কালীগঞ্জ (লালমনিরহাট) প্রতিনিধি
মে ১২, ২০২৫, ০১:৪১ পিএম
কালীগঞ্জ (লালমনিরহাট) প্রতিনিধি
মে ১২, ২০২৫, ০১:৪১ পিএম
একসময় ব্যাপকভাবে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জে তামাক চাষ হতো। তবে গত কয়েক বছরে ব্যাপকভাবে শুরু হয় ভুট্টাচাষ। দিন দিন ‘বিষপাতা’ তামাক ছেড়ে ভুট্টাচাষে মনোনিবেশ করতে শুরু করেন কৃষকরা। কিন্তু এতদিনেও সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে স্থানীয়ভাবে ভুট্টা নির্ভর কোনো শিল্প কারখানা গড়ে ওঠেনি। ফলে ন্যায্যমূল্য না পেয়ে ভুট্টাচাষিরা অনেকেই হতাশ হয়ে পড়েছেন। ইতোমধ্যে অনেকে আবারও তামাক চাষে ফিরে যাচ্ছেন। কৃষকরা বলছেন, সার, বীজ ও কীটনাশকের দাম কমানো এবং ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তির জন্য উপজেলায় ভুট্টাজাত পণ্য উৎপাদন কারখানা গড়ে তোলা প্রয়োজন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কালীগঞ্জ উপজেলার আট ইউনিয়নে বর্তমানে ভুট্টাচাষ হয়ে থাকে। তবে তিস্তা নদীর বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে সবচেয়ে বেশি এ ফসলের চাষ হয়।
কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৪ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের ভুট্টাচাষ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৬ হাজার ৭২৯ টন। তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রতি হেক্টর জমিতে ১১ দশমিক ২৬ টন বেশি উৎপাদন হয়েছে।
ভুট্টাচাষীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনেক পরিশ্রমে ভুট্টা ফলাতে হয়। বর্তমানে সেচ, সার, বীজ ও কীটনাশকের দাম বৃদ্ধির কারণে উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। তবে অনেক কষ্টে ফলানো এ ফসলের যে দাম পাওয়া যাচ্ছে, তাতে অনেক ক্ষেত্রে লোকসান হচ্ছে। এ জেলায় এখন পর্যন্ত ভুট্টাকে কেন্দ্র করে বড় কোনো শিল্প কারখানা গড়ে ওঠেনি। ফলে উৎপাদিত ফসলটি কয়েক হাত ঘুরে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলে যাচ্ছে। এতে শ্রমে-ঘামে ফলানো ভুট্টার ন্যায্যমূল্য না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষকরা।
উপজেলার ভোটমারীর টটপাড়া এলাকার কৃষক সাজেদুল ইসলাম বলেন, “আমরা অনেক কষ্ট ও খরচে ভুট্টাচাষ করছি, কিন্তু বিক্রির সময় সঠিক দাম মেলে না। এভাবে এই ফসল হয়তো আর চাষ করা সম্ভব হবে না।”
চর ভোটমারীর ভুট্টাচাষী নুরনবী বলেন, “সরকার ভুট্টার জন্য কোনো কারখানার ব্যবস্থা করলে হয়তো বেশি দামে বিক্রি করতে পারতাম। সেটা না থাকায় দালাল বা ফরিয়াদের কাছে কমদামে বিক্রি করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।”
কাকিনা ইউনিয়নের ইশোরকোল গ্রামের নুরুজ্জামান মন্তা বলেন, “দাম না পাওয়ায় এবার বেশিরভাগ জমিতে ভুট্টাচাষ না করে তামাক চাষ করেছি এবং লাভবান হয়েছি। আগামী বছর হয়তো আমার সব জমিতেই তামাকের চাষই করবো।”
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ তুষার কান্তি রায় বলেন, “আবহাওয়া অনুকূল থাকায় এবার উপজেলায় ভুট্টার ফলন ভালো হয়েছে।”
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক সৈয়দা সিফাত জাহান বলেন, “এই জেলায় দরিদ্রতার হার কমানোসহ কৃষকদের আর্থিক স্বচ্ছলতার জন্য ভুট্টার ভূমিকা রয়েছে। জেলায় কোনো সংরক্ষণাগার বা ভুট্টা প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রি গড়ে উঠলে কৃষক মূল্য আরও বেশি পাবে। এবারের ডিসি সম্মেলনেও জেলা প্রশাসক বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন।”
ইএইচ