আমার সংবাদ ডেস্ক
জুলাই ১৬, ২০২৫, ০৬:১১ পিএম
গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় নেতাদের গাড়িবহরে হামলা চালিয়েছে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
বুধবার দুপুরে শহরের লঞ্চঘাট এলাকায় এ হামলার সময় পুলিশ বাধা দিলে শুরু হয় সংঘর্ষ; যা এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত চলছিল। সমাবেশ শেষে মাদারীপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়া এনসিপির গাড়িবহর সড়ক অবরোধ করে লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়। ঘটনার পর এনসিপির পাশে অবস্থান নিয়েছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, গণ অধিকার পরিষদ ও আপ বাংলাদেশসহ আরও কয়েকটি বিরোধী রাজনৈতিক দল।
এ ঘটনায় জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণে আওয়ামী দোসররা মরণকামড় দিয়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করছে। এসব দুষ্কৃতিকারীদের কঠোর হাতে দমন ছাড়া বিকল্প কোন পথ নেই। পতিত আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের সন্ত্রাসীদের এই হামলা ন্যাক্কারজনক। দুষ্কৃতিকারীরা আবারও দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টিসহ নৈরাজ্যের মাধ্যমে ফায়দা হাসিলের অপতৎপরতায় লিপ্ত হয়েছে। গণতন্ত্র ও মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ দেশে যাতে আবারও ফ্যাসিবাদের উত্থান হতে না পারে সেজন্য দল, মত নির্বিশেষে সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। এর ব্যত্যয় হলে দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষা হুমকির মুখে পড়বে। বিবৃতিতে
ন্যক্কারজনক হামলার ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার এক বিবৃতি প্রদান করেছেন। বিবৃতিতে তিনি বলেন, ১৬ জুলাই (বুধবার) গোপালগঞ্জ জেলায় এনসিপির পূর্বঘোষিত ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচিতে পতিত আওয়ামী ফ্যাসিবাদের সন্ত্রাসী দোসররা হামলা চালিয়েছে। এনসিপির নেতৃবৃন্দ স্বাভাবিক নিয়মে প্রশাসনের সঙ্গে পূর্ব থেকেই আলাপ আলোচনা করে তাদের কর্মসূচি বাস্তবায়নে সহায়তা চেয়েছে। যে কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি বাস্তবায়নে সহযোগিতা করা প্রশাসনের দায়িত্ব। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যকর তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি। এটি উদ্বেগজনক। গোপালগঞ্জ বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন কোনো জেলা নয়। এটি বাংলাদেশেরই অংশ। সরকারকে গোপালগঞ্জসহ বাংলাদেশের সর্বত্র আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করার ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে খুনি শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনের পতন হয়েছে। কিন্তু দেশ এখনো ফ্যাসিবাদ মুক্ত হয়নি। পতিত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছর দেশে ফ্যাসিবাদী শাসন চালিয়েছে। তারা দেশকে আবারো অস্থিতিশীল করার লক্ষ্যে অপতৎপরতা চালাচ্ছে। তারা নানা অপতৎপরতা চালিয়ে ফায়দা হাসিল করতে চায়। তারই অংশ হিসেবে আজ এনসিপির পূর্বঘোষিত কর্মসূচিতে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে, ভাঙচুর চালিয়েছে। আওয়ামী দুর্বৃত্তরা ইউএনওসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গাড়ি ভাঙচুর করে তাতে অগ্নিসংযোগ করেছে। এই সন্ত্রাসী ঘটনায় কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। আমি তাদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি এবং আওয়ামী দুর্বৃত্তদের এই সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
এনসিপির ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচিতে হামলায় গভীর উদ্বেগ ও নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম ও সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম সাদ্দাম এ সংক্রান্ত বিবৃতি প্রদান করেন। এক যৌথ বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পরও গণহত্যাকারী দলের সন্ত্রাসীরা দেশে নৈরাজ্য ও সহিংসতার মাধ্যমে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। গোপালগঞ্জে এনসিপির পূর্বঘোষিত শান্তিপূর্ণ মিছিলের ওপর পরিকল্পিত হামলা, ককটেল বিস্ফোরণ, পুলিশের গাড়িতে অগ্নিসংযোগ—কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়; বরং এটি একটি গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ। অত্যন্ত উদ্বেগজনক হলো, স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনী হামলা ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছে। এ থেকেই স্পষ্ট হয়, এখনো প্রশাসনের একটি অংশ ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠীর প্রতি আনুগত্যশীল হয়ে কাজ করছে। আমরা এই বর্বর হামলার তীব্র নিন্দা জানাই।’
এদিকে এমন পরিস্থিতিতে সারা বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে ব্লকেড কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সংগঠনটির ফেসবুক পেজে এক স্ট্যাটাসে বিষয়টি জানানো হয়েছে। ওই স্ট্যাটাসে বলা হয়েছে, গোপালগঞ্জে জুলাইয়ের নেতাদেরকে হামলার প্রতিবাদে সারা বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে ব্লকেড কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিচ্ছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সারাদেশের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সকল ইউনিটকে স্থানীয় ছাত্রসংগঠন, রাজনৈতিক দলসহ সর্বস্তরের ছাত্রজনতাকে সঙ্গে নিয়ে ব্লকেড কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানানো যাচ্ছে।
ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশের আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ জানিয়েছেন, ‘সারজিস, নাসিরের সাথে কথা হয়েছে। নাহিদ, হাসনাত ও আখতারকে ম্যাসেজ করেছি। হামলা চলছে। পরিস্থিতি খারাপ শুনলাম। এখনো সবাই নিরাপদ, কিন্তু এভাবে আর চলতে দেওয়া যায় না। এ হামলার বিহিত করতে হবে। আমরা স্পষ্ট করে বলছি, রাষ্ট্রে বিপ্লবী সংস্কার ছাড়া সামনে এগোনোর কোনো পথ নেই। এই হামলা চারটি বাস্তব সংকেত দিচ্ছে- পুলিশ সংস্কার হয়নি, তাই পুলিশ বসে থেকে হামলা দেখছে; লীগের বিচার শুরু হয়নি, তাই গোপালগঞ্জ এখনো ফ্যাসিবাদের ঘাঁটি; ইন্টেরিম সরকার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যর্থ এবং সংস্কার বাদ দিয়ে রাজনীতি করার প্রতি বেশি আকর্ষণ থাকায় ৫ আগস্টের আগের পরিস্থিতিই বহাল আছে। গণ-অভ্যুত্থানকে রূপ দিতে হবে পূর্ণ বিপ্লবে। নতুন বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে হবে আপামর ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগের বিপ্লবী রঙে। আমরা থামছি না ইনশাআল্লাহ।’
এ ঘটনার প্রতিবাদে সারা দেশে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) অঙ্গসংগঠন জাতীয় যুবশক্তি। গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে দলটি নেতারা জানান, ‘নিষিদ্ধ দলটির মদদপুষ্ট সন্ত্রাসীরা দিনের আলোয় প্রকাশ্যে আক্রমণ চালিয়ে দেশের রাজনৈতিক পরিবেশকে আতঙ্কিত করে তুলেছে। এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বহুদলীয় গণতন্ত্র, মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার সাংবিধানিক অধিকারকে চরমভাবে লঙ্ঘন করে। কোনো প্রকার সন্ত্রাস, দমন-পীড়ন ও হামলার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক চেতনা ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডকে স্তব্ধ করা যাবে না। জুলাইয়ের চেতনাকে ধারণ করে মুজিববাদের কবর রচনায় আমাদের লড়াই অব্যাহত থাকবে বলে বিবৃতিতে জানানো হয়।
এনসিপি পদযাত্রায় হামলার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেছেন গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর। পোস্টে তিনি লেখেন, ‘সারা দেশের লীগের দুর্বৃত্ত সন্ত্রাসীরা গোপালগঞ্জে আস্তানা গেড়েছে। এনসিপির সমাবেশ ও যাত্রাপথে আজকের হামলা প্রমাণ করে ১১ মাসেও এদের মধ্যে ন্যূনতম কোন অনুশোচনাবোধ তৈরি হয়নি। বরং এরা প্রতিশোধপরায়ণ হিংস্র জন্তুতে পরিণত হয়েছে। তাই কথা পরিষ্কার, ফ্যাসিস্ট লীগের প্রশ্নে আর কোন ছাড় নয়। বিপ্লব ও বিপ্লবীদের সুরক্ষায় ফ্যাসিস্টদের নির্মূল করতেই হবে।’
তিনি আরও লেখেন, ‘প্রশাসন যদি আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গোপালগঞ্জকে দুর্বৃত্ত ও সন্ত্রাসী লীগ মুক্ত করার কোন দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ না করে তাহলে আমরা গোপালগঞ্জকে দুর্বৃত্ত সন্ত্রাসীদের থেকে মুক্ত করতে ‘ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জ মার্চ’ করবো।গোপালগঞ্জবাসীর প্রতিও আমাদের আহ্বান ফ্যাসিবাদ নির্মূল আপনারাও আওয়াজ তুলুন, পুরো বাংলাদেশ আপনাদের পাশে থাকবে।’
ইএইচ