বিবিসি বাংলা
জুন ২, ২০২৫, ১১:১৩ এএম
বিবিসি বাংলা
জুন ২, ২০২৫, ১১:১৩ এএম
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে জুলাই আন্দোলনে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ দাখিলের মাধ্যমে ট্রাইব্যুনালে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার ৮ মাস পর এই প্রথম হাসিনার বিরুদ্ধে কোনো মামলার বিচারের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু হলো। তবে অভিযোগ গঠনের পরই আনুষ্ঠানিকভাবে এ মামলায় হাসিনার বিচার শুরু হবে।
রোববার শেখ হাসিনাসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে ৫টি অভিযোগ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিকভাবে দাখিল করেছে প্রসিকিউশন। অভিযোগ আমলে নিয়ে হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে ট্রাইব্যুনাল।
এ মামলায় আরেক অভিযুক্ত পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
আগামী ১৬ জুন অভিযুক্তদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এ মামলার ১৩৪ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র দাখিল করেন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম।
বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনো মামলার শুনানি সরাসরি টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয়েছে।
চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম তার সূচনা বক্তব্যে বলেন, এই বিচার কেবল অতীতের প্রতিশোধ নয়। এটি ভবিষ্যতের জন্য প্রতিজ্ঞা।
হত্যা-ষড়যন্ত্রের ৫ অভিযোগ
জুলাই-আগস্টে ১৪০০ মানুষকে হত্যা এবং ২৫ হাজার মানুষকে আহত করা হয়েছে বলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ করেছেন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম। নিহতদের তালিকা ট্রাইব্যুনালে দাখিল করেছে প্রসিকিউশন।
হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে হত্যা, হত্যার চেষ্টা, ষড়যন্ত্র, সহায়তা, প্ররোচনা, উসকানি, সম্পৃক্ততার পাঁচটি অভিযোগের আট হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার ডকুমেন্ট দাখিল করা হয়েছে।
এ ছাড়া অডিও, ভিডিও, গণমাধ্যমের প্রতিবেদনও দাখিল করেছে প্রসিকিউশন। এ মামলায় ৮১ জন সাক্ষ্য দেবেন বলে ট্রাইব্যুনালকে জানিয়েছেন তাজুল ইসলাম।
তাজুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালকে জানিয়েছেন, পাঁচ অভিযোগে সুনির্দিষ্টভাবে মোট ১৩ জনকে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।
তিনি বলেন, গত বছরের ১৪ জুলাই প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে শেখ হাসিনা এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীদের রাজাকারের বাচ্চা, নাতি-পুতি বলে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে অভিযুক্ত আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ তৎকালীন সরকারের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্ররোচনা, সহায়তা ও সম্পৃক্ততায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য এবং সশস্ত্র আওয়ামী সন্ত্রাসী কর্তৃক ব্যাপক মাত্রায় ও পদ্ধতিগতভাবে নিরীহ, নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর আক্রমণের অংশ হিসেবে হত্যা, হত্যার চেষ্টা, নির্যাতনে সহায়তা করেছে।
এতে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনে বলা হয়েছে, এটি আসামিদের জ্ঞাতসারে সংঘটিত অপরাধ।
শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাইদকে লক্ষ্য করে বিনা উসকানিতে হত্যা, রাজধানীর চাঁনখারপুলে ৬ জনকে হত্যার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আনা হয়েছে।
এ ছাড়া, সরকার পতনের দিন ৫ আগস্ট আশুলিয়ায় পাঁচজনকে গুলি করে হত্যার পর তার মরদেহ এবং জীবিত একজনকেও আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
কেবল অতীতের প্রতিশোধ নয়, ভবিষ্যতের জন্য প্রতিজ্ঞা
চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম তার সূচনা বক্তব্যে উল্লেখ করেন এই বিচার কেবল অতীতের প্রতিশোধ নয়। ভবিষ্যতের জন্য প্রতিজ্ঞা।
মানবতাবিরোধী অপরাধ সহ্য করা হবে না উল্লেখ করে তাজুল ইসলাম বলেন, আমরা প্রমাণ করতে চাই একটি সভ্য সমাজ, যেখানে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন থাকবে। সেখানে গণহত্যা কিংবা মানবতাবিরোধী অপরাধ সহ্য করা হবে না। যে দেশে বিচার থাকবে সেখানে কেউ আইনের ঊর্ধ্বে থাকতে পারে না, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে থাকবে না।
জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানকে ‘মনসুন রেভল্যুশন’ বা ‘বর্ষা বিপ্লব’ নামে অভিহিত করে তাজুল ইসলাম বলেন, দেড় দশক ধরে চলমান রাজনৈতিক নিপীড়ন, মানবাধিকার হরণ ও রাজনৈতিক উগ্রপন্থার মাধ্যমে সৃষ্ট গভীর সামাজিক বিভাজনের প্রতিক্রিয়া হিসেবে এই বিপ্লব সংঘটিত হয়েছিল।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাদের যাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে, তাদের পরিবারের সদস্যদের কেউ কেউ আজ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিলের শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন।
যখন চিফ প্রসিকিউটর সূচনা বক্তব্য দিচ্ছিলেন, তখন এই ট্রাইব্যুনালে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া জামায়াতের নেতা মীর কাসেম আলীর ছেলে মীর আহমদ বিন কাসেম উপস্থিত ছিলেন। যিনি আরমান নামে পরিচিত, তিনি নিজেও একজন আইনজীবী। তিনি হাসিনার আমলে গুমের শিকার হয়েছিলেন। ২০১৬ সালের আগস্টে তাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
এ ছাড়া মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া জামায়াতের সাবেক আমির মতিউর রহমান নিজামীর ছেলে আইনজীবী নাজিব মোমেনও ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া বিচার কার্যক্রম দেখতে ট্রাইব্যুনালে আরও অনেক আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।
এ ছাড়াও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের শুনানি দেখতে উপস্থিত ছিলেন ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান। ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তারাও এদিন উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
ইএইচ