Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

শ্রমিকদের পাওনা মিটিয়েছে ওলিও অ্যাপারেলস

মো. মাসুম বিল্লাহ

নভেম্বর ৭, ২০২২, ০৩:০৩ পিএম


শ্রমিকদের পাওনা মিটিয়েছে ওলিও অ্যাপারেলস

কারখানা স্থানান্তরের প্রয়োজনীয়তা আগের কারখানার সকল কর্মীদের বকেয়া পরিশোধ করেছে ওলিও অ্যাপারেল্স লিমিটেড। রোববার বিজিএমইএ ভবনে শ্রমিকদের সকল প্রকার পাওনা পরিশোধ করে প্রতিষ্ঠানটি। 

এর আগে গত ১লা নভেম্বর কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের প্রধান কার্যালয়ে শ্রমিক, মালিকপক্ষ ও সরকারের সমন্বয়ে বহুপক্ষীয় সমঝোতা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

সেখানে নেয়া সিদ্ধান্ত অনুসারেই শ্রমিকদের এই পাওনা পরিশোধ করা হয়েছে বলে এক বার্তায় জানিয়েছে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সংস্থা (বিজিএমইএ)।

এতে বলা হয়, এনভয় গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ওলিও এ্যাপারেলসের কারখানা ভবনে ত্রুটি ও অগ্নি নির্বাপনে ভুগর্ভস্থ জলাধারের সংকট থাকায় সেখানে কার্যক্রম চালানো সম্ভব হচ্ছে না। 

কারণ এসব দূর্বলতায় ইতোমধ্যে আরএমজি সাসটেইনেবিলিটি কাউন্সিল (আরএসসি) প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন পরিচালনায় নিষধাজ্ঞা দিলে গত ১লা নভেম্বর থেকে এর সকল ক্রেতা তাদের সকল (চলমান এবং ভবিষ্যত) ক্রয়াদেশ বাতিল করে। 

ওলিও অ্যাপারেলের পক্ষ থেকে এসব সমস্যা কাটাতে ভবনটি সংস্কারের উদ্যোগ নিলেও ভবন মালিকের আপত্তি থাকায় তা সম্ভব হয়নি। ফলে প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান কারখানা উত্তর কমলাপুরের কেআরসি ভবন থেকে দক্ষিণখানের চালাবনস্থ সিমকো কমপ্লেক্সে স্থানান্তরের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।

ক্রেতা ধরে রাখতে প্রতিষ্ঠানটি তাৎক্ষণিক স্থানান্তরিত হতে চাইলে শ্রমিকদের মধ্যে চাকরি হারানোসহ বেতন না পাওয়ার শঙ্কা দেখা দেয়। এসময় মজুরির দাবিতে রাস্তায় নেমে আসে। গত ১ নভেম্বর শ্রমিকরা তাদের দাবি দাওয়ার জন্য রাস্তায় নেমে এলে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। 

পরে মালিকপক্ষের সাথে শ্রমিক এবং বিজিএমইএ’র সমঝোতায় ওই দিন মধ্যরাতে আন্দোলন থেকে সরে যায়। এরপর সেই সমঝোতার আলোকে রোববার বিজিএমইএ কার্যালয়ে শ্রমিকদের সকল দাবি দাওয়া মিটিয়ে দেয় কারখানা কর্তৃপক্ষ।

বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে বলা হয়, এনভয় গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ওলিও এ্যাপারেলস ভাড়া চুক্তির মাধ্যমে ২০০৭ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি থেকে উত্তর কমলাপুরের কেআরসি ভবনে শতভাগ রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক কারখানা স্থাপন করে উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করে। 

দীর্ঘ ১৬ বছরে কারখানা কর্তৃপক্ষ দেশের প্রচলিত আইন, বিদেশী ক্রেতাদের চাহিদা এবং পোশাক খাতের সংগঠন আরএসসি’র (আরএমজি সাসটেইনেবল কাউন্সিল) নির্ধারিত বৈদ্যুতিক, অগ্নি ও ভবনের কাঠামোগত নিরাপত্তা মান নিশ্চিত করতে বিপুল পরিমান অর্থ বিনিয়োগ করে।

সাম্প্রতিক সময়ে আরএসসি’র পর্যালোচনায় অগ্নি নিরাপত্তার জন্য ভূগর্ভস্থ জলাধারের অপর্যাপ্ততা ও কিছু অংশে ভবনটির কাঠামোগত দুর্বলতা চিহ্নিত করে। এর ফলে সমস্যা নিরসনে আবারো বিপুল পরিমান অর্থ বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। 

কিন্তু নতুন করে ভূগর্ভস্থ জলাধার নির্মাণ ও ভবনটির কাঠামোগত ত্রুটি মেরামতের (Retrofitting) কাজ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। উপরন্তু এ ব্যাপারে ভবন মালিকের সুস্পষ্টভাবে অসম্মতি জানালে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হয় না। ফলে আরএসসি’র চাহিদা মাফিক কমপ্লায়েন্স উপযোগী করা সম্ভব হয়নি।

এ কারণে সংশ্লিষ্ট ভবনে উৎপাদন পরিচালনার ক্ষেত্রে অবধারিত ভাবেই বিদেশী বায়াররা তাদের চলমান ও ভবিষ্যৎ সকল ক্রয়াদেশ (ওয়ার্ক অর্ডার) গত ১লা নভেম্বর থেকে স্থগিত, ক্ষেত্র বিশেষে বাতিল করে। 

পাশাপাশি আরএসসি কারখানায় উৎপাদন পরিচালনার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এসব কারণে কারখানা কর্তৃপক্ষ ওই ভবনে আর কার্যক্রম চালাতে পারবে না। শ্রম আইনের ২৮(ক) ধারা অনুযায়ী এই ধরণের ঘটনা মালিকের নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত।

তবে প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ বহাল রাখার স্বার্থে কারখানা কর্তৃপক্ষ দক্ষিণখান এলাকার চালাবন সিমকো কমপ্লেক্সে নতুন কারখান স্থাপন করে। এটি একই সাথে ভূগর্ভস্থ জলাধার, সঠিক মানের ভবন এবং বিদেশী বায়ার ও আরএসসি’র সকল কমপ্লায়েন্স পুরণে সক্ষম। 

কিন্তু তাৎক্ষণিক স্থানান্তরের বিষয়টি শ্রমিকদের সময়মতো না জানানোয় তারা চাকরি এবং পাওনাদি নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন। এছাড়া মালিকপক্ষ থেকে সুস্পষ্ট কোন বার্তা না পেয়ে তার দাবি দাওয়া আদায়ে সড়কে নেমে পড়েন। 

কিন্তু পরে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে সরকারি প্রতিনিধি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, মালিকপক্ষ, বিজিএমইএ, শ্রমিকসহ বহুপক্ষের মধ্যে একটি সমঝোতা সভা অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে শ্রমিক ও মালিকপক্ষের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনার পর ৯টি বিষয়ে সমঝোতা হয়। 

এগুলো হলো- কারখানাটি পূর্বের স্থান থেকে নির্ধারিত নতুন স্থানে স্থানান্তর, সকল শ্রমিককে নোটিশ পে বাবদ ৩০ দিনের মূল মজুরি প্রদান, সকল শ্রমিককে প্রতি পূর্ণ বছর চাকুরির জন্য সার্ভিস বেনিফিট বাবদ ৩০ দিন হারে মূল মজুরি প্রদান, অক্টোবর-২০২২ মাসের মোট মজুরি ও ওভার টাইম প্রদান, অর্জিত ছুটির টাকা শ্রম আইন মোতাবেক প্রদান, মাতৃত্বকালীন ছুটির টাকা আবেদন করা থাকলে শ্রম আইন মোতাবেক প্রদান, কোন শ্রমিককে মামলা বা পুলিশী হয়রানি না করাসহ ইন্টারনেটে কোন ছবি না দেয়া, সমস্ত পাওনা বুঝে নেয়ার পরও যদি কোন শ্রমিক স্থানান্তারিত ঠিকানায় চাকুরি করতে চায় তা হলে নতুনভাবে চাকুরিতে যোগদান করা এবং কারখানা কর্তৃপক্ষ উল্লিখিত পাওনা ৬ নভেম্বরের মধ্যে উত্তরার বিজিএমইএ কার্যালয় থেকে পরিশোধ করা। বহুপক্ষীয় বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ি কারখানা কর্তৃপক্ষ সকল পাওনাদী রোববার সকাল ১০টায় উত্তরার বিজিএমইএ কার্যালয় থেকে পরিশোধ করেছেন।

কারখানা কর্তৃপক্ষ জানায়, শ্রমিকরা শান্তিপূর্ণভাবে তাদের পাওনাদী পেয়েছেন। তাদের পূর্বেকার কোন বকেয়া ছিল না। শুধু সমাপ্ত হওয়া অক্টোবর মাসের মজুরি ও ওভারটাইম বাকি ছিল। 

শ্রম আইন মোতাবেক তাদের সকল পাওনা পরিশোধ করা হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন টিভি চ্যানেল ও সংবাদপত্রে শ্রমিকদের ৩-৪ মাসের বেতন-ভাতা বকেয়ার তথ্য জানিয়ে যে সংবাদ প্রচার করা হয়েছে তার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে।

টিএইচ

Link copied!