আমার সংবাদ ডেস্ক
মে ১, ২০২৫, ১২:৩৫ এএম
আমার সংবাদ ডেস্ক
মে ১, ২০২৫, ১২:৩৫ এএম
আজ বৃহস্পতিবার (১ মে) বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে মহান মে দিবস—শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের স্মরণীয় দিন। ১৮৮৬ সালের এই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে কর্মঘণ্টা নির্ধারণসহ ন্যায্য অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলনে নেমে প্রাণ বিসর্জন দেন শ্রমিকরা। তাঁদের সেই আত্মত্যাগের স্মরণে প্রতিবছর ১ মে বিশ্বব্যাপী `আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি দিবস` বা `মে দিবস` পালন করা হয়।
বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় ৮০টি দেশে দিনটি জাতীয় ছুটির দিন হিসেবে পালন করা হয়। অন্যান্য অনেক দেশে এটি বেসরকারিভাবে পালিত হয়। বাংলাদেশের এবারের মে দিবসের প্রতিপাদ্য—‘শ্রমিক-মালিক এক হয়ে, গড়বো এ দেশ নতুন করে’।
মে দিবসের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি শ্রমজীবী মানুষের জীবনে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সূচনা করেছে। এর ফলে দৈনিক কাজের সময় সীমিত হয়ে আসে আট ঘণ্টায়। মালিক-শ্রমিক সম্পর্কের উন্নয়ন, অধিকার আদায় এবং সামাজিক বৈষম্য দূরীকরণের পথে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যদিও এখনো বৈষম্য পুরোপুরি দূর হয়নি, তবুও মে দিবসের চেতনা শ্রমজীবী মানুষের মুক্তির অনুপ্রেরণা হয়ে আছে।
মে দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন।
এক বাণীতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “শ্রমিক-মালিক সুসম্পর্কের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে মে দিবসের গুরুত্ব অপরিসীম। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় দেশের টেকসই উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। শ্রমিক ও মালিক একে অপরের পরিপূরক, তাঁদের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই আত্মনির্ভর ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, “দেশের পোশাক খাত, কৃষি, নির্মাণ, পরিবহন, প্রযুক্তি—সব খাতের উন্নয়নের পেছনে রয়েছে শ্রমিক ও মালিকের সম্মিলিত মেধা ও পরিশ্রম। বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার জন্য ঐক্য, শ্রদ্ধা ও আস্থার পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে।”
বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, শ্রম অধিকার সুরক্ষা ও কল্যাণ নিশ্চিতে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করেছে শ্রম সংস্কার কমিশন। ১৭ নভেম্বর গঠিত ১০ সদস্যের এ কমিশনের নেতৃত্বে রয়েছেন বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিআইএলএস)-এর নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ।
কমিশন অংশীজনদের মতামত নিয়ে ২১ এপ্রিল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন হস্তান্তর করে।
এছাড়া, ৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত আরএমজি বিষয়ক ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদের ২০তম সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুসারে বলা হয়েছে—যৌক্তিক কারণ এবং শ্রম আইন অনুসরণ ব্যতীত কোনো শ্রমিককে চাকরিচ্যুত বা ছাঁটাই করা যাবে না। এক্ষেত্রে পূর্বানুমতি নিতে হবে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন, পরিদর্শন অধিদপ্তর, শিল্প পুলিশ ও বিজিএমইএ’র।
এছাড়া মে দিবসে সকল কারখানা বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনা অমান্য করলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ইতিহাস অনুযায়ী, ১৮৮৬ সালের ১ মে শিকাগোর হে মার্কেটের শ্রমিকেরা আট ঘণ্টা কর্মদিবসের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। এক পর্যায়ে পুলিশ গুলি চালালে প্রাণ হারান অন্তত ১০ শ্রমিক। তাঁদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে শ্রমিক আন্দোলনের জোয়ার ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বজুড়ে।
১৮৮৯ সালের ১৪ জুলাই প্যারিসে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে এই ঘটনার স্মারক হিসেবে ১ মে-কে ‘আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১৮৯০ সাল থেকে দিনটি বিশ্বজুড়ে ‘মে দিবস’ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
ইএইচ