Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৯ মে, ২০২৪,

যশোর মেডিকেল কলেজে শৃঙ্খলা ফেরাতে কঠোর পদক্ষেপ

এম এ রহমান, যশোর

এম এ রহমান, যশোর

নভেম্বর ৯, ২০২৩, ০৫:৪০ পিএম


যশোর মেডিকেল কলেজে শৃঙ্খলা ফেরাতে কঠোর পদক্ষেপ

২১ শিক্ষকসহ ২৩জনকে শোকজ

যশোর মেডিকেল কলেজের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে শৃংখলা ফেরাতে উদ্যোগী হয়েছে কর্তৃপক্ষ। এরই অংশ হিসেবে কতিপয় শিক্ষকের ফাঁকিবাজি রুখতে এবার কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। কোনো প্রকার অনুমতি এবং অনুমোদন ছাড়াই কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় ২১জন শিক্ষকসহ ২৩জনকে শোকজ করেছেন কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক আবু হাসনাত মো. আহসান হাবিব।

গত ৭ নভেম্বর জারিকৃত শোকজ নোটিশের জবাব তিন কর্মদিবসের মধ্যে দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

অধ্যক্ষসহ যশোর মেডিকেল কলেজের ২৩টি বিভাগে কর্মরত রয়েছেন ৯২জন শিক্ষক। অভিযোগ রয়েছে, কতিপয় শিক্ষক অব্যাহতভাবে ফাঁকিবাজি করছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ মাসের পর মাস কর্তৃপক্ষের অগোচরেই অনুপস্থিত থাকছেন। কয়েকজন শিক্ষক সপ্তাহে একদিন, দু’দিন ও তিনদিন অফিস করছেন। অফিসে অনুপস্থিত থাকলেও মাস শেষে তাদের ব্যাংক একাউন্টে চলে যাচ্ছে বেতন ভাতার টাকা।

খোঁজ নিয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে, সরকারি অফিসে অনুপস্থিত থেকে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে শিক্ষকতা করাসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসা ব্যবসার সাথে সরাসরি জড়িত রয়েছেন ফাঁকিবাজ করা শিক্ষক ডাক্তাররা। এতে মেডিকেল কলেজের শিক্ষা ও একাডেমিক কার্যক্রম চরমভাবে ব্যহত হচ্ছে। একই সাথে সরকারি হাসপাতালের বর্হিঃবিভাগে আগত রোগী ও বিভিন্ন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীনরা সু-চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

সরকারি নিয়মানুযায়ী মেডিকেল কলেজের প্রত্যেক বিভাগের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী সকাল ৮টায় অফিসে আসবেন। একটানা দুপুর ২টা পর্যন্ত অবস্থান করে অফিস ত্যাগ করবেন। অফিসে উপস্থিত এবং বের হওয়ার সময় বায়োমেট্রিক হাজিরা নিশ্চিত করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এছাড়াও প্রত্যেক বিভাগে হাজিরা খাতার ব্যবস্থা থাকার কথা। দায়িত্বশীলদের তদারকি না থাকায় সরকারি নিয়মের তোয়াক্কা করেননি মেডিকেল কলেজের কতিপয় শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী। নিজেরাই নিয়ম করেছেন সপ্তাহে ২ দিন বা ৩দিন ক্লাস নেবেন। এক থেকে দেড় ঘন্টা অফিসে অবস্থান করে তারা বেরিয়ে পড়েন নিজস্ব চেম্বারের উদ্দেশ্যে। যশোর মেডিকেল কলেজে পদ ও পদবি করে ব্যবসা করাই তাদের মূল লক্ষ্য। ক্লিনিক্যাল বিভাগের শিক্ষকদের প্রতি সরকারের স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে, শিক্ষার্থীদের পাঠদানের পাশাপাশি হাসপাতালে রোগী চিকিৎসা সেবা দেয়ার। নিয়মিত বর্হিঃবিভাগের রোগী দেখাসহ ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীদের চিকিৎসা ও অপারেশন করারও বিধান রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে তা হচ্ছে না। সকালে মেডিকেল কলেজে কোনো রকম মুখদর্শন দিয়ে তারা বেরিয়ে পড়েন যশোরসহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় ব্যক্তিগত চেম্বারে। রোগীরা চিকিৎসার জন্যে হাহাকার করলেও তাদের সন্ধান পাওয়া যায় না। হাসপাতালের বিভিন্ন কক্ষ বরাদ্দসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করেও রোগী সেবা না দিয়ে কর্তৃপক্ষকে নিয়মিত ভোগান্তিতে ফেলছেন।

মেডিকেল কলেজের কতিপয় শিক্ষকের অব্যাহত অনিয়মের কারণে একাডেমিক ও প্রশাসনিক পর্যায়ে সৃষ্ট নানা জটিলতা কাটিয়ে উঠতে এবং সাধারণ মানুষের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে উদ্যোগী হয়েছেন নবাগত অধ্যক্ষ অধ্যাপক আবু হাসনাত মো. আহসান হাবিব।

দায়িত্বশীল সূত্র থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে, গত অক্টোবর মাসজুড়ে শিক্ষকদের কর্মস্থলে উপস্থিতিসহ সকল কার্যক্রমের উপর প্রত্যক্ষভাবে নজরদারি করেন অধ্যক্ষ নিজেই। বায়োমেট্রিক হাজিরা পর্যালোচনা করে তিনি নিশ্চিত হন, কর্তৃপক্ষের অনুমতি এবং অনুমোদন ছাড়াই ২১জন শিক্ষক অব্যাহতভাবে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন সহযোগী অধ্যাপক ৭জন, সহকারী অধ্যাপক ৬জন ও প্রভাষক ৮জন। অফিস ফাঁকির তালিকায় দু’জন কর্মচারীর নামও এসেছে। কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের প্রাথমিক ধাপে ৭ নভেম্বর প্রত্যেককে শোকজ নোটিশ দিয়ে কৈফিয়ত তলব করা হয়েছে।

কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক আবু হাসনাত মো. আহসান হাবিব জানিয়েছেন, কতিপয় শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর অব্যাহত অননুমোদিত অনুপস্থিতির কারণে নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। শৃঙ্খলা ফেরাতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে শোকজ করা হয়েছে। তিন কর্মদিবসের মধ্যে শোকজের জবাব দিতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। লিখিত জবাব পাওয়ার পর পর্যালোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।

অধ্যক্ষ আরও জানিয়েছেন, কলেজের একাডেমিক অর্থাৎ পাঠদান ও প্রশাসনিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার স্বার্থে এবং হাসপাতালে আগত মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে সব ধরণের পদক্ষেপ নেয়া হবে। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা অনিয়মগুলো নিরসন করতে হয়তো কিছুটা সময় লাগবে। সবার সহযোগিতা এবং সমর্থন পেলে কলেজে সব কার্যক্রমে শৃঙ্খলা সম্মুন্নত থাকাসহ হাসপাতালের চিকিৎসা সেবাও নিশ্চিত হবে।

এআরএস

Link copied!