Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ০৬ জুন, ২০২৫,

চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে সংঘর্ষ: বন্ধ সেবা কার্যক্রম

আমার সংবাদ ডেস্ক

আমার সংবাদ ডেস্ক

মে ২৮, ২০২৫, ০৫:৪০ পিএম


চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে সংঘর্ষ: বন্ধ সেবা কার্যক্রম

রাজধানীর জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের কর্মচারীদের সঙ্গে রোগীদের স্বজন ও জুলাই আহতদের মধ্যে মারামারি হয়েছে। এ সময় হাসপাতালের চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পিটিয়ে রক্তাক্ত করা হয়েছে।

বুধবার (২৮ মে) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর আতঙ্কে হাসপাতাল ছেড়েছেন চিকিৎসক, রোগী ও স্বজনরা। তাদের দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করতে দেখা গেছে। পুলিশ মোতায়েন ছিল, তারা হুইসেল দিয়ে নিবৃত করার চেষ্টা করেও পারেননি।

হাসপাতালের চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সম্প্রতি জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত চারজন রোগী হাসপাতালে বিষপান করেন। এটিকে কেন্দ্র করে হাসপাতালের পরিচালক, চিকিৎসক ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা, গায়ে হাত তোলা ও ভাঙচুরের মতো ঘটনা ঘটে। পরিচালকের কক্ষে পেট্রোল ঢেলে আগুন দেওয়ারও চেষ্টা করেন জুলাই আহতরা।

এ ঘটনার প্রতিবাদে হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আজ সকাল থেকে কর্মবিরতি শুরু করেন। এতে হাসপাতালে আসা রোগীরা পড়েন বিপাকে। শিডিউল অনুযায়ী অস্ত্রোপচার করার কথা থাকলেও হয়নি। আউটডোরে লাইন থাকলেও টিকিট দেওয়ার লোক ছিল না। রুমের সামনে লোক থাকলেও চিকিৎসক ও কর্মচারীরা ছিলেন না। শুধু জরুরি বিভাগ খোলা ছিল।

নুরে আলম বাবু নামের একজন বলেন, কর্মস্থলে নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে আমরা আজ সকাল থেকে কর্মবিরতি পালন করছি। গতকাল আমাদের পরিচালকের গায়ে হাত তুলছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর হামলা করেছে। পরিচালকের রুম ভাঙচুর করেছে।

তিনি বলেন, কোনো পক্ষ সংক্ষুব্ধ হলেই গায়ে হাত তোলে। এটা কেমন? সব কিছুরই তো একটা নিয়ম আছে।

বাবুল মিয়া নামের একজনের অস্ত্রোপচারের তারিখ ছিল আজ। তার স্বজনদের হাসপাতালে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। সকালে সেবাপ্রার্থীদের সঙ্গে হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা, ধাক্কাধাক্কি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এই উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে পুরো হাসপাতাল ও আশপাশে।

পরে হাসপাতালে অবস্থান করা জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত রোগীরাও এতে যোগ দেন। তারা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে দেদারসে মারধর শুরু করেন। বাদ যাননি চিকিৎসক থেকে শুরু করে কেউ। তাদের সঙ্গে যোগ দেন পাশে জাতীয় অর্থপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (নিটোর) থাকা জুলাই আহতরাও।

দুপুর সোয়া ১২টার দিকে মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত চক্ষু হাসপাতালের কর্মকর্তা মিজানকে বের করে আনছিলেন কয়েকজন। মাথা থেকে অঝোরে রক্ত ঝরা অবস্থায় তাকে নিয়ে আসা একজন বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহতরা মিজানকে আঘাত করেন।’

বিষপান করা জুলাই যোদ্ধাদের চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন তারেক রহমান
ঠিক ওই সময় মিজানের মতো আরেকজনকে ভেতরে পেটানো হচ্ছিল। ততক্ষণে পুরো হাসপাতাল জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের দখলে। চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সেবাপ্রার্থী সবাইকেই দৌড়ে বের হয়ে যেতে দেখা যায়। এ সময় শহীদুল ইসলাম নামের একজন সহযোগী অধ্যাপক চিকিৎসককে হামলাকারীরা জাপটে ধরে ফেলেন এবং আঘাত করতে থাকেন। আবার তাদেরই কয়েকজনকে নিবৃত করতেও দেখা যায়।

ডা. জাহিদ, ডা. আরাফাত, ডা. তিষাদুরসহ কয়েকজনকে আঘাত করা হয়। হামলায় হাসপাতালের বেশ কয়েকজন কর্মীও আহত হয়েছেন।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত সালমান বলেন, ‘মূলত কয়েকদিন যাবতই ঝামেলা চলছে। আমাদের কয়েকজন বিষ খাইছে। একজন হারপিক খাইছে। এসব বিষয়ে আলোচনা করতে গতকাল (মঙ্গলবার) পরিচালক স্যারের রুমে যাই। সেখানে বাগবিতণ্ডা হয়। পরে সেনাবাহিনী এসে পরিচালককে উদ্ধার করে।’

সালমান আরও বলেন, ‘আজ সকাল থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মবিরতি পালন করেন। সেখান থেকে আমাদের ওপর হামলা করবে বলে শুনতে পারি। পরে আবার আমাদের ওয়ার্ডের কলাপসিবল গেটে তালা দেয়। আমরা তালা ভেঙে বের হইছি। গ্যাঞ্জাম হয়েছে। এখন সেনাবাহিনী আসছে।’

চিকিৎসকরা জানান, চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মবিরতির ফলে ভোগান্তিতে পড়া সেবাপ্রার্থীদের সঙ্গে হাসপাতালের কর্মীদের তর্কবিতর্ক এবং হাতাহাতি হয়েছে। এতে পরিস্থিতি একটু উত্তপ্ত হয়। তখন ভেতরের রোগীদের নিরাপত্তার স্বার্থে সব ওয়ার্ডের কলাপসিবল গেট লাগিয়ে দেওয়া হয়। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের ওয়ার্ডে একইভাবে তালা দেওয়া হয়। তারা বিষয়টিতে ভুল বুঝে তালা ভেঙে চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সেবাপ্রার্থীদের গণপিটুনি শুরু করেন। তাদের সঙ্গে যোগ দেন পঙ্গু হাসপাতালের জুলাই আহতরা।

দুপুর দেড়টার দিকে হাসপাতালের সব সেবা কার্যক্রম বন্ধ দেখা গেছে। এমনকি হাসপাতালের প্রধান গেটও বন্ধ দেখা গেছে।

এ বিষয়ে শেরেবাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইমাউল হক বলেন, ‘এ মুহূর্তে চক্ষু বিজ্ঞান হাসপাতালের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। অবরুদ্ধ চিকিৎসক-নার্সরা মুক্ত হয়েছেন। জুলাই আহত শিক্ষার্থীরা হাসপাতালে রয়েছেন।’

চক্ষু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক খায়ের আহমেদ চৌধুরী বলেন, গতকালের একটি অনভিপ্রেত ঘটনার কারণে স্টাফরা ক্ষুব্ধ হয়েছেন। যার কারণে তারা কর্মবিরতিতে গেছেন বলে আমি জানি। তবে আমি ছুটিতে, আমার পরিবর্তে আরেকজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

গতকালের ঘটনা জানতে চাইলে পরিচালক বলেন, গতকাল জুলাই যোদ্ধারা আমার কাছে এসেছিলেন। তারা আমার রুমেই নিজেদের মধ্যে তর্কে লিপ্ত হন। মারামারি করেন। কেউ আবার পেট্রোল নিয়ে আসেন। পেট্রোল কী জন্য নিয়ে আসছে, জানি না। নিজেরা সুইসাইডাল অ্যাটাক করবে, না হাসপাতাল জ্বালিয়ে দিতে আনে জানি না। কারণ, তাদের মধ্যে নানান বিভাজন আছে। এরপরে একপক্ষ আবার আমাকে অবরুদ্ধ করে ফেলে। দুই ঘণ্টা অবরুদ্ধ ছিলাম। পরে জুলাই যোদ্ধারাই আমাকে নিরাপত্তা দিয়ে বের করে দিয়েছেন।

আরএস

Link copied!