শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি:
মে ১৭, ২০২৫, ০৩:১৫ পিএম
শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি:
মে ১৭, ২০২৫, ০৩:১৫ পিএম
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে যমুনা নদীতে ফের ভয়াবহ ভাঙন শুরু হয়েছে। নদীর পূর্ব তীরে জেগে ওঠা চরের কয়েকটি গ্রাম ব্যাপকভাবে ভাঙনের কবলে পড়েছে, এতে আতঙ্কে দিন কাটছে চরবাসীর।
অন্যদিকে সাড়ে ৬ কিলোমিটার এলাকায় ৬৪৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন যমুনার পশ্চিম তীর সংরক্ষণ বাঁধের ১৫ নম্বর সেক্টরে সিসি ব্লক ধসে পড়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, ঠিকাদারের গড়িমসি ও পর্যাপ্ত ডাম্পিংয়ের অভাবে এ ধস দেখা দিয়েছে। ধসের পর পানি উন্নয়ন বোর্ড দ্রুত ডাম্পিং শুরু করলেও নদীতীরবর্তী বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক কাটেনি।
জানা গেছে, উপজেলার ৩টি ইউনিয়নের অন্তত ৯টি গ্রামে (কৈজুরি ইউনিয়নের চর ঠুটিয়া, সোনাতনী ইউনিয়নের মাকড়া, ধীতপুর, কুড়সি, বারপাখিয়া, বড় চামতারা, বানতিয়ার এবং গালা ইউনিয়নের বৃ-হাতকোড়া ও মোহনপুর) যমুনার ভয়াবহ ভাঙনে ফসলি জমি, ঘরবাড়ি, মসজিদ ও মাদ্রাসা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। গত ১ মাসের মধ্যেও বহু বাড়িঘর ও জমি নদীতে তলিয়ে গেছে। এসব এলাকায় ধান, বাদাম, মাষকলাই, পটল, বেগুন, বাঙ্গী, সবজি ও ধনিয়ার মতো নানা ফসল উৎপন্ন হতো। অনেক কৃষক ষাঁড় পালন করে বাড়তি আয়ের সুযোগও পেতেন। ভাঙনের ফলে এসব আয়-উপার্জনের পথও এখন বিপর্যস্ত।
ধীতপুর গ্রামের ৭০-উর্ধ্ব কৃষক কালু মোল্লা জানান, “৮৮ সাল থেকে ভাঙনের মুখে পড়ছি। এখন পর্যন্ত ১১ বার জায়গা বদল করেছি। বাড়িঘর আর জমিজমা সবকিছু নদীতে চলে গেছে। এখন অন্যের জমিতে ঘর তুলে থাকি, সেটাও ভাঙনের হুমকিতে।”
মনোয়ারা বেগম (৬৫) বলেন, “আমার বাড়িঘর ও ফসলি জমি ১৪ বার নদীতে বিলীন হয়েছে। এখন আবার ভাঙনের মুখে আছি। রাত কাটে আতঙ্কে।”
রজিনা খাতুন বলেন, “এই চরের মাটি সোনার মতো উর্বর। শাকসবজি বুনে সংসার ভালো চলত। এখন সবকিছু হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছি।”
আব্দুর রহমান বলেন, “গত এক বছরে সোনাতনী ইউনিয়নের শ্রীপুর থেকে বারপাখিয়া পর্যন্ত প্রায় ৩/৪ শত বাড়িঘর যমুনা নদীতে বিলীন হয়েছে। ভাঙন রোধে দ্রুত স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ প্রয়োজন।”
ফজর আলী ব্যাপারী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “চ্যাংড়া থেকে বুড়া হয়ে গেলাম, কিন্তু ভাঙন রোধে কোনো সরকারই কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি।”
কুরসি গ্রামের মাওলানা নজরুল ইসলাম বলেন, “ভাঙনে কুরসি গরুর হাট, মসজিদ, মাদ্রাসা, ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি বিলীন হয়ে যাচ্ছে। সরকার যদি দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে এই ইউনিয়ন সম্পূর্ণ নদীতে তলিয়ে যাবে।”
শাহজাদপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জেরিন আহমেদ বলেন, “গত ৬ বছরে এই তিন ইউনিয়নের প্রায় ২৮০ হেক্টর জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে, তবে বিপরীতে প্রায় ৯০ হেক্টর জমি নতুনভাবে জেগে উঠেছে। জমির পরিমাণ কমেনি, তবে ভাঙনের ফলে কৃষকের তাৎক্ষণিক ক্ষতি হচ্ছে।”
শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান বলেন, “ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বলা হয়েছে দ্রুত বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলার ব্যবস্থা নিতে।”
ইএইচ