সুমন মোল্লা, পাথরঘাটা (বরগুনা)
আগস্ট ১, ২০২৫, ০৩:৩৮ পিএম
দেশের সর্বদক্ষিণের উপজেলা পাথরঘাটা। পশ্চিমে বলেশ্বর নদী, পূর্বে বিষখালী নদী, আর দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর; চারদিকে পানি থাকলেও এখানকার মানুষের ভাগ্যে নেই এক ফোঁটা বিশুদ্ধ পানির স্বস্তি। গত ছয় মাস ধরে পাথরঘাটা পৌরসভার বাসিন্দারা পানির তীব্র সংকটে দিন কাটাচ্ছেন।
বরগুনা জেলার পাথরঘাটা পৌরসভার ছয়টি সাপ্লাই পাম্পের মধ্যে চারটি দীর্ঘদিন ধরে বিকল। এর ফলে অধিকাংশ এলাকায় পানির সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
মাসের পর মাস পানি না পেলেও নিয়মিত বিল আসছে, যা স্থানীয়রা ‘জলবিহীন বিল নিপীড়ন’ হিসেবে বর্ণনা করছেন।
পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে সাপ্লাই পানির ইউনিট রেট অন্যান্য পৌর এলাকার তুলনায় বেশি নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কেউ কেউ বলেন, পানি না দিয়ে বিল নেওয়া বেআইনি ও জনবিরোধী সিদ্ধান্ত।
পৌর শহরের ৩নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আলমগীর হোসেন বলেন, “আমার এলাকায় দেড় বছর ধরে পানির সরবরাহ নেই, অথচ প্রতি মাসে বিল ঠিক মতো আসে। খাওয়ার পানি দূর থেকে কিনে আনতে হয়, গোসল তো বিলাসিতা হয়ে গেছে।”
সাগর ও নদীর পানির লবণাক্ততার কারণে তা ব্যবহার অনুপযোগী। তাই পৌরবাসী সম্পূর্ণরূপে সাপ্লাই পানির ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু সেই পানির সরবরাহই এখন বন্ধ।
স্থানীয়রা একাধিকবার মানববন্ধন ও পৌরসভা ঘেরাও কর্মসূচি গ্রহণ করেও বাস্তবে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন।
পাথরঘাটা প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক মুহম্মদ নজমুল হক সেলিম বলেন, “পৌর কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে এই সংকট সৃষ্টি হয়েছে। নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পাম্পগুলো বিকল হয়ে আছে।”
পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মজিবুল হায়দার জানান, কিছু ওয়ার্ড উঁচু হওয়ায় সেসব এলাকায় পানি সরবরাহে সমস্যা হচ্ছে। তবে সমস্যার সমাধানে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে, যা অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। দ্রুত কাজ শুরু করা হবে।
পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পৌর প্রশাসক মিজানুর রহমান বলেন, “যেসব এলাকায় পানি সরবরাহ দেওয়া সম্ভব হয়নি, সেসব এলাকার বাসিন্দাদের বিল কমিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে।”
তবে এসব আশ্বাসে তেমন ভরসা রাখতে পারছেন না পৌরবাসী। তাদের প্রশ্ন একটাই—চারপাশে পানি থাকলেও কেন মুখে পানির ফোঁটাও নেই? এ কি শহরের অবস্থা?
ইএইচ