Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৯ মে, ২০২৪,

ছাত্রলীগ কমিটিতে পদবঞ্চিতদের অবরোধে অচল চবি ক্যাম্পাস

চবি প্রতিনিধি

চবি প্রতিনিধি

সেপ্টেম্বর ২০, ২০২২, ১০:৪৬ এএম


ছাত্রলীগ কমিটিতে পদবঞ্চিতদের অবরোধে অচল চবি ক্যাম্পাস

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শাখা ছাত্রলীগের কমিটিতে পদবঞ্চিতদের অবরোধে অচল হয়ে পড়েছে চবি ক্যাম্পাস। আটকে দেওয়া হয় শাটল ট্রেন। ভোগান্তিতে পড়েছে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা। বাতিল করা হয় ক্লাস পরীক্ষাসহ অন্যান্য শিক্ষা কার্যক্রম।

সোমবার (১৯ আগস্ট) সকাল সাড়ে ৭টায় চবি শাখা ছাত্রলীগের কমিটিতে পদবঞ্চিতরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেয়।

অচল হয়ে পড়া চবি ক্যাম্পাস থেকে ছেড়ে যায় নি কোনো বাস। শিক্ষার্থীদের যাতায়াত বাহন শাটল ট্রেন চট্টগ্রাম নিউমার্কেট থেকে ছেড়ে ষোলশহর স্টেশনে পৌঁছালে তা আটকে দেওয়া হয়।

এসময় দেখা যায় শাটল ট্রেনে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর বাড়ি ফিরে যায় শিক্ষার্থীরা। ছাত্রলীগের অবরোধ ইস্যুতে বিশ্ববিদ্যালয়  শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি এই নিয়ে তিনদিন। ফলে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশ। বিঘ্নিত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম।

সোমবারের অবরোধে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি হতে আসা শিক্ষার্থীদেরও।

বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয়েছে প্রথম বর্ষের ভর্তি কার্যক্রম। এছাড়াও চলছিল কোটায় ভর্তিচ্ছুদের সাক্ষাৎকার। ক্যাম্পাসের অচলাবস্থায় তাদের ভোগান্তি বেড়ে গেছে বহুগুণে।

প্রতিবন্ধী কোটায় সাক্ষাৎকার দিতে ঢাকা হতে আগত এক ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী বলেন, আমি ঢাকা হতে এসেছি। শাটলে বসে আছি অনেকক্ষণ। অবরোধের কারণে শাটল বন্ধ। এমন কিছু আশা করি নি। সময়মতো না পৌঁছাতে পারলে আমার ভর্তি অনিশ্চিত।

ক্যাম্পাস পরিস্থিতিকে উদ্বেগজনক উল্লেখ করে গণিত বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী আমির ইসলাম বলেন, দেখুন! আমাদের বয়স থেমে নেই। এভাবে চলতে থাকলে আমরা পড়াশোনা শেষ করে দেশ, জাতি ও পরিবারকে কখন সময় দিব?

বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগসহ অধিকাংশ বিভাগের পরীক্ষা স্থগিত হলেও আন্তর্জাতিক সম্পর্কসহ গুটিকয়েক বিভাগে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।

ক্লাস বাতিলে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে নৃবিজ্ঞান বিভাগের ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী তাসনিমুল ইসলাম বলেন, আজ আমাদের ৫টি ক্লাস ছিল। অবরোধের কারণে সব বাতিল করা হয়েছে। সামনে ফাইনাল পরীক্ষা আসছে। ক্লাস না হলে প্রকৃতপক্ষে ক্ষতি হয় সাধারণ শিক্ষার্থীদের।

তবে ষোলশহরে ট্রেনে করে আসা কিছু কিছু শিক্ষার্থী ক্লাসের এই শূন্যতা পূরণ করেছেন গ্রুপস্টাডি করে। স্টেশনের দোকানের টেবিল চেয়ার পেতে পরতে বসেছে তারা।

এতে অংশ নিয়ে হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী রোহানুর রহমান বলেন, ক্যাম্পাসের পরিবেশ একটু নাজুক হলেই শাটল ট্রেন বন্ধ হয়ে যায়। বাতিল হয় ক্লাস। ফলে বিঘ্ন হয় পড়ালেখায়। তাই সে শূন্যতা পূরণে আমরা গ্রুপস্টাডি করছি।

মূলত, দুই ভাগে বিভক্ত চবি ছাত্রলীগের নাছের গ্রুপের অনুসারী মোট ৬টি উপগ্রুপ এই অবরোধে অংশ নেয়। সেগুলো হলো ভিএক্স, রেড সিগনাল, একাকার, বাংলার মুখ, কনকর্ড, এপিটাপ, উল্কা।  দুপুর ১টায় অবরোধে অংশ নেয় নওফেল গ্রুপের অনুসারী বিজয় গ্রুপ।তবে অবরোধে অংশ নেয়নি নাছের গ্রুপের অন্য অনুসারী সিক্সটি নাইন।

আন্দোলনকারীদের সমর্থনে শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি রাকিবুল হাসান দিনার বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের দাবিগুলো জানিয়ে আসছিলাম অনেক দিন ধরে। আমাদের কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য না করতে অনুরোধ করেছি। কোনো লাভ হয়নি। এতে পদবঞ্চিতদের সমর্থন রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ নষ্টের এ দায়ভার শাখা ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতাকেই নিতে হবে।

অবরোধের বিষয়ে চবি প্রক্টর রবিউল ইসলাম বলেন, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীের সাথে আমাদের আলোচনা হয়েছে।তারা আমাদের কথা মেনে নিয়ে মেইন গেইট খুলে দিয়েছে। তবে, তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবে। আর আগামীকাল রুটিন মোতাবেক সকল পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। একই সাথে চলবে ক্লাস ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আনুষাঙ্গিক কার্যক্রম। বর্তমানে ক্যাম্পাসের সার্বিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে।

তবে, নেতাকর্মীরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে সকাল থেকে বন্ধ হওয়া মূল ফটক বেলা সাড়ে ১১টায় সাময়িক খুলে দিলে ক্যাম্পাসে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। পরে রাতে আন্দোলন আনুষ্ঠানিকভাবে স্থগিত করা হয়।

প্রসঙ্গত, গত ৩১ আগস্ট রাতে ঘোষিত ৩৭৬ সদস্যদের চবি ছাত্রলীগের কমিটিতে যোগ্যদের অবমূল্যায়ন করা হয়েছে বলে দাবি তুলে আন্দোলন শুরু করেছে পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা।

আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় চবি শহিদ মিনারে পদবঞ্চিতদের মানববন্ধন, গণস্বাক্ষর কর্মসূচি এবং গত ১১ সেপ্টেম্বর চবি মূল ফটক অবরোধ করে তারা।

এবি

Link copied!