ্যোক্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, আমার ইউনিয়নে একজন ভাতাভোগীর নম্বর ভুল হয়েছিল, পরে সেটা ঠিক করা হয়েছে। তাছাড়া কারো নম্বর ভুল হয়নি। যদিও উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ বল্লভদী ইউনিয়নের সুবিধাভোগী নারীরা দিয়েছেন।

যদুনন্দী ইউনিয়নের সচিব মো. এনায়েত হোসেন বলেন, সুবিধাভোগীদের আবেদনে ভুলক্রমে দুই-একটি নম্বর ভুল হতে পারে। সিন্ডিকেট করে অন্য কারো অ্যাকাউন্ট নম্বর বসিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়টি সত্য নয়। তাছাড়া ভাতাভোগীদের কাছ থেকেও কোনো টাকা নেওয়া হয় না। শুধুমাত্র আবেদন ফি বাবদ ২০০ টাকা নেওয়া হয়।

ভাওয়াল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ফারুকুজ্জামান ফকির মিয়া বলেন, আমার ইউনিয়নে একজন ভাতাভোগীর নম্বর ভুল হয়েছিল। তার টাকা রাজশাহী একজনের নম্বরে ঢুকতো। পরে সেটা ঠিক করেছি। তবে যতটুকু জানি, অ্যাকাউন্ট নম্বর ভুলের ঘটনাগুলো মন্ত্রণালয় থেকে ঘটে।

সালথা উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ফেরদৌস আরা ডলি বলেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সালথায় ২ হাজার ৫৪৫ জন নারীকে মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে ভুল অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকার ঘটনায় ৩ থেকে ৪ শতাধিক ভাতাভোগীর লিখিত অভিযোগ আমরা পেয়েছি। অভিযোগ পাওয়ার পর অনেকের অ্যাকাউন্ট নম্বর ঠিক করা হয়েছে। তবে যাদের টাকা যেসব নম্বরে ঢুকেছে, সেসব নম্বরগুলো বন্ধ থাকায় টাকা ফেরত আনা সম্ভব হয়নি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আনিছুর রহমান বালী বলেন, মা ও শিশু সহায়তা প্রকল্পের অধীনে মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রদান কার্যক্রমে ভাতাভোগী নির্বাচন করার জন্য ইউনিয়ন পর্যায় একটি কমিটি আছে। সেই কমিটির সভাপতি থাকেন সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানরা। তারা যাচাই-বাছাই করে ভাতাভোগী নির্বাচন করেন। এখানে যদি কেউ টাকা লেনদেন করে থাকে, সে ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, ভাতার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ও ভাতা পেতে টাকা নেওয়ার বিষয়গুলো আমার জানা নেই। তবে অনিয়মের এসব বিষয় কেউ যদি অভিযোগ দেয় বা শুনাও যায়, তাহলে তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ইএইচ

Link copied!