ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা শনিবার, ০২ আগস্ট, ২০২৫
Amar Sangbad
২০২২ সালে ঢাকার চিত্র

জীবিকার ব্যয় বেড়েছে ১১ শতাংশ

মো. মাসুম বিল্লাহ

জানুয়ারি ২১, ২০২৩, ০৭:২০ পিএম

জীবিকার ব্যয় বেড়েছে ১১ শতাংশ
  • সবচেয়ে বেশি বেড়েছে চাল-আটা-ডাল-বেকারি পণ্যের দাম
  • ঢাকার মূল্যস্ফীতিতে প্রভাব ফেলেছে ১৭ পণ্য
  • দুর্দশা বেড়েছে মধ্যবিত্ত ও নিম্নআয়ের মানুষের
  • বাস্ত চিত্র আরও খারাপ- বলছেন ভোক্তারা
  • শহরাঞ্চলে সামাজিক সুরক্ষা স্কিম বাড়ানোর তাগিদ

সমাপ্ত বছর ২০২২ সালে সারাদেশে জীবিকার ব্যয় বেড়েছে রেকর্ড হারে। এতে সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হয়েছে রাজধানীর মানুষ। খাদ্য, সেবা ও ব্যবহার্য পণ্যে আগের বছরের তুলনায় ১১ শতাংশেরও বেশি খরচ গুনতে হয়েছে ঢাকা শহরের মানুষকে। শনিবার (২১ জানুয়ারি) কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) তাদের পণ্য ও সেবার মূল্যবিষয়ক প্রতিবেদন ২০২২ প্রকাশ করেছে।

এতে দেখা যায়, ঢাকা শহরে বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। একই সময়ে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ১০ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ এবং খাদ্যবহির্ভূত অন্যান্য পণ্যে মূল্যস্ফীতি ১২ দশমিক ৩২ শতাংশ। সংস্থাটি বলছে, এরমধ্যে মূল্যস্ফীতির হার বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে চাল, আটা, ডাল, বেকারি পণ্য এবং চিনি।

এছাড়া এ সময় মাছ, ডিম এবং দেশি মুরগি, ভোজ্যতেল, আমদানিকৃত ফল, চা-কফি,  স্থানীয় এবং আমদানিকৃত দুধ, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার সামগ্রী, ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যসামগ্রী এবং পরিবহন খরচ অতিমাত্রায় বেড়েছে।

তবে বাস্তব চিত্র আরও খারাপ বলে মনে করছেন রাজধানীর বাসিন্দারা। তারা বলছেন, গবেষণা সংস্থাগুলো সাধারণত খাতাকলমে হিসাব করেন। আবার তাদের সংগৃহীত মূল্যতালিকা অনেকটা সতর্কতার সাথে সরবরাহ করা হয়। অনেকক্ষেত্রে সরকারের গোয়েন্দাসংস্থা বিষয়গুলোতে নজর রাখেন। তাই একটি নির্দিষ্ট ছকে বাঁধা এই রিপোর্টে অলিগলির বাজারের ক্রেতা সাধারণ ভোক্তাদের চিত্র উঠে আসেনি।

একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা কমলাপুর এলাকার বাসিন্দা মামুন শেখ আমার সংবাদকে বলেন, ‘ক্যাব কিসের ভিত্তিতে রিপোর্ট করেছে তা আমি জানি না। তবে, আমার দৈনন্দিন বাজার খরচ ভিন্ন কিছু বলছে। আমি নির্ধারিত দোকান থেকে বাজার করি, দোকানীর হিসাবের খাতা দেখলেই বুঝতে পারবেন দামবৃদ্ধির হার আসলে কত।

উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ৫০ টাকার চাল ৭০ টাকায় কিনছি অর্থাৎ ৪০ শতাংশ বেড়েছে। সাবান ও প্রসাধনির দাম ৬০ থেকে ৯০ শতাংশ, তেল-চিনির দাম ৪০-৬০ শতাংশ বেড়েছে। তাই আমার মনে হচ্ছে সঠিক উপায়ে হিসাব করলে গড় মূল্যস্ফীতি ২০ শতাংশের বেশি হবে।’  

ক্যাবের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সারাদেশে ২০২২ সালে বার্ষিক মূল্যস্ফীতির তুলনায় খাদ্য মূল্যস্ফীতি  কম ছিল। খাদ্যে ১০ দশমিক ৪১ এবং খাদ্য-বহির্ভূত পণ্যে ৭ দশমিক ৭৬ শতাংশ। যদিও উভয় শ্রেণির পণ্য ও সেবা মৌলিক প্রকৃতির ছিল। ভোগের ঝুড়িতে খাদ্যবহির্ভূত পণ্য ও সেবার অংশ খাদ্য পণ্যের তুলনায় কম ছিল। খাদ্যবহির্ভূত জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধি বেশির ভাগই ছিল স্থায়ী প্রকৃতির। এ কারণে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি খাদ্য মূল্যস্ফীতির তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি ছিল।

সংস্থাটি তাদের প্রতিবেদনে ঢাকা শহরে মূল্যস্ফীতির সার্বিক পরিস্থিতি বিস্তারিত তুলে ধরেছে। এতে দেখা যায়, ২০২২ সালের মে মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছিল। যখন এটি জানুয়ারির তুলনায় ৭.২৯%-এ পৌঁছেছিল। এরপর জুনে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্কে পৌঁছে (১১.২৫%), যা সেই মাসে সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি বাড়াতে সাহায্য করেছিল (১০.৪%)।

জুলাই মাসে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ছিল সর্বোচ্চ (১৮.৬%), যা প্রধানত জ্বালানি মূল্যের ঊর্ধ্বমুখী সংশোধন অনুসরণ করে ঘটেছিল। এটি সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধিতেও ভূমিকা রেখেছে। এরপর আগস্টে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৫.৮৬-এ উন্নীত হয়েছে। সেপ্টেম্বরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ২০২২ সালের মধ্যে সর্বোচ্চ (১৭.২৫%) হয়েছে। তবে এরপরের মাসগুলোতে ধীরে ধীরে হ্রাস পেয়েছে। যদিও এটি ডিসেম্বরে দুই অঙ্কের মধ্যে ছিল (১২.১%)।

অন্যদিকে আগস্টে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে (১৪.৭%)। কিন্তু পরে তা ফের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়তে থাকে (১৬.০৩%)।

জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির ফলে সৃষ্ট খাদ্য-বহির্ভূত মূল্যস্ফীতি এবং মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার দ্রুত অবমূল্যায়ন উৎপাদন খরচ, আমদানিকৃত পণ্যের দাম এবং পরিবহন খরচ বৃদ্ধিতে প্রধান ভূমিকা পালন করেছে বলে জানানো হয় প্রতিবেদনে।

২০২২ সালের এপ্রিল পর্যন্ত খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয় ঋণাত্মক না হয় খুব কম ছিল। খাদ্য এবং খাদ্য-বহির্ভূত উভয় মূল্যস্ফীতি মে মাসে হঠাৎ করে বেড়ে যায়। জুন মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্কে প্রবেশ করে (১০.৩২%) এবং পরবর্তীতে জুলাই মাসে কমে যায়। যদিও সেই মাসে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি খুব বেশি ছিল (১৮.৮৬%)। এটি আবার আগস্টে বছরের সর্বোচ্চ পর্যায়ে (১৫.৩১%) ওঠে।

ক্যাব ঢাকা মেগাসিটি (ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নিয়ে গঠিত) জুড়ে ১১টি বাজার থেকে মাসিক দামের তথ্য সংগ্রহ করে এ প্রতিবেদনের জন্য। দৈনিক দাম পর্যবেক্ষণে ১৪১টি খাদ্য সামগ্রী, ৪৯টি খাদ্য-বহির্ভূত পণ্য এবং ২৫টি পরিষেবা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

প্রতিবেদনটি তৈরিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন ড. মাহফুজ কবীর। তিনি জানান, ২০২২ সালে মূল্যস্ফীতি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, ২০১১ সালের পর গত বছরে সাধারণ মূল্যস্ফীতি রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে। শহর ও গ্রামে উভয় জায়গায় মূল্যস্ফীতি বেড়েছে, যা বাংলাদেশের নিম্ন ও মধ্যম আয়ের পরিবারের দুর্দশা বাড়িয়েছে।

তিনি আরও জানান, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে অর্থনৈতিক অস্থিরতা ও মন্দাভাব সৃষ্টি হয়েছে এবং বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলে ব্যাঘাত ঘটেছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপ মানুষের প্রকৃত আয় এবং পারিবারিক কল্যাণ হ্রাস করে। এটি বেতনভোগী নিম্ন-মধ্যম এবং মধ্যম আয়ের পরিবারকে সংকটে ফেলেছে।

ক্যাব তাদের সুপারিশে জানিয়েছে, উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময়ে নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোকে পর্যাপ্তভাবে কভার করার জন্য যথাযথ পরিবীক্ষণের সঙ্গে ওএমএস স্কিমকে শক্তিশালী করা উচিত। ন্যূনতম টার্গেটিং ত্রুটির অত্যধিক লক্ষ্যসহ সারা বাংলাদেশে এক কোটি পরিবারের খাদ্যসহায়তা বাড়ানো উচিত। দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচির আওতা বাড়াতে হবে।

এ ছাড়া অস্থায়ীভাবে আওতা বাড়ানোর মাধ্যমে খাদ্য, খাদ্যবহির্ভূত মৌলিক পণ্য এবং দুস্থ জনগোষ্ঠীর কাছে নগদ হস্তান্তর কর্মসূচি বাড়ানো উচিত। যেহেতু গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর তুলনায় শহুরে জনগোষ্ঠী মূল্যস্ফীতির কারণে বেশি চাপ ও অসহায়ত্বের সম্মুখীন হয়, তাই সামাজিক সুরক্ষা জোরদার করার মাধ্যমে শহুরে নিম্ন আয়ের মানুষের প্রতি আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া উচিত।

সুপারিশে ক্যাব জানায়, সরকার দরিদ্র ও দুস্থ জনগোষ্ঠীর ওপর মূল্যস্ফীতির চাপ কমানোর জন্য ভর্তুকিযুক্ত খাদ্যসহায়তা এবং সামাজিক সুরক্ষার অধীনে সহায়তা বৃদ্ধি করেছে। কিন্তু নিম্ন ও মধ্যম আয়ের ভোক্তাদের ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির চাপ থেকে রক্ষা করতে সরকারের শহরাঞ্চলে সামাজিক সুরক্ষা স্কিম বাড়ানো উচিত।

সরকার কোভিড-১৯-এর সময় ওএমএস কার্যক্রমকে উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়েছে, যা এই ভোক্তাগোষ্ঠীকে অর্থনৈতিক শ্লথগতি এবং মূল্যবৃদ্ধির দুর্দশা থেকে রক্ষা করার জন্য ২০২২ সালে আরও প্রসারিত করা হয়েছে। কিন্তু অত্যন্ত উচ্চ চাহিদার বিপরীতে ওএমএসের মাধ্যমে খাদ্য সরবরাহের অপর্যাপ্ততা ও নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর মধ্যে ওএমএসের খাদ্যপণ্যের ন্যায্য বণ্টন নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে যথাযথ পরিবীক্ষণের অভাব রয়েছে।

টিএইচ

Link copied!