Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

বিবাহিত ও আঞ্চলিক সিন্ডিকেট

আবদুর রহিম 

আবদুর রহিম 

মে ১৭, ২০২২, ০২:২৮ এএম


বিবাহিত ও আঞ্চলিক সিন্ডিকেট

ছাত্রদলের সুপার ইউনিট খ্যাত আট ইউনিটের কমিটিতে বিবাহিত, অছাত্র ও বরিশাল ব্লকের আধিপত্য নিয়ে বিতর্ক উঠেছে। ঢাকা মহানগরীর পদে একজন বিবাহিত রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে একাধিক বিবাহের অভিযোগ উঠায় কমিটি থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক ১০ বছর আগে বিয়ে করেছেন। 

কিন্তু অদৃশ্য শক্তির ইশারায় তাকে ওই পদে আসীন করা হয়। এছাড়া কমিটির আটটি ইউনিটের সভাপতি-সেক্রেটারির ১৬ পদে ১১ জনই বরিশাল অঞ্চলের। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নেতাকর্মীদের মধ্যে এ নিয়ে ক্ষোভ চলছে। তবে এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় ছাত্রনেতারা। 

তারা বলছেন, দীর্ঘ প্রায় পাঁচ-ছয় বছর এসব ইউনিটে কমিটি হয়নি। নেতৃত্বের ধারাবাহিকতায় বড় ধাক্কা লেগেছে। যারা মাঠের রাজনীতি থেকে দূরে সরে যায়নি, খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনে রাজপথে ছিল, দলীয় ও সাংগঠনিক সকল কাজে এবং দুঃসময়ে দলীয় রাজনীতি আঁকড়ে ধরেছে এমন কেউ কমিটি থেকে বাদ পড়েনি। যারা নেতৃত্বের যোগ্য তারাই পদ পেয়েছেন। 

নেতাকর্মীরা বলছেন, কমিটি গঠন হলে সন্তোষ-অসন্তোষের বিষয় থাকবেই। যেমন এবারের কমিটি নিয়েও ছাত্রদলের নয়া কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল ও ঢাকা উত্তর শাখা বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হকের হস্তক্ষেপে সুপার ইউনিট কমিটি গঠন হয়েছে বলে দলের বড় অংশ থেকে অভিযোগ উঠেছে। তবে দীর্ঘ সময়ের পর কমিটি গঠন হলে ক্ষুদ্র অংশে অসন্তোষ থাকলেও বৃহৎ অংশেই সন্তোষের কথা বলছেন। 

বিবাহিত ও অঞ্চলের আধিপত্য নিয়ে মাঠপর্যায়ের নেতারা বলছেন, এবার কাকতালীয়ভাবে একটা অঞ্চলের অধিক লোক চলে এসেছে কমিটিতে। এর মধ্যে এমনও রয়েছে পিতামাতা অঞ্চলের হলেও পদ পাওয়া ব্যক্তির জন্মস্থান ঢাকায় এবং স্থায়ীভাবে এখানেই বসবাস করছেন। কমিটি গঠনকালে হয়তো এসব বিষয় খেয়াল করা হয়নি। জুয়েল ও আমিনুলকে নিয়ে অভিযোগ উঠলেও কেউ প্রকাশ্যে বক্তব্য দিতে রাজি হয়নি। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন ছদ্ম নামে।

 দলের কয়েকজন নেতাকর্মীর সাথে কথা বলে জানা যায়, ঢাকা মহানগর পশ্চিম ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক জুয়েল হাসান রাজ প্রায় এক যুগ আগে ২০১২ সালের ১০ নভেম্বর তানিয়া আক্তারকে বিয়ে করেন। স্ত্রী তানিয়াও পরিচয়পত্রসহ সব কিছুতে জুয়েলের নাম ব্যবহার করেন। জুয়েলের সাথে তানিয়ার বেশ কিছু একান্ত ছবিও রয়েছে। জুয়েল বিবাহিত বলে দলের সাবেক এক যুগ্ম সম্পাদকসহ স্থানীয় দুই নেতা অভিযোগ তোলেন। 

সাবেক কমিটির এক যুগ্ম সম্পাদক আমার সংবাদকে বলেন, জুয়েলের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়ায় এবং একাধিক প্রমাণ আমাদের হাতে আসায় আমরা তাকে অতীতে কমিটিতে রাখতে পারিনি। এবারের কমিটিতে ওর নাম আসায় আমরা বিস্মিত হয়েছি। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জুয়েল হাসান রাজ আমার সংবাদকে বলেন, ‘দলের বড় একটা অংশ আমাকে নিয়ে নোংরা অভিযোগ করছেন। এ অভিযোগ উঠামাত্রই দল আমাকে নিয়ে তদন্ত করেছে। এ নিয়ে দল কোনো সত্যতা পায়নি।  আর যে তানিয়ার সঙ্গে আমাকে নিয়ে অভিযোগ উঠেছে, তাতে যদি আপনারা লক্ষ করেন তাহলে দেখবেন, সেখানে স্বামীর স্থলে লেখা আছে জুয়েল রানা আর আমার প্রকৃত নাম জুয়েল হাসান রাজ। কোথাকার কোন জুয়েলের সাথে আমার নাম যুক্ত করা হচ্ছে আমি জানি না। আমি এই তানিয়াকে চিনি না।’ 

তবে তিনি এটি স্বীকার করেছেন তানিয়া নামের বেশ কয়েকজনকে তিনি চেনেন! শুধু বিবাহিতের অভিযোগ হওয়া তানিয়াকে তিনি চেনেন না। সোনাপুর বাজারের বাগাতিপাড়ার থানার নাটোরের তানিয়া আক্তারকে তিনি চেনেন কিনা এবং তার সঙ্গে যে তার ঘনিষ্ঠ একাধিক ছবি দেখা যাচ্ছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিস্তারিত কিছু বলতে রাজি হননি, একপর্যায়ে ফোন কেটে দেন।  

সুপার ইউনিটের এবারের কমিটির আরেকটি বড় অভিযোগ হলো ১৬ পদের ১১ জনই বরিশাল অঞ্চল থেকে স্থান পেয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক জুলহাস মৃধা, তেজগাঁও কলেজ ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মো. বেলাল হোসেন খান, তিতুমীর কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি আরিফুর রহমান এমদাদ, কবি নজরুল কলেজ ছাত্র দলের সভাপতি সাইদুর রহমান সাইদ ও সাধারণ সম্পাদক কাওসার হোসেন, বাংলা কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন বিপ্লব ও সাধারণ সম্পাদক মো. বেল্লাল হোসেন সোহাগ, ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রদলের সভাপতি মো. মেহেদী হাসান রুয়েল ও সাধারণ সম্পাদক মো. রাসেল বাবু, ঢাকা মহানগর পশ্চিম ছাত্রদলের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ নাসির ও সাধারণ সম্পাদক জুয়েল হাসান রাজ। 

সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল আমার সংবাদকে বলেন, জুয়েল হাসান রাজের বিরুদ্ধে আমরা কিছু অভিযোগ পেয়েছি, তবে তার সত্যতা আমরা পাইনি। স্ত্রীর নামের সাথে জুয়েলের মূল নামের কোনো মিল নেই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাওয়া খবরগুলো আমাদের নজরে এসেছে। আমরা ওর বাড়িতে লোক পাঠিয়েও খবর নিয়েছি। প্রাথমিকভাবে আমরা এর কোনো সত্যতা পাইনি। 

যদি পাই তাহলে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব। আর বরিশাল অঞ্চল নিয়ে যে অভিযোগ তার কোনো ভিত্তি নেই। যারা যোগ্য, মাঠে ছিল তাদের একজনও বাদ পড়েনি কমিটি থেকে। এখন যোগ্য ব্যক্তিরা যদি কাকতালীয়ভাবে মিলে যায় সে ক্ষেত্রে অবশ্যই আমাদের সাংগঠনিক ভিত্তিকে মূল্যায়ন করতে হয়। দেখা গেছে, অনেকে স্থায়ীভাবে ঢাকায় থাকে এর মধ্যে এদের কেউ একজনের মা-বাবা বরিশাল অঞ্চলের। 

এর মানে এই নয় যে, তিনি বরিশালের। এখন আমরা দেখেছি সাংগঠনিক দক্ষতা, যোগ্যতা, মাঠের মূল্যায়ন, ক্যাম্পাস বা অঞ্চলে যিনি যোগ্য। যোগ্যতার বিবেচনায় কমিটি দেয়া হয়েছে। আমাদের কমিটিতে সবাই খুশি। দীর্ঘ সময়ের পর কমিটি গঠন হওয়ায় সন্তোষের সাথে কিছু অভিযোগ থাকবে আমরা এরপরও সব কিছু বিবেচনা করব। 

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি কাজী রওনকুল শ্রাবণ আমার সংবাদকে বলেন, ‘যারা যোগ্য তারাই পদ পেয়েছেন। অঞ্চলভিত্তিক অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। বিবাহিতের গুজব আমরা শুনেছি কোনো সত্যতা পাইনি। এরপরও আমরা খোঁজ নিচ্ছি সত্যতা পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

Link copied!