নিজস্ব প্রতিবেদক
মে ২১, ২০২৫, ১২:১৯ এএম
নিজস্ব প্রতিবেদক
মে ২১, ২০২৫, ১২:১৯ এএম
বিএনপি চেয়ারপারসনের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা কমিটির বিশেষ সহকারী ইশরাক হোসেনের মেয়র হিসেবে শপথ নেওয়া নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।
একদিকে চলছে আন্দোলন, অন্যদিকে চলছে আইনি লড়াই। দুই দিকেই সক্রিয় ভূমিকা রাখছে সংশ্লিষ্ট মহল। এমন প্রেক্ষাপটে ইশরাক হোসেন স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, আদালতের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত, এবং সেটি আইনানুগভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে—তা যার পক্ষেই যাক। শপথ গ্রহণের বিষয়ে তিনি বলেন, “এখন বাসায় এসে শপথ পড়ানোর প্রস্তাব দিলেও লাভ নেই।”
বুধবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এসব কথা বলেন।
ফেসবুক পোস্টে ইশরাক লেখেন, “রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার থেকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে। আদালতের মাধ্যমে যে সিদ্ধান্ত আসবে, তা আইনানুগভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে—সে সিদ্ধান্ত যার পক্ষেই যাক না কেন।”
এদিকে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে ইশরাক হোসেনের নামে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক প্রকাশিত গেজেট স্থগিত চেয়ে দায়ের করা রিটের শুনানি শেষে আদেশের জন্য আগামী বুধবার (২১ মে) দিন ধার্য করেছেন হাইকোর্ট।
মঙ্গলবার (২০ মে) বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। দুপুর ১টা থেকে শুরু হয়ে প্রথম দফায় শুনানি চলে প্রায় ২টা পর্যন্ত। পরে বিকেল ৪টা ১০ মিনিট থেকে সোয়া ৫টা পর্যন্ত দ্বিতীয় দফায় শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
আদালতে রিট আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ হোসেন। ইশরাক হোসেনের পক্ষে ছিলেন এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মাহফুজুর রহমান মিলন ও খান জিয়াউর রহমান।
আইনজীবী মোহাম্মদ হোসেন নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের রায়ে কয়েকটি ‘ত্রুটি’ তুলে ধরে হাইকোর্টে রুল জারির আবেদন জানান। অন্যদিকে, ইশরাকের পক্ষে থাকা আইনজীবীরা যুক্তি দেন, নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের রায় ও ডিক্রির বিরুদ্ধে আপিল করতে পারে কেবল মামলার বিবাদী পক্ষ, যেমন শেখ ফজলে নূর তাপস। অথচ একজন আইনজীবী ব্যক্তি রিট আবেদনকারী হিসেবে হাইকোর্টে আসতে পারেন না, তাই রিটটি খারিজযোগ্য।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস প্রায় সোয়া চার লাখ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন। বিএনপির প্রার্থী ইশরাক হোসেন পান দুই লাখ ৩৬ হাজার ভোট। ২ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে ফলাফল গেজেট আকারে প্রকাশ করে। এরপর তাপস শপথ নিয়ে মেয়রের দায়িত্ব পালন শুরু করেন। তবে নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ তুলে ২০২০ সালের ৩ মার্চ ফল বাতিল চেয়ে মামলা করেন ইশরাক।
২০২৪ সালের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের সব সিটি করপোরেশনের মেয়রদের অপসারণ করা হয়। এরপর অতিরিক্ত সচিব শাহজাহান মিয়া ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে থাকেন।
পরবর্তীতে ২০২৪ সালের ২৭ মার্চ নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল শেখ ফজলে নূর তাপসের বিজয় বাতিল করে ইশরাক হোসেনকে বৈধ মেয়র ঘোষণা করে এবং ১০ দিনের মধ্যে গেজেট প্রকাশের নির্দেশ দেয়। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী ২৭ এপ্রিল নির্বাচন কমিশন গেজেট প্রকাশ করে।
গেজেট প্রকাশের পরদিনই ইশরাকের বিরুদ্ধে রায় ও ডিক্রির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আইনজীবী রফিকুল ইসলাম ও মামুনুর রশিদ একটি আইনি নোটিশ পাঠান। তারা গেজেট প্রকাশ ও ইশরাককে শপথ নেওয়া থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ করেন।
ইএইচ