ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা শনিবার, ০২ আগস্ট, ২০২৫
Amar Sangbad

সিদ্ধান্তে ঝুলে আছে উত্তোলন

মো. মাসুম বিল্লাহ

আগস্ট ৩, ২০২২, ০১:৩৯ এএম

সিদ্ধান্তে ঝুলে আছে উত্তোলন

এশিয়ার সব থেকে উন্নত কয়লা পাওয়া যাবে রংপুরের পীরগঞ্জের মদনখালী কয়লাখনিতে। কিন্তু কয়লাখনি থেকে উত্তোলনের উদ্যোগ ঝুলে আছে বছরের পর বছর। সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন সংকটের পর হতে কয়লার দাম বিশ্ববাজারে বেড়েছে বহুগুণ। কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় পশ্চিমা বিশ্ব এখন ঝুঁকতে শুরু করেছে কয়লায়।

গত এক বছরে কয়লার দাম বেড়েছে ১৯৪ শতাংশ। দীর্ঘ সময় ধরে উদ্যোগের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত না আসায় কয়লা উত্তোলন করা যাচ্ছে না। অথচ বৈশ্বিক সংকটে দেশীয় জ্বালানি চাহিদা মেটাতে খনিটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

পেট্রোবাংলা সূত্র বলছে, চলমান বৈশ্বিক সংকট হতে  দেশীয় চাহিদা মেটাতে বড়পুকুরিয়া ছাড়া অন্য কোথাও থেকে কয়লা তোলা যায় কি না, তা নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। নতুন করে আরও ৪৬টি গ্যাস অনুসন্ধান কূপ খননের উদ্যোগও নেয়া হয়েছে। মদনখালী কয়লাখনির বিষয়ে দ্রুতই সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে।    

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, কয়লা উত্তোলনের উদ্যোগ নিলেই পরিবেশের দোহাই দিয়ে বাধা দিচ্ছে একটি মহল। আবার যখন বিদেশ থেকে কয়লা আনা হচ্ছে, তখন তারা আর কিছু বলে না। সে কারণে দেশীয় কয়লা জ্বালানি অনুসন্ধান ও উত্তোলন বন্ধ রয়েছে।

সর্বশেষ মদনখালীর কয়লা উত্তোলন পলিসি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা সরেজমিনে এসেছিলেন। এরপর আর অগ্রগতি নেই। মন্ত্রণালয়ে ফাইল পড়ে আছে বলে জানান কয়লা খনি প্রকল্পের প্রকল্প প্রধান প্রকৌশলী সামছুদ্দিন।

খনিজসম্পদ বিভাগহ সূত্রমতে, মদনখালী কয়লাখনি বিষয়ে ২০০৬ সালে সমীক্ষা প্রতিবেদন জমা পড়ে। এতে বলা হয়, এ খনি থেকে ১০ বছরে প্রতি বছর ৪ মিলিয়ন টন করে কয়লা উত্তোলন করা যাবে। কিন্তু কয়লা উত্তোলনের উদ্যোগ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়নি মন্ত্রণালয়। বিদ্যুৎ বিপর্যয় ঠেকাতে ২৭ জুলাই দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি থেকে নির্ধারিত সময়ের ১৮ দিন আগে কয়লা উত্তোলনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

অথচ এশিয়ার সব থেকে উন্নত কয়লা যেখানে রয়েছে, রংপুরের পীরগঞ্জের সেই মদনখালী কয়লাখনি থেকে উত্তোলনের উদ্যোগ ঝুলে আছে বছরের পর বছর।

রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোরশেদ হোসেন বলেন, পরিবেশ ও প্রতিবেশের ক্ষতি না করে এই কয়লা উত্তোলন করলে এ অঞ্চলে শিল্পায়নে তা সহায়ক হবে। উত্তোলনে সর্বাধুনিক পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। রংপুরের এই কয়লা উত্তোলন করা হলে দেশের অর্থনীতির চেহারাও পাল্টে যাবে।

বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি ও মধ্যপাড়া কঠিন শিলা প্রকল্প ছাড়া উত্তরাঞ্চলের অন্যান্য খনিজসম্পদ উত্তোলনে কোনো উদ্যোগ ও কার্যক্রম দৃশ্যমান হচ্ছে না। আবিষ্কারের পর তা ঝুলে আছে। আমরা মনে করি, এই খনি থেকে কয়লা উত্তোলন করা হলে বিদ্যুৎ ঘাটতি মোকাবিলা করা সম্ভব।

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান বলেন, বড়পুকুরিয়া ছাড়াও অন্য জায়গা থেকে কয়লা তোলা যায় কি না, তা নিয়ে আমরা কাজ করছি। বড়পুকুরিয়া থেকে আরও ছয় বছর কয়লা তোলা হবে। এছাড়া দীঘিপাড়া কয়লাখনির কয়লা তোলা নিয়েও কাজ করছি। গ্যাসের অনুসন্ধানে ৪৬টি কূপ খননের পরিকল্পনা করেছি। আমাদের রিগগুলোর মধ্যে একটি শ্রীকাইলে কাজ করছে। একটি বিয়ানীবাজারে যাবে, আরেকটি যাবে শরীয়তপুরে। এই রিগ যেতেও কিছুটা সময় লাগে।

বর্তমানে বিশ্ববাজারে কয়লা প্রায় রেকর্ড দামে বিক্রি হচ্ছে। ফলে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য কয়লা আমদানি করাও দুরূহ হয়ে পড়েছে। দেশে বিদ্যুৎ খাতের নির্মাণাধীন বড় প্রকল্পগুলোর মধ্যে রূপপুর ছাড়া বাকি সবই কয়লাভিত্তিক। বর্তমানে দেশে ৭ হাজার ৯৭ মেগাওয়াট সক্ষমতার মোট সাতটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন।  রামপালসহ তিনটি চলতি বছরে, আগামী বছর দুটি এবং বাকিগুলোও ২০২৪ সালে উৎপাদনে আসার কথা রয়েছে। সবগুলোই চলবে আমদানি করা কয়লা দিয়ে।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, দেশে কয়লাখনি রয়েছে পাঁচটি, দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া, রংপুরের খালাসপীর, জয়পুরহাটের জামালগঞ্জ, দিনাজপুরের ফুলবাড়ী ও দিনাজপুরের দীঘিপাড়া। এগুলোতে মোট ৭৯৬২ মিলিয়ন মেট্রিক টন কয়লা মজুত রয়েছে। দেশে এখন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু রয়েছে দুটি। এর মধ্যে শুধু বড়পুকুরিয়া খনি থেকে কয়লা উত্তোলন করে বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানো হচ্ছে।

এছাড়া এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য কয়লা আমদানি করতে হচ্ছে ইন্দোনেশিয়া থেকে। বর্তমান পরিস্থিতি বজায় থাকলে ভবিষ্যতে এ বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন চালু রাখা নিয়েও বড় ধরনের সংশয় রয়েছে।

পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়লে সব ধরনের জ্বালানির দাম বাড়ে। সেই হিসেবে কয়লার দামও বেড়েছে। আমরা কয়লা থেকে একেবারে সরে আসিনি। অক্টোবর থেকে বড় কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো উৎপাদনে আসতে শুরু করবে। তখন সংকটও কাটতে শুরু করবে।

১৯৮৯-৯০ পর্যন্ত ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর (জিএসবি) পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর রংপুরের পীরগঞ্জের মদনখালী ইউনিয়নের মাগুড়া গ্রামে এই খনির সন্ধান পায়। ১০ গ্রামের ২৫ বর্গকিলোমিটার এলাকায় টপোগ্রাফিক্যাল সার্ভে করে ১২ দশমিক ২৫ বর্গকিলোমিটার এলাকায় খনির সন্ধান পায় সংস্থাটি।

চারটি কূপ খনন করে তাতে আট স্তরের এই খনিতে ২২২ মিটার থেকে শুরু করে ৬০৭ মিটার গভীরতায় কয়লা পাওয়া যায়। গড়ে ২৬৫ মিটার থেকে শুরু হয়ে ৩৮৭ মিটারে কয়লার স্তর শেষ হয়েছে। এখানে কয়লা মজুত আছে ৪৫১ মিলিয়ন টন। তার মধ্যে প্রমাণিত মজুত ২৭৭ মিলিয়ন টন এবং অতিরিক্ত আরও ১৭৫ মিলিয়ন টন মজুতের সম্ভাবনা ধরা হয়েছে।

২০০৩ সালে টপোগ্রাফিক্যাল সার্ভের জন্য কনসোর্টিয়াম অব হোসাফ ইন্টারন্যাশনাল ও চায়নার সেনউইন মাইনিং গ্রুপ সরকারের কাছে আবেদন করে। ২০০৪ সালে সরকার অনুমোদন দিলে ২০০৫ সালে জরিপের কাজ শুরু করে তারা।

পীরগঞ্জ কয়লা খনির একজন ভূতত্ত্ববিদ জানান, খনিজ জরিপের প্রাথমিক কাজে দ্বিমাত্রিক ও ত্রিমাত্রিক সিসমিক সার্ভের জন্য বোরিং করে সুড়ঙ্গপথে খনিতে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার এক্সপ্লোসিভ বিস্ফোরণ করা হয়। তাতে কয়লার মজুত, পুরুত্ব, গভীরতা, চ্যুতি ও কয়লার বিস্তৃতি এবং স্তর সম্পর্কে পরীক্ষা চালানো হয়। সমীক্ষার পর এই খনিতে বিটুমিনাস গোত্রের কয়লার অবস্থান নির্ণয় করা হয়েছে, যার দহন ক্ষমতা এক হাজার ৫০০ ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট (বিটিইউ)।

কয়লার কোনো কোনো স্তরে কোকিং কোল নামে এক ধরনের কয়লা রয়েছে, যা দিয়ে যে কোনো ধাতু গলানোর কাজ করা সম্ভব। অন্য আরেক খনি কর্মকর্তার দাবি, এখানে বিটুমিনাস নামের উচ্চ জ্বালানি ক্ষমতাসম্পন্ন কয়লা রয়েছে। প্রতি পাউন্ড কয়লার জ্বালানি ক্ষমতা ১০ হাজার ৫০০ ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট (বিটিইউ)। এতে ক্ষতিকর সালফারের উপস্থিতি এক ভাগেরও কম।

খনির এক স্তরে ধাতু গলানোর কাজে ব্যবহূত কোকিং কোল ও চুনাপাথর এবং কাচ বালি রয়েছে, এগুলো অনেক খনিতেই পাওয়া যায় না। তিনি জানান, সমীক্ষার পর আরও উন্নত ড্রিলিং করা হয়। এরপর কয়লা নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়েছে। তাতে সর্বোচ্চ মান এবং কয়লার মজুত নির্ধারণ করা হয়।

২০০৬ সালের আগস্ট মাসে হোসাফ গ্রুপ কয়লা খনির সমীক্ষা প্রতিবেদন (ফিজিবিলিটি রিপোর্ট) সরকারের কাছে জমা দিয়ে মাইনিং লিজের জন্য আবেদন করে। তাতে খনিটি ভূগর্ভস্থ (আন্ডারগ্রাউন্ড মাইনিং) পদ্ধতিতে উত্তোলন করার কথা বলা হয়েছে।

এদিকে হোসাফের জমা দেয়া প্রতিবেদনটি মূল্যায়ন করার জন্য পেট্রোবাংলার হাইড্রোকার্বন ইউনিটের মাধ্যমে ইন্টারন্যাশনাল মাইনিং কনসালটেড লিমিটেড (আইএমসিএল) নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেয়া হয়।

সংস্থাটি মূল্যায়ন কাজ শেষ করে ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরে সরকারকে জমা দেয়। এতে বলা হয়েছে, ভূগর্ভস্থ খনন পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন করা হলে প্রতি বছর ২ মিলিয়ন টন কয়লা উত্তোলন করা সম্ভব।

আর ১০ বছরের টার্গেটে প্রতি বছর ৪ মিলিয়ন টন কয়লা উত্তোলন করা যাবে। এর জন্য বিনিয়োগ হতে পারে ২০০ মিলিয়ন ইউএস ডলার। আর প্রতি টন কয়লা বিক্রি হতে পারে ৫০ ইউএস ডলারে। এটি দিয়ে প্রথম ৫ বছর প্রতিদিন ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ এবং কয়লা উৎপাদন বাড়ালে দশম বছরে এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব।

 

Link copied!