Amar Sangbad
ঢাকা মঙ্গলবার, ১৭ জুন, ২০২৫,

গাভি পালনে মেহেরুন্নেছার ভাগ্য বদল

হোসেনপুর (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি

হোসেনপুর (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি

আগস্ট ১৬, ২০২৪, ০৪:৩৪ পিএম


গাভি পালনে মেহেরুন্নেছার ভাগ্য বদল

কথায় আছে, পরিশ্রম সৌভাগ্যের জননী। গাভি পালন করে তেমনি এক আলোড়ন সৃষ্টিকারী অদম্য সফল নারী উদ্যোক্তা মেহেরুন্নেছা। কঠোর পরিশ্রম ও প্রবল প্রতিভা মেহেরুন্নেছাকে স্বাবলম্বীর পথ দেখিয়েছে।

তিনি কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের পশ্চিম ধূলজুরী গ্রামের আব্দুল মালেকের স্ত্রী।

জানা যায়, মেহেরুন্নেছা ২০১৭ সালে নিজস্ব অর্থায়নে বাড়ির আঙ্গিনায় গড়ে তোলেন গরু মোটাজাতাকরণ প্রকল্প। পরবর্তীতে ২০২০ সালে অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড হোসেনপুর শাখা থেকে ঋণ নিয়ে প্রকল্পের কাজ সম্প্রসারণ করেন। বর্তমানে তার খামারে বিভিন্ন উন্নত জাতের ১৫টি গরু রয়েছে। গত ঈদুল আযহার কোরবানি হাটে গরু বিক্রি করে ৩ লক্ষ টাকা মুনাফা অর্জন করেন তিনি।

গরুর খাদ্যের জন্য তিনি ধানের খড় মজুদ করে রেখেছেন। তা ছাড়া গরুর খাদ্য হিসেবে নিজস্ব জমিতে ঘাস রোপণ করে ব্যয় সংকোচন করেছেন।

বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে লিজকৃত ১ একর জমিতে গোবর দিয়ে জৈব সার তৈরি করে ধান চাষ করে বাম্পার ফলন ফলাচ্ছেন প্রতিবছর। মেহেরুন্নেছা ৪ কন্যা সন্তানের জননী হয়েও মেয়েদের নিয়ে দুশ্চিন্তিত নন।

প্রথম মেয়ে মৌসুমি আক্তার এসএসসিতে জিপিএ-৫, এইচএসসিতে জিপিএ-৪ এবং বিএসসি (অর্নাস) গণিত বিষয়ে প্রথম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হয়ে বাংলাদেশ আনসার বাহিনীতে উপজেলা প্রশিক্ষক পদে চাকরি করছেন।

দ্বিতীয় মেয়ে মিফতাহুল জান্নাত শাপলা এ বছর একটি সরকারি নার্সিং কলেজে প্রথম বর্ষে, তৃতীয় মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস মৌ দশম শ্রেণি এবং চতুর্থ মেয়ে হুমায়রা জান্নাত মুনা দ্বিতীয় শ্রেণীতে অধ্যয়ন করছেন।

৮ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া জানা মেহেরুন্নেছা ছোটবেলা থেকেই জীবন গড়ার স্বপ্ন দেখেন। প্রথমে তিনি কর্ম হিসেবে বেছে নেন দর্জির কাজ। তিনি প্রতিরক্ষা ও শারীরিক দক্ষতা বিকাশের জন্য উপজেলা আনসার ভিডিপি থেকে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত হন।

এছাড়াও তিনি পৌরসভার উন্নয়ন কমিটি ও স্থানীয় উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য মনোনীত হয়েছেন। তার অক্লান্ত চেষ্টায় এলাকার ঝড়ে পড়া শিশুদেরকে সেকেন্ড চান্স এডুকেশন স্কুল প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করে ঝড়ে পড়া রোধ করেন।

মেহেরুন্নেছা আমার সংবাদকে জানান, প্রবল ইচ্ছাই মানুষকে উন্নতির শিখরে নিয়ে যায়। নারীরা সমাজের বোঝা নয়। চার মেয়েকে তিনি শিক্ষিত করে তুলেছেন।

আরও জানান, পারিবারিক জীবনে আর্থিক উন্নতির পাশাপাশি দেশ ও সমাজের উন্নয়ন করে যাবেন তিনি।

স্থানীয় বাসিন্দা রিনা আক্তার জানান, তিনি একজন সফল নারী। নারীরা সমাজের বোঝা নয়, তার প্রকৃত উদাহরণ তিনি৷ তাকে দেখে অনেক নারীই অনুপ্রাণিত হচ্ছেন। তিনি নিজ চেষ্টায় সফল হয়েছেন।

হোসেনপুর পৌরসভার সংরক্ষিত ২ আসনের মহিলা কাউন্সিলর পারভীন আক্তার জানান, নারীদের জন্য অনুকরণীয় হতে পারেন তিনি। নিজে সুন্দরভাবে সংসারের লাগাম টেনে ধরেছেন। চার মেয়েকে পড়াশোনা করিয়েছেন। গাভি লালন পালন করে মেহেরুন্নেছার মত এমন নারী উদ্যোক্তার প্রয়োজন। তার এমন সাফল্য দেখে অন্য নারীরাও কর্মে এগিয়ে আসবে।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. উজ্জ্বল হোসাইন বলেন, মেহেরুন্নেছার মতো নারীরা সমাজ ও দেশকে এগিয়ে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছেন। তাকে গাভি পালনে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হয়েছে এবং তাকে সরকারি সুযোগ সুবিধা দেয়া হবে।

ইএইচ

Link copied!